অনলাইন ডেস্কঃ
স্বামী কমল দেবনাথকে খুন করার পরই স্ত্রী শিল্পা দেবনাথ তার প্রেমিক আনারুল মণ্ডলকে ফোন করে বলেছিল— কাজ হয়ে গিয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমরা এবার পালিয়ে যাব। আনারুল বলেছিল, আমি রওনা দিচ্ছি। একটু অপেক্ষা করো। কিন্তু, সেই সুখপ্রতীক্ষার অবসান হল না। প্রেমিক তাকে নিতে এল না। তার বদলে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছল কমলের বাড়ির লোকজন এবং পুলিস! কী করে? পুলিস জানিয়েছে, যার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে শিল্পা নিজের স্বামীকে খুন করেছিল, সেই প্রেমিক আনারুলই জানিয়ে দেয় খুনের কথা।
পুলিস জানিয়েছে, কমলকে খুন করার পর শিল্পার ফোন পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য আনারুল যখন ব্যাগে জামা-কাপড় ঢোকাতে যাবে, তখন তার পরিবারের লোকজন তাকে বাধা দেয়। তখন আনারুলও ভাবে, এই রাতের বেলায় শিল্পাকে নিয়ে পালাতে গেলে বেশি ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে। এমনকী, ধরা পড়ারও ভয় রয়েছে। তাই সে বেঁকে বসে। পুলিসের হাত থেকে নিজে বাঁচতে সে ভালো মানুষ সাজে। শিল্পার ফোন রাখার পরই সে শিল্পার দাদা বাপন দেবনাথকে ফোন করে বলে, শিল্পা বোধহয় কমলকে মেরে ফেলেছে।
পুলিস আরও জানিয়েছে, আনারুলের সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি শিল্পার পরিবারও। তাঁরা চেয়েছিলেন, কমল ভালো ছেলে। শিল্পা তাঁর সঙ্গেই সংসার করুক। তাই আনারুলের কাছ থেকে ওই খবর শুনেই শিল্পার দাদা কমলের পরিবারকে ফোন করে বলেন, শিল্পা বোধহয় কমলকে মেরে ফেলেছে। তারপরই কমলের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বসিরহাট থানার পুলিসও যায়। শিল্পা বুঝতে পারেনি আনারুল এই বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবে। তাই হাতেনাতে সে ধরা পড়ে যায়। কারণ, তার সামনেই তখন কমলের নিথর দেহ পড়েছিল।
পুলিস জানিয়েছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালেই বসিরহাট থেকে বেঙ্গালুরুতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কমলের। কিন্তু, তার আগেই তাঁকে খুন করে পথের কাঁটা দূর করতে চেয়েছিল শিল্পা এবং প্রেমিক আনারুল। যেমন পরিকল্পনা, তেমন কাজ। বেঙ্গালুরুতে ফেরার একদিন আগেই বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে খুন করা হল। আনারুলের বুদ্ধিতেই খুন করতে সাহায্য করতে এসেছিল, তাদের বন্ধু ছোটকা। কমলকে খুন করার পর ছোটকা চলে যায়। শিল্পা আনারুলের জন্য প্রতীক্ষা করছিল। সে বুঝতে পারেনি, এই বিশ্বাস করে অপেক্ষা করাটাই তার কাল হবে।
পুলিস জানিয়েছে, শিল্পা ও ছোটকা মিলেই কমলকে খুন করেছিল। আনারুল এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল। কিন্তু, সে ভালো মানুষ সাজতে এবং গ্রেপ্তারি এড়াতে একেবারে শেষ মুহূর্তে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ায়। সেই কারণেই পুলিসের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় পরকীয়া প্রেমে মত্ত শিল্পা দেবনাথ। আনারুল যদি ওই রাতেই এসে শিল্পাকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেত, তাহলে হয়ত তাদের গ্রেপ্তার করা মুশকিল হত। এমনকী, খুনের কিনারা করতেও দেরি হত। কিন্তু, আনারুল নিজে বাঁচতে গিয়েই বিষয়টি চাউর করে বসে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতরা পুলিসি জেরায় এই কথা কবুলও করেছে।