মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি উপায় - Ways to maintain good mental health
মনের স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। মানসিক দক্ষতা বাড়ানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। নিজের মন ও শরীর ভালো রাখার জন্য খুব জরুরী এবং সাধারণ কিছু বিষয় আমাদের মেনে চলা উচিত। কিছু সময় ব্যয় করুন এ উপায়গুলো আপনার ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলছে তা বোঝার জন্য ।
১.নিজের যত্ন নিন
নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। নিজের ছোট ছোট ভালোলাগা-মন্দলাগার প্রতি গুরুত্ব দিন। আপনি যদি নিজের খেয়াল রাখেন তবে মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়ে যাবে। এটি যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তবে মাত্রাতিরিক্ত সচেতনতা বাদ দিন। এমন হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে হবে। সবকিছু সহজভাবে ভাবতে শিখুন। তাতে মন এমনিতেই ভালো থাকবে।
২.পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই রাসায়নিকগুলো আমাদের মেজাজ ও আবেগ পরিচালনা করে। যদি আমরা পর্যাপ্ত না ঘুমায়, তাহলে মস্তিষ্কে বিভিন্ন অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া স্বাভাবিক। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই।
৩.পুষ্টিকর খাবার
পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মনের জন্যও উপকারী। কিছু খনিজ যেমন- আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি মেজাজ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। আপনি যদি খিটখিটে মেজাজ, হতাশা বা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন তাহলে কফি খাওয়া কমিয়ে আনুন।
৪.অ্যালকোহল, ধূমপান ও মাদক পরিহার
অনেকেই হতাশ হয়ে ধূমপান ও মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তবে জানেন কি, এগুলো হতাশা কাটায় না বরং শরীর ও মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মদ্যপানে শরীরে থায়ামিনের ঘাটতি হতে পারে। থায়ামিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এর ঘাটতি দেখা দিলে স্মৃতি বিভ্রাট, মনোযোগের অভাব, বিভ্রান্তি ও চোখের সমস্যা হতে পারে। আবার যদি আপনি ধূমপান করেন, এতে থাকা নিকোটিন শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়েরই ক্ষতি করে। পরবর্তীতে ধূমপান বন্ধ করলে আপনি আরও বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারেন। তাই মাদকমুক্ত জীবন গড়ুন।
৫.অতিরিক্ত চাপ নেবেন না
কাজের চাপ নেবেন না। মানে কাজ করবেন কিন্তু সেটি যেন বোঝা মনে না হয়। সবচেয়ে সহজ উপায়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। এতে মনের ওপর চাপ কম পড়বে। একটু গুছিয়ে নিয়ে কাজ করলেই অনেক কঠিন কাজও সহজভাবে করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এটি জরুরি।
৬.ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম করতে আলসেমি হয়। এটা আমাদের বড় রোগ। আলসেমি ছেড়ে ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটুন।
৭.বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিন
কেবল মানুষই বন্ধু হবে, এমনটা ভাবা যাবে না। বন্ধু হতে পারে বই, সংগীত, শখের কাজও। মনের মতো ভালো বন্ধু পেলে তো কথাই নেই। তাই সময় কাটান ভালো বন্ধুদের সঙ্গে।
৮.ভ্রমণে যেতে পারেন
ভ্রমণে নবজীবন লাভ করা যায় এটা প্রমাণিত। দেশ অথবা বিদেশে আপনার পছন্দের যেকোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নিন। তারপর কাউকে না বলে দূরে কোথাও পছন্দের জায়গা চলে যান। তখন দেখবেন ভীষণ এক ভালোলাগা কাজ করবে আপনার মধ্যে।
৯.দুশ্চিন্তা দূরে রাখুন
সবার জীবনেই কাজের চাপ আছে। তাই বলে এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। এ সমস্যা সমাধানে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে আপনি চাপ সামলাবেন। যদি না পারেন তাহলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এজন্য দৈনন্দিন জীবনের কোনো না কোনো সমস্যার তালিকা তৈরি করুন। এরপর তা সমাধানের উপায় খুঁজুন। অযথা অলীক কল্পনায় ডুবে থাকবেন না। যখন দেখবেন আপনার ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে, তার অর্থ হলো আপনি বেশি দুশ্চিন্তা করছেন!
১০.অন্যের জন্য কিছু করুন
কাউকে সাহায্য করলে নিজের মধ্যেও অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। তাই অন্যের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। কোনো দরিদ্রকে খাবার বা পোশাক কিনে দিন কিংবা সামান্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন। দেখবেন আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
তখন নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে। নিজেকে অসহায় ভাবার আগে না খেয়ে থাকা মুখগুলোর ছবি ভাসবে মনে। ফলে অন্যের জন্য কিছু করার স্পৃহা জন্মাবে। এর মাধ্যমে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পাবেন।