রমজানের দোয়া ও আমল - Prayers and deeds of Ramadan
Ramadan

রমজানে কোন দোয়া বেশি করা উচিত?

রমজান মাসের অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে গোনাহ মাফ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তি। এজন্য দরকার বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার।

এছাড়া বিভিন্ন দোয়া ও জিকির করা যেতে পারে মাসজুড়ে। এ মাসের প্রতিটি দিনই রোজাদারের বিভিন্ন দোয়া কবুল হতে থাকে বলে হাদিসে ঘোষণা এসেছে। তাই আমরা চলতে-ফিরতে ছোট ছোট দোয়া ও বিভিন্ন জিকির করতে পারি। দরুদ শরিফ, কালিমা তাইয়েবা, সুবহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার- এ ধরনের দোয়াগুলো পড়ে বহুগুণ সওয়াব ও কল্যাণের অধিকারী হতে পারি।

সুতরাং এ মাসে বান্দাকে সব সময় আল্লাহর দরবারে দোয়া-মোনাজাত করতে হবে। তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পাপমুক্ত করার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে।

রোজার প্রথম আমল হলো রোজা রাখার নিয়ত করা।  হাদিসে বলা হয়েছে : ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত না করলে রোজা হয় না (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর : ২৩৪১)।

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য এ মর্মে বক্তব্য দেন যে-

‘হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা ৪টি আমল বেশি বেশি আদায় করবে। এর মধ্যে দুইটি কাজ আল্লাহর জন্য আর দুইটি কাজ তোমাদের নিজেদের জন্য।’

>> আল্লাহর জন্য ২ আমল

১. কালেমার সর্বোত্তম তাসবিহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পাঠ করা।

২. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলো-

কালেমা পাঠের কারণ

এ কালেমা মানুষকে এক আল্লাহর স্বীকৃতি তথা তাওহিদের দিকে ধাবিত করে। মানুষ সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক থেকে মুক্ত রাখে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ যুগে যুগে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। আর আমাদের জন্য দিয়েঠেন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। তাই কোরআন নাজিলের মাসে মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিতেই একনিষ্ঠতার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি কালেমার তাসবিহ পাঠ করা।

ইসতেগফার বেশি বেশি পড়ার করার কারণ

এ কারণেই কোরআন-সুন্নায় বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেননা গুনাহমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাওবাহ ও ইসতেগফার করা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا

'যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।' (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)

'নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা তওবাহ করে ও সংশোধন হয় তারা ব্যতিত।' (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৫-১৪৬)

وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

'হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।' (সুরা নুর : আয়াত ৩১)

তাই তো আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইসতেগফার কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ ইসতেগফারের কারণে আল্লাহ তাআলা অনেক কঠিন অবস্থা থেকে মানুষকে হেফাজত করবেন। তাহলো-

> দেশে যদি খড়া বা বিপর্যয় তৈরি হয় তবে- আকাশ থেকে মেঘ বর্ষণ করবেন। দেশ মরুভূমি হবে না। বরং সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।

> নিজেদের আয় রোজগার বেড়ে যাবে। কখনো অভাব আসবে না।

> সন্তান-সন্তুতি না থাকলে আল্লাহ সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।

> পরিবেশেকে সবুজময় করে দেবেন।

> পরিবেশকে সুন্দর করতে নদি-নালা প্রবাহিত করাবেন।

>> নিজেদের দুই আমল

১. আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা।

২. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।

জান্নাত চাওয়ার কারণ

জান্নাত তো মুমিনের আসল ঠিকানা। যে ঠিকানায় বসবাসে মুমিন কখনো বৃদ্ধ হবে না। ব্যবহারের কোনো জিনিসপত্র পুরনো হবে না। যেখানে বিরাজমান থাকবে মধুমিশ্রিত নদী। মদের ফোয়ারা। যে মদ পানে দুনিয়ার মতো মাতাল হবে মানুষ। সেখানে শেষ হবে না মানুষে যৌবন। হাদিসে পাকে এ জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রাগান্বিত হন।’

তাই জান্নাত পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা, আকুতি জানাতে হবে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়ার কারণ

আল্লাহর কোনো বান্দা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে, এটা মহান আল্লাহ নিজেও পছন্দ করেন না। পরকালের চিরস্থায়ী জীবন যেন আল্লাহর ভয়াবহ আজাবে পরিণত না হয় সে জন্যই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। আর ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটিতে ঘোষিত ৪টি আমলের যথাযথ বাস্তবায়নে এ দোয়াগুলো পড়া জরুরি। যা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-

> বেশি বেশি কালেমার এ তাসবিহ পড়া

لَا اِلَهَ اِلَّا الله

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। সাইয়্যেদুল ইসতেগফারসহ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

> أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।' (মিশকাত)

> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘

অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)

> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'

অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'

নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : 'আস্‌তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'

অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'

নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।' (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

> সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'

অর্থ : 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।'

নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।' (বুখারি)

জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

> اَللَّهُمَّ اَدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَ اَجْرِنَا مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া আঝিরনা মিনান নার।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’

> اَللهُمَّ انَّ نَسْئَلُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।’

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ঘোষণা করেন-

‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার জান্নাতের আশা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবে, জান্নাত-জাহান্নামও আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তির দোয়া কবুলে সুপারিশ করবে।

হে আল্লাহ! পুরো রমজান মাসজুড়ে উল্লেখিত বিশেষ চারটি আমল ও দোয়াগুলো যথাযথ পালনে আপনার তাওফিকের বিকল্প নেই। যে আমলগুলো করতে শাবান মাসের শেষ দিন বিশ্বনবি সাহাবায়ে কেরামকে নসিহত পেশ করেছেন।

করজে হাসানার উপকারিতা - Benefits of Hasana on loan
নারী ও শিশুর হজের নিয়ম - Hajj rules for women and children
বিতর নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম - Correct rules for praying witr prayer
বিবাহের দোয়া
হিন্দু ছেলেদের নামের তালিকা-List of names of Hindu boys
বাংলাদেশের সুফিদের তালিকা - List of Sufis of Bangladesh
জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস - History of Jamaat-e-Islami
শিয়া ইসলামের ইতিহাস - History of Shia Islam
আল্লাহ কেন শয়তান সৃষ্টি করলেন? - Why did God create Satan?
ইসলামিক ভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা-islamic birthday wishes