শীতকালীন বিভিন্ন রোগ ও করণীয় - Various winter diseases and what to do
Winter sickness

শীতকালীন নানা রোগব্যাধি এবং এর প্রতিকার-Winter diseases and their remedies

শীতে মৌসুমী ফ্লু থেকে শুরু করে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কারণ এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শীতে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। শীতের সময় কমন অসুখ হলো সর্দিজ্বর, কাশি। এ ছাড়া নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, অ্যালার্জি, চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, খুশকি, খোসপাঁচড়া বা চর্মরোগ প্রভৃতিরও প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।

তবে শীত সামনে রেখে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে এসব রোগের জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সর্দি-কাশি-জ্বর

সর্দি-কাশি-জ্বর বা কমন কোল্ড শীতের সময়কার একটি সাধারণ রোগ। সর্দিজ্বর দেহের শ্বাসনালির ভাইরাসজনিত এক ধরনের সংক্রমণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেশি দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যাদের কম তাদের এ রোগ বেশি হয়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এসব রোগ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। সর্দিজ্বর হলে প্রথমে নাকে ও গলায় অস্বস্তি লাগে, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধও থাকতে পারে। মাথাব্যথা, মাথা ভারী বোধ হওয়া, শরীরে ব্যথা, জ্বর, গলাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গও দেখা যায়।

সর্দি-কাশি-জ্বর প্রতিরোধে করণীয় হলো :

♦ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশায় সতর্কতা অবলম্বন করুন।

♦ হাঁচি দেওয়ার সময় বা নাকের পানি মুছতে রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন।

♦ রোগীর ব্যবহৃত রুমাল বা গামছা অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখুন। যেখানে সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেষ্মা ফেলা যাবে না।

♦ স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করতে হবে।

♦ প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পড়ুন, বিশেষ করে তীব্র শীতের সময় কান ঢাকা টুপি এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করুন।

♦ তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

♦ মাঝেমধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন বা হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

নিউমোনিয়া

এটি একটি মারাত্মক অসুখ। নিউমোনিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগে। পৃথিবীব্যাপী পাঁচ বছরের নিচের শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। বাংলাদেশেও শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ এ রোগটি। যদিও এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য একটি রোগ, তথাপিও মৃদু বা হালকা নিউমোনিয়া থেকে জীবনহানিও হতে পারে।

নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে কিছু করণীয় হলো :

♦ সব সময় শিশুর সঠিক যত্ন নিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, বিশেষ করে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

♦ শীত উপযোগী হালকা ও নরম গরম কাপড় ব্যবহার করুন।

♦ সহনীয় গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান।

♦ বেশি মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ লোক, বিশেষ করে হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত লোকের সামনে শিশুদের যেতে দেবেন না।

♦ সুস্থ শিশুকে সর্দি-কাশি, ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর কাছে যেতে দেবেন না।

♦ শিশুর সামনে বড়দের হাঁচি-কাশি না দেওয়া বা মুখে রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করার অভ্যাস করান।

♦ সব সময় নাক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।

♦ চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন।

♦ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ গ্রহণ করুন।

♦ ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

অ্যাজমা

হাঁপানি বা অ্যাজমাজাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগ শুধু শীতকালীন রোগ নয়, তবে শীতে এর প্রকোপ অনেকাংশে বেড়ে যায়। অ্যাজমা একবার হলে এর ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয় সারা জীবনই। তবে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে জটিলতা বা ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। এ জন্য কিছু করণীয় হলো :

♦ অ্যাজমার রোগীরা শীতে পর্যাপ্ত গরম জামা-কাপড়ের বন্দোবস্ত করুন।

♦ ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে শোবারঘরটি উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন।

♦ অ্যাজমার ট্রিগারগুলো জেনে সতর্কভাবে চলুন।

♦ শীতের আগেই চিকিৎসককে দেখিয়ে ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন।

চর্মরোগ

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে শুষে নেয় পানি। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে দুর্বল। ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি ঠিকমতো ঘাম বা তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আস্তে আস্তে আরো শুষ্ক, ফাটল ধরে ও দুর্বল হয়। একসময় ত্বক ফেটে যায়। শীতের সময় নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। বিশেষ করে ঠোঁট, হাত ও পায়ের ত্বকে দেখা দেয় চুলকানি, একজিমা, স্ক্যাবিস, চর্মরোগ প্রভৃতি। এ ছাড়া মাথায় প্রচুর খুশকি দেখা যায়। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয় হলো—

♦ অলিভ অয়েল ত্বকে আলাদা আস্তর তৈরি করে বলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শীতের সময় তাই অলিভ অয়েল বা লুব্রিকেন্টজাতীয় কিছু ব্যবহার করুন।

♦ খুশকি দূর করতে অন্য সময়ের চেয়ে শীতে বেশি করে চুল শ্যাম্পু করুন।

♦ হাত ও পায়ের তালু এবং ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে দিন। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার যেমন : ভ্যাসেলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করুন।

♦ বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না বা কড়া আগুনে তাপ পোহাবেন না। এতে চামড়ায় সমস্যা তৈরি হতে পারে।

নাক-কান-গলার অসুখ

এসব সমস্যাও শীতে বাড়ে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নবজাতক, শিশু, বৃদ্ধ ও ধূমপায়ীর। শীতকালে নাকের দুই পাশের সাইনাসে ইনফেকশন দেখা দেয়, একে বলে সাইনোসাইটিস। কারো সাইনোসাইটিস দেখা দিলে নাকের দুই পাশে ব্যথা ও মাথাব্যথা হতে পারে। অ্যালার্জি, ঠাণ্ডা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সমস্যাগুলো থেকে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। কারো যদি অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে জেনে নিতে হবে অ্যালার্জির কারণ। যাতে সতর্ক হয়ে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পাশাপাশি ধূমায়িত এবং দূষিত পরিবেশ পরিত্যাগ করে চলা, ধূমপান পরিত্যাগ করা, ঘুমানোর সময় মাথা উঁচু রাখা (যাতে সাইনাস নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে পারে), নাকে খুব জোরে আঘাত লাগতে না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

যাঁদের গলা ব্যথা, স্বরভঙ্গ, কণ্ঠনালির নানা সমস্যাসহ টনসিলের প্রদাহ বা টনসিলাইটিস রয়েছে, তাঁরা লবণ মেশানো হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম পাবেন। ঠাণ্ডা পানি পরিহার করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন এবং গলায় গরম কাপড় বা মাফলার জড়িয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করলে ভালো থাকা যায়। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ও সর্দি-কাশি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা উচিত।

বাতব্যথা

আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা শীতের সময় বেড়ে যায়। মূলত বয়স্কদেরই এ সমস্যা হয় বেশি। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াসিটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের সময় চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। বাতব্যথা প্রতিরোধে করণীয় হলো—

♦ যথাসম্ভব গরম উত্তাপে থাকুন।

♦ সব সময় হাত ও পায়ের মোজা পরিধান করুন।

♦ ব্যয়াম ও খাদ্যাভাসের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে আনুন।

♦ একটানা অনেকক্ষণ বসে না থেকে যতটুকু সম্ভব ঘরেই হালকা মুভমেন্ট করুন।

♦ প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করুন।

♦ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

♦ গরম ছেঁক দিন বা ফিজিওথেরাপি নিন।

তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ

ভারতের সেরা টেস্ট টিউব বেবি হাসপাতাল-Top IVF hospitals in India
কিভাবে কিডনিতে পাথর থেকে মুক্তি পাবেন
যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখবেন যেভাবে
পানিশূন্যতায় নারীস্বাস্থ্যের যেসব সমস্যা হয় - Women's health problems due to dehydration
দ্রুত বীর্য পাতের চিকিৎসা
ভারতের সেরা নিউরোলজিস্ট
যক্ষা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকা, বরিশাল
গোপনাঙ্গ ফর্সা করার টিপস - Tips for grooming private parts
দাঁতের শিরশির ভাব দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to get rid of toothache