লটকন-Rambai
লটকন বা নটকোনা এক প্রকার টক মিষ্টি ফল। লটকন নানা নামে পরিচিত, যেমন "লটকা" " আঁশফল" ইত্যাদি । গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিক চাষ হয়।
অনান্য নাম: লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- হাড়ফাটা, বুগি, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি।
ইংরেজি নাম: Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ramai
বৈজ্ঞানিক নাম: Baccaurea motleyana
বর্ণনা
লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কাণ্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরনের হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়।[১] এর কাঠ নিম্নমানের। ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে।
চাষাবাদ
লটকন একটি দেশী ও অপ্রচলিত ফল।এটা একটি অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর ফল।বর্তমানে এটি বাংলাদেশের নরসিংদী, সিলেট, গাজীপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় চাষ হচ্ছে।তবে নরসিংদী জেলার সদর, শিবপুর, রায়পুরা ও বেলাব উপজেলা লটকন চাষের জন্য বিখ্যাত।
লটকন রোপণের মৌসুম
লটকনের চারা সংগ্রহ করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণ করা উত্তম তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও চারা লাগানো যাবে। লটকন স্যাঁতসেঁতে ও আংশিক ছায়াযুক্ত পরিবেশে যেমন আম বা কাঁঠালের মতো বড় গাছের নিচেও ভালো জন্মে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। ৮-১০ দিন পানি জমে থাকলে গাছ মরে যেতে পারে। এজন্য পানি দাঁড়ায় না অথচ বৃষ্টিপাত বেশি হয় এমন এলাকায় বেলে-দো-আঁশ মাটি লটকন চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
লটকনের পুষ্টিগুণ
পরিপক্ব লটকনের প্রতি ১০০ গ্রাম শাঁসে আছে ১.৪২ গ্রাম আমিষ, ০.৪৫ গ্রাম চর্বি, ০.৯ গ্রাম মোট খনিজ পদার্থ, ০.৩ গ্রাম লৌহ এবং ৯১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি। এছাড়াও লটকনে রয়েছে ০.০৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ এবং ০.১৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২। সাধারণত লটকনকে ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ ফল বলা হয়ে থাকে।
লটকনের ঔষধিগুণ
লটকন ঔষধিগুণে ভরপুর একটি ফল।ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়।এর পাতা শুকনো করে গুঁড়া করে খেলে ডায়রিয়া ও মানসিক চাপ কমে।লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় কাজে লাগে। এইসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।লটকনের পাতাও ঔষধির কাজ করে। এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটের নানারকমের অসুখ ও জ্বর ভালো হয়ে যায়।