প্যানিক অ্যাটাক কী এবং এটি হলে আপনি কী করবেন?
শরীর এবং মন এই দুয়ে মিলে হয় মানুষ। তাই এদের একটির ওপর আরেকটির প্রভাব অপরিসীম। শরীর এবং মন এদের একটিকে আরেকটি নানাভাবে প্রভাবিত করে। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ বা ব্যধি হল Phobic anxiety disorder এবং এর আরেকটা রূপ হল Specific phobia. এ রোগের ক্ষেত্রে রোগীর প্রচণ্ড ভীতি তৈরি হয়, অবশ্যই অহেতুক ভীতি, কোনো বিশেষ বস্তু বা অবস্থার প্রতি। খুব বেশি ভীতির মধ্যে যখন রোগী বসবাস করে তখন মাঝে মাঝে তার মধ্যে Panic attack-এর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে অনেক সময় এই Phobia এবং Panic attack ঠিক ব্যধির পর্যায়ে না পড়ে সাময়িকভাবে কোনো অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং অস্থির আবেগ কাজ করে যা তার জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।
প্যানিক অ্যাটাক হলো অপ্রত্যাশিত ভয় যা একজন মানুষকে ভয়ের অতিশায্যে নিয়ে যায়। কোনো আগাম বার্তা ছাড়াই এটি একজন মানুষকে আক্রমণ করে। এমনকি একজন বিশ্রামরত অথবা ঘুমন্ত মানুষকেও এটি আক্রমণ করতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাক কারো জীবনে কখনো হয়তো এক-দুইবার ঘটে থাকে। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কিছু দিন পরপরই প্যানিক অ্যাটাক হয়। পুনঃপুন প্যানিক অ্যাটাক সাধারনত কিছু নির্দিষ্ট কারণে বা পারিপার্শ্বিকতায় হয়ে থাকে। বিশেষত পূর্বে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে যে পারিপার্শ্বিক অবস্থায়, সেই অবস্থায় যদি সে পড়ে তাহলে আবার প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ এমন কোনো ঘটনা যা কাউকে পূর্বে বিপদে ফেলেছিল এবং সে তা থেকে বেরুতে পারেনি এমন অবস্থায় পড়লে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
যে কেউই জীবনে এক দুইবার এই প্যানিক এটাকের শিকার হতে পারে। এছাড়া কারো আবার অন্যসব ব্যাধি যেমন ভয়, সামাজিক ভীতি অথবা হতাশা থেকে এই প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার পর কী করবেন?
কী হচ্ছে সে ব্যাপারে ভালো মতন বুঝার চেষ্টা করতে হবে। মাথায় প্যানিক কিংবা এনজাইটি অ্যাটাক এর লক্ষণগুলো রাখতে হবে এবং বুঝতে হবে আপনার আসলে কোনটি হয়েছে। চিন্তা করতে থাকলে ভয় কেটে যাবে আস্তে আস্তে।
আস্তে আস্তে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে। এরকম অ্যাটাকে শ্বাস নেয়া কষ্ট হয়ে পড়ে তাই আস্তে আস্তে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে রাখতে হবে। ১-৪ পর্যন্ত গুনুন প্রত্যেক শ্বাস নেয়ার সময়।
শিথিলকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। অ্যাটাক হওয়ার পর এই শিথিলকরণ পদ্ধতি সাহায্য করবে। অনলাইনে অনেক ভিডিও-অডিও পাওয়া যায়।
ম্যাডিটেশনের মাইন্ডফুলনেশ নিয়ে কাজ করতে পারেন। এনজাইটি অ্যাটাক যাদের হয় তাদের মন একাগ্র রাখার জন্যে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকরী।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগটি একজন মনরোগবিশেষজ্ঞের দ্বারাই নির্ণীত হয়। প্যানিক রোগ ঠিক করার জন্য ব্যাক্তিকে তার নিজস্ব উপসর্গের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয় বিভিন্ন শিথিলায়ন অনুশীলনের মাধ্যমে। মানসিক চাপ দূর করতে কাউন্সিলিং করা হয় ও কগনিটিভ বিহ্যাবিয়ার থেরাপীর দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
গুরুতর অবস্থায় ওষুধের দরকার পড়ে। এইসব ক্ষেত্রে সাধারণত উদ্বেগ কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
এটা জানা দরকার যে প্যানিক রোগটি প্রাণঘাতি ব্যাধি না, কিন্তু একজনের আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সময়মত সহায়তা ও সচেতনতার সাহায্যে প্যানিক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ডা. মেরিলের মতে, ‘প্রথমবারের প্যানিক অ্যাটাক বিপজ্জনক নয়। এমনকি এরপরেও মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যাটাক হলেও ভয়ের কিছু নেই।’ কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যদি কেউ প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে আচার-আচরণে বা জীবনযাপনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আনেন।
ঘনঘন প্যানিক অ্যাটাক হলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।