
গবেষণায় দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ নারী ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন।সাধারণত নাক, তালু বা মুখগহ্বর হল নাক ডাকার উৎপত্তিস্থল। এ স্থানে কোনো রোগ বা প্রদাহের কারণে প্রতিবন্ধকতা হলে নাক ডাকার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নাকের হাড় বাঁকা, সাইনাসে প্রদাহ এবং মোটা মানুষের ক্ষেত্রে গলার মধ্যে অতিরিক্ত মেদ জমা নাক ডাকার প্রধান কারণ।মাঝবয়সী ও বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে অল্পবিস্তর নাক ডাকা তেমন ক্ষতিকারক নয়। বিকট শব্দে নাক ডাকা যা বন্ধ দরজা দিয়েও পাশের ঘর থেকে শোনা যায়, তা সব বয়সেই অস্বস্তিকর। চিকিৎসকেরা বলছেন, নাক ডাকা অন্য অনেক স্বাস্থ্যসমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকির আলামতও হতে পারে।
নাক ডাকার কারণ
১। শারীরিক গঠনের কারণে মহিলাদের থেকে পুরুষরা বেশি নাক ডাকে। সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের শ্বাসনালী সরু হয়। আর এই জন্যেই পুরুষ মানুষের নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
২। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপথে কোনো বাধা এলে বাতাস শ্বাসযন্ত্রে কাঁপুনির সৃষ্টি করে। ফলে নাক ডাকার শব্দ হয়
৩। বয়সের সাথে নাক ডাকার সম্পর্ক আছে। যত বয়স বাড়ে কণ্ঠনালী সরু হতে থাকে। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়।
৪। নাকে পলিপ থাকলে বা সাইনাসের সমস্যা থাকলে নাক ডাকা শুরু হতে পারে।
৫। লম্বা টান টান হয়ে শুলেও নাক ডাকে অনেকে। গলার কাছে পেশিগুলো টেনে থাকে না। আলগা হয়ে যায়। ফলে, গলা থেকে নিশ্বাস বেরতে অসুবিধে হয়।
৬। শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট টিস্যু জমে গেলে ও পেশি দুর্বল হলে নাক ডাকা শুরু করতে পারেন কেউ কেউ।
৭। নিয়মিত মদ্যপান, ধূমপান ও ঘুমের ওষুধ খেলে নাক ডাকা শুরু হয়। এর কারণ, পেশিগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় ছেড়ে যায়।
৮। ওজন বৃদ্ধির কারণে গলার চারপাশে চর্বি জমা হয় এবং স্থূল ব্যক্তিদের এমন সমস্যা বেশি হয়।
৯। থাইরয়েডের সমস্যা ও গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত রোগের ফলে নাক ডাকতে পারে।
নাক ডাকা বন্ধের উপায়
১। ঘুমের ওষুধ বা সিডেটিভ গ্রহণের অভ্যাস থাকলে বাদ দেয়া।
২। বালিশ ৪ ইঞ্চি উঁচু করা ।
৩। ওজন ঝরান দ্রুত। অফিস থেকে ফেরার পথে কিছুটা পথ হাঁটুন। নজর দিন ডায়েটেও। ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারের প্রতি লোভ কমান। বরং বাড়িয়ে দিন ফল বা ফলের রস খাওয়া।
৪। মদে আসক্তি থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনুন। তালিকা থেকে বাদ দিন কফিও।
৫। পাশ ফিরে ঘুমালে নাক ডাকার সমস্যা অনেকটা হ্রাস পায়। তাই চিত হয়ে শোবার অভ্যেস থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে।
৬। সঙ্গীকেও বলুন, তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে আপনাকে পাশ ফিরিয়ে দিতে। প্রথম কয়েক দিন সমস্যা হবে, তারপর অভ্যেস হয়ে যাবে।
৭। রাতের খাবার খেয়েই শুতে যাবেন না। হাতে আড়াই ঘণ্টা সময় নিয়ে রাতের খাওয়া সারুন।
৮। সর্দি লেগে থাকলে নাক পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
৯। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে নাসারন্ধ্রে লেগে থাকা আঠালো দ্রব্য দূর হবে, নাক ডাকাও কমবে।
১০। যদি কিছুতেই নাক ডাকার কারণ খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে খাবারদাবারে মসলার পরিমাণ কমিয়ে বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখুন।
১১। বিছানাপত্রে বেশি ধুলাবালি থাকলে, ঘর বেশি ময়লা হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়।
১২। রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে যদি এক গ্লাস গরম জলে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে নাকা ডাকার সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগই পায় না।
রোগী সাধারণত শোয়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। রোগী ঘুমানোর সঙ্গে সঙ্গে নাক ডাকতে শুরু করে এবং নাক ডাকার শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে থাকে এবং এক পর্যায়ে রোগীর দম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আসে। এর ফলে রোগী দম নেয়ার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে। এ অবস্থা চরমে উঠলে রোগীর ঘুম ভেঙে যায়।
আপনার মতামত লিখুন