গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া প্রতিকার - Home Remedies for Constipation During Pregnancy
গর্ভাবস্থায় কষা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা খুবই কমন। গর্ভধারণের আগে আপনি এই সমস্যায় না ভুগে থাকলেও গর্ভধারণের পর আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা শুরু হতে পারে। আর আপনার আগে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে গর্ভাবস্থায় তা বেড়েও যেতে পারে।
তবে গর্ভকালীন সময়ে সবাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন না। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও জীবনধারায় সহজ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আপনি অনেকাংশেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধান করতে পারেন। এতে আপনার গর্ভকালীন সময় কিছুটা হলেও সহজ হয়ে আসবে।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?
গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পরিপাক নালীতে খাবার তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে। অর্থাৎ খাবার হজম হয়ে মল তৈরি হতে বেশি সময় লাগে। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এ ছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে গর্ভের শিশু অনেকটা বড় হয়ে যাওয়ায়, গর্ভবতী নারীদের জরায়ুও আকারে বেড়ে যায় এবং এটি পরিপাক নালীতে বাইরে থেকে চাপ দেয়। ফলে গর্ভধারণের শেষের দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
তবে হরমোনজনিত কারণ ছাড়াও আরও যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে পারে সেগুলো হলো—
* পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: ফল ও শাকসবজি) না খেলে
* পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে
* সারাদিন শুয়ে-বসে থাকলে অথবা হাঁটাহাঁটি না করলে
* পায়খানার চাপ আসার পরেও সেটি আটকে রাখলে
* মানসিক চাপ, আতঙ্ক ও ডিপ্রেশনে থাকলে
* কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে
গর্ভবতী কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে প্রতিকারের কিছু উপায় আসুন জেনে নিই-
দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নারীদের দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে দুধ খেতে পারেন না। তাদের দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন-পায়েশ, দধি খেতে বলেন ডাক্তাররা। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে।
আলুবোখরা বা খেজুরের রস
আলুবোখরা বা খেজুরের রস হল কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য অন্যতম একটি কার্যকর প্রতিকার।আপনার মলকে নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্যকে সহজ করে তুলতে দিনে প্রায় পাঁচবার করে এই রস আপনি খেতে পারেন।আলুবোখরা বা খেজুরের রসের তীব্র স্বাদটি যদি খুব শক্তিশালী হয়ে থাকে তবে সামান্য জল সহযোগে এটিকে কিছুটা পাতলা করে নেওয়া যেতে পারে এবং এর সাথে এক টুকরো লেবু যোগ করে এর স্বাদের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তোলা যেতে পারে।
আঁশযুক্ত খাবার
শাকসবজি, ফলমূল কোষ্ঠকাঠিন্যের শত্রু। আঁশযুক্ত খাবার খেলে মল বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়। চিকিৎসকরা বলেন, গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর প্রথম ধাপ হল বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
লালশাক-পালংশাক, লাউশাক, গাজর, আলু, আঙুর, আপেল, কমলা, বেদানা, কলা-এসব খাবার খেলে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না। তবে পেঁপে খাওয়া যাবে না।
হালকা ব্যায়াম
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস, ফিস্টুলা হয় না। অন্তঃসত্ত্বাদেরও কিছু হালকা ব্যায়াম আছে। এগুলো অনুসরণ করলে এ সমস্যা কেটে যাবে।
শণবীজ
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় এটি অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার।শণবীজ খাদ্যগত তন্তুতে ভরপুর যা আপনার ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় রাফেজ যুক্ত করে এবং এছাড়াও এতে রয়েছে ওমেগা-৩ গুলি।এমনকি এটি নিরাময় করার জন্য, আপনাকে প্রায় ১০ গ্লাস জলের সাথে এই সম্পূরকটি গ্রহণ করতে হবে।এছাড়াও আবার আপনি শণবীজের তেল ব্যবহারের কথাও বিবেচনা করতে পারেন।
দানাদার খাবার
বাদামসহ বিচিজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আঁশ পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো রাখতে পারেন। দানাদার খাবার খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকরাও দিয়ে থাকেন। এটি সন্তানের পুষ্টি জোগায়।
তরল খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও শরবত পান করুন। এটি পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনি ভালো ফল পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে ইসবগুলোর সম্পর্ক সাপে নেউলে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যারা এ সমস্যায় ভোগেন, তারা কোনো ধরনের ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই ইসবগুল খেতে পারেন।
লেবু পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে আরেকটি চমৎকার উপায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় লেবু পানি গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। লেবুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-সি। এটি শিশুর বৃদ্ধিতেও কাজ করে। এক গ্লাস গরম পানিতে চার চা চামচ লেবুর রস দিন। এর মধ্যে সামান্য মধু যোগ করুন। দিনে দুবার পান করুন।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঔষধ
ঘরোয়া চিকিৎসায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ খেতে পারেন। যেমন: ল্যাকটুলোজ সিরাপ। এই ঔষধটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ বলে ধরা হয়।
তথ্যসূত্র: jugantor.com