বিটিএস আর্মি-BTS Army
‘বিটিএস’ (BTS) এর পুরো নাম হলো “Bangtan Boys”। ৭ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার বয় ব্যান্ড যা বর্তমানে দুনিয়া মাতিয়ে রাখছেন তাদের মনমুগ্ধকর কে-পপ সংগীত এবং মন মাতানো নৃত্য দিয়ে। কোরিয়ান পপ কালচারে তাদের একটি দলীয় ভাবযুক্ত আয়োজন। যারা ‘বিটিএস’ এর ফ্যান অথবা ভক্ত, তাদেরকে “বিটিএস আর্মি” বলা হয়। পুরো বিশ্ব জুড়ে বিটিএস আর্মির সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ্য এর বেশি!
অত্যন্ত জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরিয়ার ‘সিওল’ এ ২০১০ সালে ট্রেনি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই বয় ব্যান্ড এর আর্মি বেশিরভাগ কিশোর/কিশোরী থেকে তরুন/তরুনী। ২০১৩ সালে ‘টুহ কুল ফর স্কুল’ নামক তাদের প্রথম আ্যালবাম প্রকাশ পায়। তাদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে তাদের নাচ এবং অসাধারণ পরিবেশন। তারপর থেকেই একের পর হিট গানের আ্যলবাম এর মাধ্যমে তারা তাদের আকর্ষণীয় নাচ,পোশাক এবং চাকচিক্য দিয়ে ভক্তদের মন জয় করেন এবং বিপুল পরিচিতি লাভ করেন।
‘বিটিএস’ ব্যান্ড এর সদস্য সংখ্যা ৭জন। প্রত্যেকেই অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী। সকলেই খুব চমৎকার ড্যান্সার। তাদের মধ্যে কেউবা র্যাপার কেউবা ভোকালিস্ট/ ভিজুয়াল। সদস্যদের লিডার বা প্রধান হলেন ‘কিম নামজুন’। এছাড়াও বাকিরা হলেন ‘জিন’, ‘সুগা’, ‘জে-হপ’, ‘জিমিন’,’ভি ‘এবং ‘জংকুক’। কারো থেকে কেউ কোনো অংশে কম নয়। বিটিএস আর্মিদের কাছে কেউ একটু বেশি প্রিয়, কারো কাছে আবার সবাই সমান।
কে-পপ কি ? (What is K-Pop)
পপ মিউজিক মূলত একটি মেলোডিক ধরনের মিউজিক, যেখানে অনুভূতি, বিশেষ করে প্রেমের ব্যাপারগুলো সুন্দর, সহজ ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এই ধরনের সঙ্গীতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর সরলতা।
কোরিয়ান পপ সংস্কৃতি এটির সাথে একটি পার্টি স্পিরিট নিয়ে এসেছে যা পশ্চিমের ব্যাক স্ট্রিট বয়েজ বা ওয়েস্টলাইফ ব্যান্ডের মতো।
কোরিয়ান পপ বা কে পপ এর এই তরুণরাও গানে তরুণদের মনোভাব খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে শুরু করে। এছাড়াও গানের কথা, সুর সব নিজেরাই করে।
তাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল নাচ। তারা একসাথে নাচতে এবং সুন্দরভাবে গাইতে পারে যা তাদের বাকি শিল্পীদের থেকে আলাদা করে।
মূলত এই কারণগুলোই পরবর্তীতে কে-পপের বিশ্বায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আর সেই বিশ্বায়নে বাংতান সোনিয়োদান (Bangtan Sonyeondan) বা BTS সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
BTS Army কি ? বিটিএস আর্মি কারা
বিশ্বে নামকরা অনেক শিল্পীই আছে তাদের ও বিশাল বিশাল ফ্যানবেইজ আছে। কিন্তু সেই সকল ফ্যানবেইজের থেকে বিটিএস এর ফ্যানবেইজ একদম আলাদা। কেন আলাদা সেটার উত্তর জানতে পারলেই আমাদের প্রথম প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আশা করি। চলুন তার আগে একটু তাদের বিশালত্ব কত সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করি।
২০১৭ সালে বিলবোর্ড টপচার্ট এওয়ার্ডস এ ফ্যানদের ভোটে বিটিএস সেরা সোশ্যাল আর্টিস্ট পুরুস্কার পায়। সেখানে পাওয়া ভোটের সংখ্যা কত ছিল জানেন? প্রায় ৩০ কোটি! । এই পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা পেছনে ফেলেছে জাস্টিন বিবার, শাওন মেন্দেজ এর মতো তারকাদের।
জিইয়ে কিম নামের একজন বিটিএস ফ্যান @doyou_bangtan নামে একটি ফ্যান ট্রান্সলেশন টুইটার হ্যান্ডেলার চালায় যেটার ফলোয়ার প্রায় দুই লাখ সত্তর হাজার। এরকম ভাবে আরো কয়েকটি ফ্যান দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত টুইটার হ্যান্ডেলার রয়েছে যেটার মধ্যে @btstranslation7 এর ফলোয়ার প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এই আর্মিরা যে শুধুমাত্র তাদের প্রিয় শিল্পীকে নিয়েই পড়ে থাকে এমন না। তারা নিয়মিতই বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সরব থাকে। যেমন
love my self ক্যাম্পেইন
২০১৮ সালে বিটিএস এবং ইউনিসেফ মিলে এই ক্যাম্পেইনটি শুরু করে। ক্যাম্পেইন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের প্রতি সহিংসতা নিরোধে কাজ করে। বিটিএস এবং বিটিএস আর্মিরা এই ক্যাম্পেইনের ফান্ডে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ডলার দান করে। এই ক্যাম্পেইনটি ২০১৮ সালে ইউনিসেফের "বেস্ট ইন্সপিরেশন এওয়ার্ড" এ ভূষিত হয়। এছাড়াও OIAA,যার অর্থ one in an army নামের সংগঠন যারা কোরিয়ায় শিক্ষা বৃত্তি এবং এতিম শিশুদের নিয়ে কাজ করে।
black lives matter এ অংশগ্রহণ
বিটিএস বরাবরই বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সরব। সমকামীতার পক্ষে তারা কথা বলেছে, ৭৩ তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তারা বক্তৃতা দেয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি বর্ণ বাদ বিরোধী আন্দোলন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারে বিটিএস এবং বিটিএস আর্মি প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।
বিটিএস এর সম্পদ
বিটিএস আর্মিদের কল্যাণে বিটিএস এর মোট সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে হুহু করে। দক্ষিন কোরিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন এলবাম কপি বিক্রি করা ব্যান্ড বিতিএস । ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বিশ্বে সর্বোচ্চ এলবাম বিক্রি করা লিস্টে অবস্থান ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কোরিয়ার অর্থনীতিতে বিটিএস এর অবদান প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। যেটি কোরিয়ার ২৬ টি মাঝারি কোম্পানীর থেকেও বড়।
জিডিপির অনুপাতে সেটা প্রায় ০.৩ শতাংশ। সুতরাং বিটিএস এর আর্মিদের মোটেও সাধারণ ফ্যানবেইজ বলে হেয় করার সুযোগ নেই, এবং এরকম একতাবদ্ধ থাকার জন্য তাদের আর্মি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এইবার একটু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আসি। যেকোন কিছুর ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত করা ভালো জিনিস নয়। বিটিএস একটি ভিন্ন দেশী সংস্কৃতি, এবং তাদের সঙ্গীত এর ধারাটাও ভিন্ন। প্রত্যেক মানুষের গান শোনার স্বাদ টা ভিন্ন ভিন্ন। এক্ষেত্রে দুই পক্ষের সহনশীল আচরণ টাই কাম্য, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে যারা বিটিএস বিরোধী তারা হয়তো জেনে বা না জেনেই বিটিএস সমর্থকদেরকে নিয়ে হাসি তামাশা করে বেড়াচ্ছে। সেটার উত্তরে বিটিএস আর্মিরা একদম আর্টিলারী, পদাতিক বাহিনী নিয়ে এসে বিটিএস কেন সেরা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। এই বোঝাবুঝি করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কে যে কি বুঝতে পেরেছে সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
সংস্কৃতি জিনিসটা পরিবর্তন শীল, বিটিএস সম্ভবত সেই পরিবর্তনটাই নিয়ে এসেছে। আজ থেকে হয়তো ১০ বছর পর কে পপ হয়তো আমাদের দেশেই প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আর হ্যা! আপনি বিটিএস্ পছন্দ করতে পারেন বা নাই পারেন।কিন্তু তাদের ভক্তরা যে কাজ গুলো করে বেড়াচ্ছে বিশ্বের অন্য কোন শিল্পীর ফ্যানবেইজ করেছে বলে মনে হয় না। সুতরাং আপনিও আপনার পছন্দের ব্যান্ড বা শিল্পীর জন্য কিছু করেন, বিশেষ করে দেশীয় শিল্পীদের এলবাম কিনুন তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। তাহলে সবারই উপকার হবে। বিটিএস আর্মিদের জন্য শুভ কামনা থাকলো।