তেঁতুল বাংলাদেশের বসন্তকালের টকজাতীয় ফল।তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। তেঁতুল দেহে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়। মেদভুঁড়ি কমায়। পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়।
তেতুলের পুষ্টি উপাদান
একটি পাকা তেুতলে আছে- জলীয় অংশ (গ্রাম) ২০.৯ ৮৩.৬ ৭৯.২,মোট খনিজ পদার্থ (গ্রাম) ২.৯ ১.২ ০.৭,আঁশ (গ্রাম) ৫.৬ – ১.০,খাদ্যশক্তি (কিলোক্যালরি) ২৮৩ ৬২ ৭৮,আমিষ (গ্রাম) ৩.১ ১.১ ২.৭,চর্বি (গ্রাম) ০.১ ০.২ .০৪,শর্করা (গ্রাম) ৬৬.৪ ১৩.৯ ১৬,ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) ১৭০ ২৪ ১৪,আয়রন (মিলিগ্রাম) ১০.৯ – ১.০,ক্যারোটিন (মাইক্রোগ্রাম) ৬০,ভিটামিন বি১ (মিলিগ্রাম) – ০.০১ .০২২,ভিটামিন বি ২ (মিলিগ্রাম) ০.০৭ ০.০২ .০০৩,ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) ৩ ৬ ১০৮।
তেঁতুলের উপকারিতা
পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়। তেঁতুল গাছের ছাল, ফুল, পাতা, বিচি ও ফল সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুল বীজের শাঁস পুরনো পেটের অসুখে উপকারী। কাঁচা তেঁতুল বায়ুনাশক। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে।
০১. হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে খুব উপকারী তেতুঁল। হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।
০২. এতে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুন।
০৩. তেতুঁল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
০৪. রক্তে কোলষ্টেরল কমায়।
০৫. তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে।
০৬. এতে কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্রাইসেরাইডের মাত্রা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
০৭. শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেতুঁল।
০৮. এতে টারটারিক এ্যাসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে।
০৯. শরবত করেও খাওয়া যেতে পারে তেতুঁল।
১০. পেটের বায়ূ, হাত-পা জ্বালায় এ শরবত কার্যকর পথ্য।
১১. তিন-চার দানা পুরনো তেতুলের এক কাপ রসের সঙ্গে চিনি বা লবন মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ভেষজ চিকিৎসকরা।
১২. তেতুঁল গাছের বাকলেও উপকার আছে। শুকনো বাকলের প্রলেপ ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত সারে।
১৩. বুক ধড়ফর করা, মাথা ঘোরানো ও রক্তের প্রকোপে তেতুঁল উপকারী।
১৪. কাচা তেতুঁল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে।
১৫. পুরনা তেতুঁল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়।
১৬. পুরনো তেতুঁল খেলে কাশি সারে।পাকা তেতুল খেলে কাশি সারে।
১৭. পাকা তেতুঁলের খনিজ পদার্থ সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি।
১৮. তেতুঁলে খাদ্যশক্তির পরিমান নারিকেল ও খেজুর ছাড়া সব ফলের চেয়ে বেশি।
২০.তেতুঁল পাতার রস কৃমিনাশক ও চোখ ওঠা সারায়।
২১. মুখে ঘা বা ক্ষত হলে পাকা তেতুঁল জলে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
তেতুলের বিচির উপকারিতা কি
বাংলাদেশে সম্প্রতি ভারত থেকে ৯০ মেট্রিক টন তেঁতুলের বিচি আমদানি করা হয়েছে।আর তেঁতুলের বিচি যে একেবারে ফেলনা নয়, তা বোঝা যাচ্ছে যখন জানা গেল প্রতি টন তেঁতুলের বিচি ২০০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হয়েছে।তেঁতুলের বিচি আমদানিকারক সত্যজিৎ দাস বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে মূলত পাটকল ও কাপড়ের মিলে সুতা রং করার কাজে তেঁতুল বিচি ব্যবহার করা হয়।তিনি বলেছেন, সুতার রং টেকসই করার কাজে বহুদিন ধরেই তেঁতুল বিচি ব্যবহার করা হয়।এছাড়া মশার কয়েল তৈরির কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় তেঁতুল বিচি।দেশে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় যেসব উদ্যোক্তারা এখন কয়েল তৈরি করছেন, তারাই এই আমদানিকৃত তেঁতুলের বিচির বড় ক্রেতা।এসব শিল্প উৎপাদন কেন্দ্রিক প্রয়োজনের বাইরে তেঁতুল বিচি ঔষধি গুনের কারণেও খুবই দরকারি একটি জিনিস।তেঁতুল বিচি ইউনানি, আয়ুর্বেদ, হোমিও এবং অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।তিনি বলেছেন শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় যে ড্রপ তৈরি হয়, তাতে তেঁতুল বিচি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পাকস্থলীর গোলযোগ, লিভার ও গল-ব্লাডারের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তেঁতুল বিচি।গর্ভকালীন বমিভাব ও মাথাঘোরার সমস্যায় তেঁতুল বিচির শরবত উপকারী।