ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় - Ways to stop hair loss in boys
চুল পড়ার সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়েই ভোগেন। তবে পুরুষরা যেহেতু বেশিরভাগ সময়ই ঘরের বাইরে সময় কাটান, তাই তাদের চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও নারীরা চুলের যতটা যত্ন নেন, তার একভাগও পুরুষরা করেন না। সব মিলিয়ে কম বয়সেই অনেক পুরুষই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। কারও কারও মাথায় চুল পড়ে টাক হয়ে যায়। আর মাথার চুল কমে গেলে আত্মবিশ্বাসও কমে যেতে থাকে। তাহলে উপায়?
চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ঘরোয়া উপায়েও অনেক ক্ষেত্রে চুল পড়া বন্ধ করা যায়। তবে অনেকেরই জিনগত কারণে চুল পড়ে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চুল পড়ার কারণ
আসুন পুরুষদের মধ্যে চুল পড়ার কারণ গুলিও জেনে নিই।
বেশি চাপ নেওয়া - স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বেশি চাপের মধ্যে থাকেন তারা বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতায় ভুগতে পারেন। অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেক সময় চুল পড়াও সমস্যা হতে পারে।
চুলে বেশি পরিমানে তেল দেওয়া - চুলে অতিরিক্ত তেল দিলে চুলের গোড়া ভিজে থাকার কারনে চুল পড়তে পারে।
চুলের গোড়া অপরিষ্কার থাকার কারনে - চুলের গোড়া অপরিষ্কার থাকার কারনে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন- হরমোনের পরিবর্তন চুল পড়াও হতে পারে। সাধারণভাবে অতিরিক্ত বা ঘাটতিযুক্ত টেস্টোস্টেরনের কারণে চুল ক্ষতি হয়।
অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান - এটি দেখা যায় যে চুল পড়া ক্ষতি হয় তাদের মধ্যে যারা বেশি ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে দেখা যায়।
জেনেটিক সমস্যা- বেশিরভাগ সময় লোকদের মধ্যে চুল পড়ার সমস্যা জেনেটিক হয়। আপরনার বাবা বা দাদার ঢাক পড়ে যায় তাহলে আপনারও একই অবস্থা হতে পারে। জেনেটিকের কারণে আপনি এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কারণে - আপনার চুলও গুরুতরভাবে পড়তে শুরু করে। তবে, এভাবে চালানো চুল পুনরায় গজানো সম্ভব।
বেশি ভিটামিন-এ থাকা - শরীরে বেশি ভিটামিন এ থাকাও চুল পড়ার সমস্যা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনার ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
চুল পড়া রোধ করতে যা যা করবেন
১. মেহেদির সাথে আমলকীর গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ দুধ দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে চুলে লাগাতে হবে। ১ ঘণ্টার পর শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। বাইরের কেমিক্যাল পণ্য দিয়ে চুল রঙ না করে মেহেদি ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ। মেহেদির ব্যবহার চুলের গোড়াকে মজবুতও করে।
২. মেথি চুলের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। নারকেল তেল হালকা গরম করে নিয়ে মেথি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি পুরো চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টার পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল পড়া রোধ করার জন্য সপ্তাহে ৩ দিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করতে ব্যবহার করতে পারেন রসুন, পেঁয়াজ বা আদার রস। এই উপাদানগুলোর রস রাতে মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। সারারাত রেখে সকালে চুল পরিষ্কার করে ফেলুন। এক সপ্তাহ নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফলাফল পাবেন হাতেনাতে।
৪. টক দই ও সরিষার তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
৫. একটি ডিমের সাদা অংশ ও ৪ টেবিল চামচ টক দই খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে ১ টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকসহ পুরো চুলে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ১ বার এটা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৬. অতিরিক্ত খুশকি চুল পড়াকে তরান্বিত করে। তাই চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ও খুশকি দূর করতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল গরম করে নিয়ে এতে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুল লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার চুলে অলিভ অয়েল লাগাতে হবে। খুশকি দূর হবে সাথে চুলও হবে কোমল ও ঝলমলে। একই পদ্ধতিতে নারকেল তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
৭. চুল পড়া বন্ধ করতে নিমপাতার জুড়ি নেই। তাজা নিমপাতা নিয়ে বেঁটে তাতে সামান্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে মাথায় লাগান। কিছুক্ষণ পর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়তে ফেলুন। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে চুল পড়া কমে আসবে।
৮. মাথায় নতুন চুল গজাতে কালোজিরার তুলনা হয়না। এখন বাজারে হরহামেশাই কালোজিরার তেল কিনতে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে মাথায় কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন আবার ইচ্ছে করলে কালোজিরা খেতে পারেন।
৯. শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হলেও চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে গেলে বুঝবেন আপনার শরীরে হয়তো পানিশূন্যতা হয়েছে। তাই দৈনিক অন্তত ২-৩ লিটার পানি অবশ্যই পান করুন।
১০. গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি ব্যবহারে চুল পড়ার সমস্যা কমে। এজন্য এক কাপ পানিতে দু’টি গ্রিন টি ব্যাগ মিশিয়ে নিন। তারপর তা ঠান্ডা করে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ব্যবহার করুন। ঘণ্টাখানেক পর ধুয়ে ফেলুন। ৭-১০ দিন একটানা ব্যবহারে চুল পড়ার সমস্যা সমাধান হবে।