
পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায় - Ways to reduce leg muscle pain
কোনো ব্যথাই শরীরের জন্য ভালো নয়। আর পেশির ব্যথা খুবই মারাত্মক। তাই এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ভারী কিছু তুলতে গিয়ে, দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকা এবং রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটলে পেশিতে ব্যথা হতে পারে।
এসব কারণ ছাড়াই অনেক কারণেই হঠাৎ পেশিতে টান ধরতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, আচমকা টান ধরলে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় এই ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে।
মাংসপেশিতে ব্যথার কারণ কী? আসুন জেনে নিই কেন মাংসপেশিতে ব্যথা হয়-
১. শরীরের যেকোনো একটি মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে।
২. ব্যায়াম, খেলাধুলা বা যেকোনো শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ বা শরীর গরম না করলে।
৩. পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে।
৪. হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী কিছু ওঠালে।
৫. পেশীর অতিরিক্ত ও অনুপযুক্ত ব্যবহার।
৬. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা।
৭. অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বিশেষ করে পানি কম খেলে এবং শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
চিকিৎসা
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার তথ্য মতে, মাংসপেশিতে ব্যথা হলে প্রথম কয়েকদিন চারটি ধাপে এর চিকিৎসা করতে হবে। যাকে সংক্ষেপে রাইস থেরাপি বলা হয়। এর মাধ্যমে ব্যথা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। পেশিতে টান পড়লে RICE থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এই RICE মানে কিন্তু ভাত বা চাল না।
রাইস থেরাপির ৪টি ধাপ হল:
• R- Rest- রেস্ট বা বিশ্রাম
• Ice-আইচ বা বরফ
• C- Compression-কম্প্রেশন বা চাপ
• E- Elevation-এলিভেশন বা উঁচু করে রাখা
১. রেস্ট বা বিশ্রাম: সব ধরণের শারীরিক ব্যায়াম বা ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রাখতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কখনও কোন ওজন নেয়া যাবেনা।
২. আইস বা বরফ - আঘাতের স্থানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিটের জন্য বরফের ব্যাগ দিয়ে রাখুন।
৩. কমপ্রেশন বা সংকোচন - আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটির নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে।
৪. এলিভেট বা উঁচু করা - অর্থাৎ আঘাতের স্থানটি যতটা সম্ভব বালিশের উপরে উঠিয়ে রাখতে হবে।
মাংসপেশির ফুলে ওঠা প্রতিরোধে কোন অবস্থাতেই আঘাত পাওয়ার প্রথম কয়েকদিন ওই স্থানে গরম সেক দেয়া বা গরম পানি দেয়া যাবে না।
এছাড়া আঘাতের স্থানে কোন অবস্থাতেই মালিশ করা যাবে না।
মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
১। ঠান্ডা পানির সেঁক
ব্যথা অনেক বেড়ে গেলে ঠান্ডা পানির সেঁক দিতে পারেন। এটি আপনার পেশির টান কমিয়ে দিয়ে পেশিকে রিল্যাক্স করে দিয়ে থাকে। একটি কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ রেখে মুড়ে নিন। এইবার কাপড়টি দিয়ে পেশি টানের স্থানে সেঁক দিন। এটি ১৫ মিনিট ধরে রাখুন। দিনে ২ ঘন্টা পর পর এই কাজটি করুন। কিংবা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন, এটিও আপনার পেশি টানের ব্যথা কমিয়ে দিবে।
২। আপেল সিডার ভিনেগার
পেশি টানের অন্যতম একটি কারণ হয়ে থাকে দেহে পটাসিয়ামের অভাব। আপেল সিডার ভিনেগারে উচ্চ পটাসিয়াম, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের তরলের ভারসাম্য করে থাকে যা ড্রিহাইড্রেশন রোধ করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন পান করুন। রাতের পেশী টান প্রতিরোধ করার জন্য এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, এক চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট আধা গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে পান করুন।
৩। হলুদ সরিষা
হলুদ সরিয়া কয়েক মিনিটের মধ্যে পেশি টান ভাল করে দিতে পারে। সরিষাতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে যা পেশী টানের ব্যথা দূর করে দিয়ে থাকে। এক চা চামচ সরিষা খান। এটি গরম দুধের সাথে খেতে পারেন।
৪। লবঙ্গের তেল
লবঙ্গ তেলের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান পেশি টান এবং পেশির ফোলাভাব দূর করে থাকে। লবঙ্গের তেল কুসুম গরম করে নিন এবার এটি পেশি টানের স্থানে ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট। প্রয়োজন হলে এই ম্যাসাজ আবার করুন।
৫। পানি পান
পেশি টানের প্রধান একটি কারণ হল ডিহাইড্রেশন। যখনই পেশিতে টান পড়বে তখন ১ থেকে ২ গ্লাস পানি পান করুন। খেয়াল রাখবেন দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস থাকতে হবে। আপনার যদি ব্যায়াম করার কারণে পেশিতে টান পড়ে থাকে, তবে ব্যায়াম শুরুর ২ ঘণ্টা আগে কয়েক গ্লাস পানি পান করে থাকুন।