মেলাটোনিন হরমোন বৃদ্ধির উপায় - Ways to increase the hormone melatonin
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ভালো মানের পুষ্টি সঠিকভাবে ঘুম আনতে সাহায্য করে। ঘুমের সময় নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সারা দিনের জন্য শরীরকে সতেজ রাখে।
ঘুমের ঘাটতি বা ঘুম কম হলে গ্লুকোজের বিপাক বাধাগ্রস্থ হয়, স্ট্রেস হরমোন লেভেল বৃদ্ধি পায় ও শরীরে প্রোটিন সংশ্লেষণ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক দক্ষতা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক সুস্থতা ব্যাহত হয়।
ঘুম বা জাগরণ এই দুই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যে বায়োলজিক্যাল সিস্টেম তা হল নিদ্রা-অনিদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী সারকাডিয়ান রিদম (circadian rhythm), যা সময় নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর ঘুম আনতে সাহায্য করে।
মেলাটোনিন হরমোন কী
মেলাটোনিন শরীরের সুপ্ত হরমোন,মস্তিষ্ক সাধারণত অন্ধকারে এই হরমোন তৈরি করে। যেই প্রক্রিয়াকে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রা অনেকটাই ব্যাহত করছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে এই হরমোন খুব অল্প পরিমাণে তৈরি হয়। ব্লু ফ্রিকোয়েন্সি ও আর্টিফিশিয়াল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা দেয়, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের ঘুম চক্রের ওপর।
মেলাটোনিন আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি। তাই মেলাটোনিন কমে গেলে প্রদাহের বিরুদ্ধে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায় ও এর প্রতিক্রিয়ায় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে।
সন্ধ্যায় আলো কমিয়ে দিয়ে, ঘুমানোর এক বা দুই ঘণ্টা আগে সব ইলেকট্রনিক্স থেকে দূরে থেকে ও আর্টিফিশিয়াল আলো এড়িয়ে বা কম ব্যবহার করে মেলাটোনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়।
মেলাটোনিন হরমোন বৃদ্ধির উপায়
মেলাটোনিন : পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলাটোনিন নিঃসরণ ভালো ঘুমের জন্য খুব দরকার, যা অন্ধকারে নিঃসৃত হয়। মেলাটোনিন হল হরমোন, যা পেনিয়াল গ্ল্যান্ডে তৈরি হয় (এটি মস্তিষ্কের অ্যান্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ডে তৈরি হয়) যা শরীরের সারকাডিয়ান রিদম (circadian rhythms) বা আমাদের জেগে থাকা বা ঘুমানোর যে সিস্টেম তা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রদাহ হ্রাস করে। দিনের বেলা পেনিয়াল গ্ল্যান্ড সক্রিয় থাকে না, অন্ধকারে এই গ্ল্যান্ড সক্রিয় থাকে এবং মেলাটোনিন তৈরি হয় ও রক্তে চলে আসে। কিছু খাবারে প্রাকৃতিকভবেই মেলাটোনিন থাকে যেমন- চেরি, কলা, আঙুর, ভাত, শস্য জাতীয় খাবার, অলিভ অয়েল। তাই এগুলো ঘুম আসতে সাহায্য করে।
মোবাইলের নীল আলো মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধাসৃষ্টি করে। তাই ঘুমানোর অন্তত দু’ঘণ্টা আগে মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
সেরোটোনিন : সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মেলাটোনিনের প্রিকারসোর হিসেবে কাজ করে। সেরোটোনিন আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ঘুমাতে, খাবার ঠিকভাবে হজম করতেও সাহায্য করে। সিরোটোনিন অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফেন থেকে আসে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু ট্রিপটোফেন সমৃদ্ধ খাবার খেলে ঘুম ভালো হয়। যেসব খাবারে উচ্চ মাত্রায় ট্রিপটোফেন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে- বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার, পনির, মাংস, ওটস, শিম, ডিম।
সূর্যের আলো : পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো রক্তে ভিটামিন-ডি’র স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি হলে নিদ্রাহীনতা এবং ঘুমে ব্যাঘাত দেখা দেয়।
ম্যাগনেসিয়াম : ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও অক্সিডেটিব ট্রেস বৃদ্ধি পায়, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় ও বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে। ম্যাগনেসিয়াম নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং মেলাটোনিন মন শান্ত রাখে ও চিন্তামুক্ত রাখে। যেসব খাবারে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তাদের মধ্যে আছে- পালং শাক, বিচি (তিসি ও চিয়া সিড), মাছ, ডার্ক চকোলেট, স্বল্প ননীযুক্ত ইউগারট, কলা।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর