গলা ব্যথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়
শীত আসতে এখনও কিছুটা দেরি। কিন্তু দিনে গরম থাকলেও রাতে হুটহাট ঠান্ডা বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে আমাদের শরীর কিছুটা দ্বিধান্বিত। গরম-ঠান্ডার এই সময়ে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। গলা ব্যথা দেখা দিলে ঢোক গিলতে কিংবা খাবার খেতেও সমস্যা হয় অনেক সময়।
শুধু আবাহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নয়, আরও অনেক কারণে হতে পারে গলাব্যথা। দীর্ঘ সময় এসি চালিয়ে রাখা, ঠান্ডা পানি খাওয়া ইত্যাদি কারণেও গলা ব্যথা হতে পারে। আবার অনেকে আছেন যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। গলা ব্যথা হলে তা নিরাময়ে বেছে নিতে পারেন ঘরোয়া কিছু উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক উপায়গুলো-
হলুদ -দুধ
গলার ব্যথা কিংবা বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলুদ দুধের জুড়ি মেলা ভার। স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী হলুদ দুধ নিয়মিত রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে স্বাস্থ্যের খুবই উন্নতি হয়। এছাড়া গলায় যদি খুব ব্যথা হয় কিংবা গলা বসে যায়, তাহলে এক গ্লাস গরম দুধে দু চিমটে হলুদ দিয়ে তা রাতে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গলার ব্যথা সারার পাশাপাশি বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
আদা গলার সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকরী । আদা টুকরো করে অথবা আদার রস করে সেবনে গলার সমস্যা থেকে খুব সহজেই আরাম পাওয়া যায়। আদা-য় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি গলা ব্যথা সারাতে সহায়তা করে। পানি গরম করে তাতে কয়েক টুকরো ফ্রেশ আদা দিন। এরপর, এটি প্রায় ৫-১০ মিনিটের জন্য ফোটান। দিনে কমপক্ষে দু'বার এই পানি পান করুন। এতে এক চা চামচ মধুও যোগ করতে পারেন।
লবণ পানিতে গার্গল
গলা থেকে জীবাণু দূর করার এই পদ্ধতির সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত, আর তা বেশ কার্যকরও বটে। তবে এর সুফল পেতে হলে টানা তিন থেকে চার দিন গার্গল করতে হবে। যদিও এই পদ্ধতিতে রোগজীবাণু বিশেষ করে করোনাভাইরাস ধ্বংস হয় কি-না তার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। তবে অস্বস্তি যে দূর করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও লবণ পানি দিয়ে গার্গল করার উপকারিতা আছে।
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা টেবিল-চামচ লবণ গুলে নিলেই আপনার কাজ শেষ। এখন শুধু গার্গল করতে হবে। তবে পানি গিলে ফেলা যাবে না। দিনে দুই থেকে তিনবার গার্গল করতে হবে। সুফল পেতে নুন্যতম তিন দিন করে যেতে হবে।
আপেল সাইডার ভিনেগার
এককাপ গরম পানির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার দিন। এবার সেই পানিতে গার্গল করুন। অল্প অল্প করে ঘণ্টায় ২-৩ বার এভাবে করুন। গার্গল করার মাঝের সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম পাবেন। কারণ আপেল সাইডার ভিনেগারে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এটি একাধিক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। অম্লীয় ধরনের হওয়ার কারণে এটি গলায় শ্লেষ্মা জমতে বাধা দেয়। সেইসঙ্গে রোধ করে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারও।
শুধু রান্নায় নয়, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার দাওয়াই হলো গোলমরিচ। বিশেষ করে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয় এতে থাকা উপাদান। গোলমরিচে মেন্থল বৈশিষ্ট্য আছে। যা পাতলা শ্লেষ্মা, গলা ব্যথা ও কাশি থেকে তাৎক্ষণিত স্বস্তি দেয়। এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্যও আছে। যা বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে। আস্ত গোলমরিচের দানা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে পান করলে দ্রুত গলা ব্যথায় স্বস্তি মিলবে।
মধুতে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বহু সমস্যার সমাধান করতে পারে । এমনকী কমাতে পারে গলা ব্যথাও। তাই এককাপ গরম পানিতে এক থেকে দুই চামচ মধু মেশান এবং দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চা চামচ মধু খেতে পারেন। গলা ব্যথা দূর হবে।
মেথির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। গলা ব্যথা সারাতে মেথি বীজ হতে পারে দুর্দান্ত এক প্রতিকার। মেথি বীজ বা তেল এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। গলা ব্যথা ও ফোলাভাব সারাতে মেথি চা পান করলে আরাম মিলবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি ব্যথা উপশম করতে পারে। কারণ এতে আছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা ক্ষতিকর ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী নারীদের উচিত মেথি এড়িয়ে চলা।
আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে লেবু বেশ কার্যকরী। গলা ব্যথা হলে একগ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। দিনে অন্তত দুইবার পান করুন। গলা ব্যথা ও টনসিলের সমস্যা দূর হবে দ্রুত।
রসুনে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এতে আরও আছে অ্যালিসিন নামক একটি অর্গানসালফার যৌগ। যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রসুন খেলে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি মেলে। তাজা রসুনে আরও আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য।
গলা ব্যথার পাশাপাশি এই সময়টায় অনেকের গলা খুসখুস করে। এবার এই সমস্যার সমাধান হল পুদিনা। এর মাধ্যমে গলা পরিষ্কার হয়ে যায়। চাইলে পুদিনা পাতা দিয়ে কুলিকুচি করতেও পারেন। আবার চাইলে খেতেও পারেন এই পাতা।
কয়েক ফোঁটা দারুচিনি তেলের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে দিনে একবার এটি ব্যবহার করুন, গলা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তিতে সহায়তা করবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
গলাব্যথা হলে চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়াই অনেকে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন। এটি একদমই ঠিক নয়। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনির সমস্যার মতো দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ আছে, তাঁদের জন্য যেকোনো ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ লাগবেই। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে যখন—
• শ্বাসকষ্ট হলে
• ঢোক গিলতে কষ্ট হলে
• মুখ হা করতে এবং খাওয়া-দাওয়া করতে অসুবিধা হলে
• জ্বরের মাত্রা ১০১°ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে হলে
• ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে
• কানে ব্যথা হলে
• থু থু বা কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে
• গলার ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি সময় দীর্ঘ হলে
• গলার স্বরের পরিবর্তন হলে।