পরিচিতিঃ
আদা একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ ১মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এর পাতাগুলো সুন্দরভাবে সাজানো এবং সুবিন্যস্ত। পাতা ৩০-৩৫ সেন্টি মিটার লম্বাকৃতি এবং গাঢ় সবুজ বর্ণের । গাছের কন্দ বা মূল প্রাচীনকাল থেকে দৈনন্দিন রান্নার কাজে এবং বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। আদার স্বাদ তীব্র ঝাল। আদাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে নেওয়া হয় যাবে আমারা শুঁট বা শুটি বলে থাকি।
ইংরেজি নাম: Ginger
বিস্তৃতিঃ
অর্থকরী ফসলের চেয়ে আদা চাষ করা লাভজনক। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আদা চাষ হয়ে থাকে।
চাষাবাদঃ
বীজ রোপণ-ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস(এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস ) পর্যন্ত লাগানো যায়। সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি অঙ্কুর বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
ফসল সংগ্রহঃ
আদা লাগানোর ৯-১০ মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়।[৪] গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৩ টন। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।
আদার পুষ্টিগুণঃ
আদায় প্রোটিন ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% জল ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান।
আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিদ্যমান। যার কারণে সব বয়সী মানুষ আদা খেতে পারেন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা–মধু–জল সুস্থ দেহ ও সতেজ মনের জন্য খুবই কার্যকর।
আদা শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি। মাইগ্রেনের ব্যথা ও ডায়াবেটিস জনিত কিডনির জটিলতা দূর করে আদা।
জেনে নিন আদার উপকারিতা:
১। আদায় রয়েছে ভরপুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়, জ্বর জালা, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের স্তর কমাতে,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে, কিডনি জনিত সমস্যা ও জটিলতা দূর করতে কাজে লাগে আদা।
২। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বিস্ময়করভাবে আদা সাহায্য করে। আদা ও লেবুর ডিটক্স ওয়াটার প্রতিদিন ৩-৪ গ্লাস পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন হয়।
৩। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আদা ভীষণ উপকারী। আদা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, অস্বস্তিকর পেট ফাঁপা ও পেটে ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে ১ কাপ আদা চা পান করলে বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
৪। কাঁচা আদার গুণ অনেক বেশি। শীতকালে বুকে কফ জমলে, শ্বাস- প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে কাঁচা আদা সামান্য কুচি করে ২ কাপ জলে ফুটিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেঁকে নিন একটি কাপে এবং সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করে ফেলুন। এতে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
৫। আদা খুশকির সমস্যা দূর করে। স্ক্যাল্প শুষ্ক হলে খুশকির সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক, আদা স্ক্যাল্প থেকে মরা কোষ দূর করে চুলের ভেতর পর্যন্ত পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।
৬। ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেক মহিলাদেরই তলপেটে, কোমরে ও পায়ে ব্যথা হয়। আদা চা খেলে এই পিরিয়ড ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চাইলে আপনি আদা চা এ চিনির বদলে মধুরও ব্যবহার করতে পারেন।
৭। কখনও বমি বমি ভাবের সমস্যা দেখা দিলে এক চাক আদা স্লাইস করে কেটে লবন দিয়ে চিবিয়ে খেলে বমি ভাব একেবারেই কেটে যায়।
১। জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথায় আদা উপকারী। কারণ আদায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা বডি টেম্পারেচারে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে ঠাণ্ডার সময় তাই আদা চা খেতে পারেন।
২। ঋতু পরিবর্তনের সময় অ্যাজমা, মাইগ্রেনের মতো সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। এই সময়ে ডায়েটে আদা রাখুন। সর্দি-কাশির প্রকোপের সময় মুখে আদা রাখলে, আরাম পাবেন।
৩। গা গোলানো ও বমিভাব থেকে রেহাই পেতে কয়েক কুচি আদা চিবিয়ে খেয়ে দেখুন। সমস্যা অনেকটা কমবে।
৪। আর্টারি ওয়ালে ব্যাড কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমে করোনারি হার্ট ডিজিজের সমস্যা দেখা যায়। ফলে রক্ত চলাচলে অসুবিধে দেখা যায়। আদা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। লিভার ও ব্লাডে কোলেস্টেরল অ্যাবজর্বশন কম রাখতে আদা সাহায্য করে।
৫। অতিরিক্ত ওজন ঝরাতেও আদা সাহায্য করে। টিস্যু বেশি এনার্জি ব্যবহার করায়, বেশি ক্যালরি বার্ন হয়।
৬। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আদা ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা উপকারী।
৭। আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগলে সারা দিনের খাবারে অল্প পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করুন। আদা দিয়ে চা খেতে পারেন, সালাদে আদার সরু, লম্বা কুচি মেশাতে পারেন। ব্যথার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে আদা খেয়ে দেখতে পারেন। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েল উপকারী।
৮।. গর্ভবতী মহিলাদের সকালে খারাপ লাগার সমস্যা কমাতে আদা সাহায্য করে।
৯। আদা হজমে সাহায্য করে।
সতর্কতা –
১। গলস্টোনের সমস্যা থাকলে কত পরিমাণ আদা খাবেন, ডাক্তারের থেকে জেনে নিন।
২। গর্ভাবস্থায় সারা দিনে ২৫০ গ্রামের বেশি আদা খাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
কিভাবে আদা খাবেন –
১. আদায় সামান্য জল দিয়ে থেতলে নিন। আদার রস ও আদা গরম জলে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। চা বানানোর জন্যে এই জল ব্যবহার করুন।
২. আদা ছিলে , সামান্য লেবুর রস মেশান। হজমে এই মিশ্রণ খুব ভালো কাজ করে।
৩. সারা দিনে ৫০ গ্রাম আদা খেতে পারেন। পাউডারড জিঞ্জার আধা চামচ করে দিনে ৩ বার খেতে পারেন। আদা সরু লম্বা করে চিকন করে কেটে নিন। সামান্য লবণ, গোলমরিচ মেশান।
৪. জল ফুটিয়ে নিন। এবারে দুধ, মসলা, আদার রস, চা পাতা দিয়ে আরো একবার ফুটিয়ে নিন। কাপে চিনি দিয়ে পরিবেশন করুন। ওপরে সামান্য এলাচগুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারেন।
৫. হজমে সাহায্য করার জন্যে আদা দিয়ে সিরাপ বানিয়ে নিন। জিরে গুঁড়ো, বিট নুন, আদার রস, লেবুর রস, ঠাণ্ডা জল একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। তৈরি আদার সিরাপ। দুপুরে বা রাতের খাবারের পরে এই সিরাট খেতে পারেন।
৬. ভিনিগারে আদার টুকরো, লবণ, মরিচ দিয়ে কিছু দিন রাখুন। খাওয়ার সময় আচার হিসেবে খেতে পারেন।