শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় - What to do if you have trouble breathing
শ্বাসকষ্ট এমন একটি শারীরিক অবস্থা যখন একজন মানুষ মনে করে যে সে যথেষ্ট ভাল করে ও আরামদায়কভাবে শ্বাস নিতে পারছে না। একে ইংরেজি চিকিৎসা বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ডিসপ্নিয়া (Dyspnoea) বলে। শীত পড়তে শুরু করেছে। শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এই সময়ে অনেকটা কমে যায়। ফলে বাড়ে ধুলোর পরিমাণ। সেগুলোই ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসের সমস্যা বাড়ায়। আর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, শীতকালে বায়ুদূষণের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে সমস্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
শ্বাসকষ্টের ঘরোয়া চিকিৎসা
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের রান্না ঘরে থাকা সাধারণ কিছু খাবার চটজলদি অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট কমাতে দারুণ কাজে আসে। যখনই দেখবেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তখনই এই খাবারগুলির যেকোনো একটি সাথে সাথে খেয়ে নেবেন। এতে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এ ধরণের কিছু খাবার সম্পর্কে-
গবেষণায় দেখা গেছে আদায় থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায়। এর ফলে শ্বাসনালীতে অক্সিজেনের প্রবেশ ঠিকমতো ঘটে। তখন স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করে।
সরিষার তেল
শ্বাসকষ্ট কমাতে আরেকটি দারুণ উপকারি উপাদান হচ্ছে সরিষার। শ্বাসকষ্ট হলেই অল্প করে সরষের তেল গরম করে বুকে-পিঠে ভাল করে মালিশ করতে থাকবেন। এই তেলটি রেসপিরেটারি প্যাসেজকে খুলে দেয়। ফলে শ্বাসকষ্ট ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনসম্পন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ অংশ। হলুদ শরীরকে বিশেষ করে শ্বাসনালীকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে পান করলে শ্বাসকষ্টে ভালো ফল পাওয়া যায়। হলুদে থাকা কারকিউমিন শরীরে হিস্টামিন নিঃসরন বন্ধে সাহায্য করে। হিস্টামিন নিঃসরন কমলে এলার্জি হাঁপানি দ্রুত কমে যায়। তাই শ্বাসকষ্ট দূর করতে হলুদের সাহায্য নিতে পারেন।
হাফ কাপ দুধে পরিমাণ মতো রসুন ফেলে ভাল করে দুধটা ফুটিয়ে নিন। এরপর কিছুটা ঠাণ্ডা করে খেয়ে ফেলুন।খাওয়ার পর দেখবেন শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করেছে।
অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে কফি দারুণ উপকারি হচ্ছে কফি। গরম গরম এক পেয়ালা কফি খেলে শ্বাসনালী খুলে যায়। ফলে অক্সিজেন খুব সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। কফি যত কড়া হবে, তত উপকার পাবেন। তবে দিনে ৩ কাপের বেশি কফি কিন্তু ভুলেও খাবেন না। কারণ এই পানীয়টি যতটা উপকারি, বেশি মাত্রায় খেলে কিন্তু ততটাই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
অ্যাজমার চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। এক গ্লাস করে গরম জলে এক চামচ করে মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার করে পান করলে দারুণ উপকার পাবেন।
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
শ্বাসকষ্ট হলে যেসব ব্যায়াম করবেন
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও শরীরে অক্সিজেন চলাচল বাড়াতে কিছু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম নিয়মিত করা প্রয়োজন। জেনে নিন কোন ব্যায়ামগুলো করবেন—
শ্বাস গোনার ব্যায়াম
ফুসফুস সুস্থ রাখার অন্যতম সেরা ব্যায়াম এটি। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন ও ঘাড় সোজা করুন। লম্বা শ্বাস নিন যাতে শিরদাঁড়া আরও টানটান হয়। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন।
অনুলোম বিলোম
ফুসফুস থেকে দূষিত বায়ু বের করতে এবং শরীরে অক্সিজেন চলাচল বাড়ানোর জন্য এই ব্যায়াম আদর্শ। নিয়মিত করলে ফুসফুস আরও শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসে চোখ বন্ধ করুন। ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাসিকা চেপে ধরুন। বাঁ দিকের নাসিকা দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিন। বেশ কিছুক্ষণ রেখে (৪ অবধি গুনতে পারেন) আঙুল দিয়ে বাঁ নাসিকা বন্ধ করে ডান দিকের নাসিকা দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। ফের উল্টোটা করুন। এই পুরো পদ্ধতিটা অন্তত ৫ বার করতে হবে।
হাই তোলা থেকে হাসি
এই ব্যায়াম করলে বুকের মাংসপেশী টানটান হয় এবং শরীরে অক্সিজেন চলাচল বাড়ে। ফুসফুসের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। মেরুদণ্ড সোজা করে বসে পিঠ টানটান করুন। যেন হাই তুলছেন এমন মুখভঙ্গি করুন যাতে আপনার দুই কাধ উচু হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মুখ বন্ধ করে হাসির মতো মুখভঙ্গি করুন।
মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়া
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এই ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি। পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এই ব্যায়াম করতে হবে অন্তত ৫ বার। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।