
চোখের অ্যালার্জির কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা-Eye Allergies: Causes, Symptoms and Treatment
অন্যান্য অ্যালার্জির মত চোখের অ্যালার্জিতে মানুষ তখনই আক্রান্ত হয় যখন তার শরীরের ইমিউন সিস্টেমে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। চোখের পিউপিল বা কালো মণির চারদিকে যে সাদা অংশ থাকে সেই অংশের আবরণের নাম কনজাংটিভা।
অ্যালার্জি জনিত কারণে কনজাংটিভার প্রদাহকে চুলকানি রোগ বলা হয়। যে সব দ্রব্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় এলারজেন। আমাদের ঘরে বাইরে চারপাশে প্রচুর অদৃশ্য পদার্থ আছে, এসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলারজেন থেকেই চোখের অ্যালার্জি হতে পারে, ধুলোবালি, বিভিন্ন খাবারের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি এর মধ্যে অন্যতম। শুষ্ক মৌসুমে শুধু চোখের না বরং অন্যান্য অ্যালার্জিও বেশি হয়ে থাকে। তবে এটা জেনে রাখা ভালো যে সব অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থেই সবার চোখে অ্যালার্জি হয় না। যাদের শরীরে অ্যালার্জি বেশি হয়, তাদের চোখের অ্যালার্জিও বেশি হয়। হাঁপানি রোগী, শিশু এবং যারা বাইরে ধূলোবালির সংস্পর্শে বেশি থাকে, তাদের মধ্যে চোখের অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। শুনে হয়ত অবাক হবেন যে মাথায় খুশকি থাকলেও চোখের অ্যালার্জিতে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।
এলার্জির প্রকারভেদ
এলার্জি নানা ধরনের হয়ে থাকে, যেমন :
* স্কিন এলার্জি
* ল্যাটেক্স এলার্জি,
* ফুড এলাজি,
* পোলেন এলার্জি,
* ঠান্ডা জনিত এলার্জি,
* ডাস্ট এলার্জি সহ আরো নানান ধরনের এলার্জি।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা
২ ধরনের অ্যালার্জি দেখা যায় । সিজেনাল আর বারোমেসে।
১) সিজেনাল
সিজেনাল অ্যালার্জি বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে হয়ে থাকে বিশেষ করে শরৎ কালে আর বসন্তকালে। এসব সময়ে এলারজেন যেমন ঘাস, গাছ থেকে পরাগ রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ছত্রাক থেকে স্পোরও বাতাসে ছড়িয়ে আমাদের চোখের অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২) বারোমেসে
বর্ষজীবী অ্যালার্জি সারা বছরই হয়ে থাকে। সাধারণত ধূলোবালি, পাখির পালক, পশুর গায়ের লোম, ধোঁয়া, ক্লোরিন, কসমেটিকস, পারফিউম ইত্যাদিও চক্ষু অ্যালার্জির জন্য দায়ী।
চোখের অ্যালার্জি সমস্যা হলে লক্ষণসমূহ
০১. চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
০২. চোখে চুলকানি হওয়া আর অনবরত পানি পড়া।
০৩. চোখ খচখচ করা মানে চোখের ভেতর কিছু ময়লা পড়েছে এমন বোধ হওয়া।
০৪. চোখ ফুলে যাওয়া
চোখের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
তবে অনেকের ক্ষেত্রে শুধু অ্যালার্জেনেই অ্যালার্জি হয় না, যাদের শরীরে অ্যালার্জির মাত্রা বেশি তাদের চোখও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। এভরিডেহেলথ ডটকমের এক প্রতিবেদনে অ্যালার্জি থেকে মুক্ত থাকার কিছু ঘরোয়া উপায় উঠে এসেছে।
গোলাপজল
গোলাপজল চোখের অ্যালার্জির প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করে। চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ৩ ফোঁটা গোলাপজল দিয়ে দিন। এতে যে ইনফেকশনের কারণে চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে সেটি কেটে যায়। গোলাপজল দেয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখুন। খোলা রাখলে তরলটি বেরিয়ে যাবে। তখন পুরোপুরি কাজ হবে না।
লবণপানি
এক গ্লাস পানি নিন। এতে ৩ চা চামচ পরিমাণ লবণ গুলিয়ে পানিটি ভালোমতো ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে, সেই পানিতে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে চোখগুলো ধীরে ধীরে মুছে দিন। এতে চোখে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি থেকেও আরাম মিলবে।
ঠান্ডা পানি
কথায় আছে পানির অপর নাম জীবন। চোখের অ্যালার্জির ক্ষেত্রেও ঠান্ডা পানি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অ্যালার্জির কারণে চোখ ফুলে গেলে, লাল হলে বা চুলকালে বারবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।
আমলকী পাউডার করে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই পাউডারের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীর অ্যালার্জেনমুক্ত থাকবে।
সায়েনি
সায়েনি এক ধরনের হার্ব। এটি অনেকটা মরিচের মতো দেখতে। সায়েনি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার পাশাপাশি টক্সিন রিলিজ করতেও সহায়তা করে। চোখের ময়লা দূর করতে এর ভূমিকা রয়েছে।
সানগ্লাস
যদি আপনার অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কোথাও বের হওয়ার আগে সানগ্লাস পরে বের হবেন। বিশেষ করে যেখানে বাস করেন সেটি যদি ধুলাবালিপূর্ণ এলাকা হয় তাহলে চোখকে ডাস্ট অ্যালার্জিমুক্ত রাখতে সানগ্লাসের জুড়ি নেই।
পরিচ্ছন্নতা
ঘর এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। যাতে ধুলাবালি না ওড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টিভি, মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটারের সামনে টানা বসে থাকবেন না। আর চোখ চুলকালে আঙুল দিয়ে রগড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
চোখের এলার্জি ঔষধ এর নাম এবং দাম
চোখে এলার্জির সবচেয়ে কার্যকরী কয়েকটি ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো:
Alarid – এ্যালারিড
Olpadin – অল্পাডিন
Alercon – এ্যালারকন
Patadin – প্যাটাডিন
এই ড্রপ গুলো চোখের এলার্জি দূর করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে।
উল্লেখিত ঔষধ গুলোর মূল্য এবং সঠিক ব্যবহার বিধি নিচে উল্লেখ করা হলো:
Alarid – এ্যালারিড
এ্যারিড এই ড্রপটি চোখের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী। চোখে এলার্জি হলে এটি ব্যবহারে কয়েক মিনিটের মধ্যে চোখের চুলকানি বন্ধ হয়ে যাবে। এই ড্রপটি একাধারে ৬/৭ দিন ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ড্রপটি ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এই ড্রপটির মূল্য ১৫০ টাকা।
Olpadin – অল্পাডিন
অল্পাডিন এই ড্রপটি চোখের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। যাদের চোখে এলার্জির কারনে অতিরিক্ত মাত্রায় চুলকানি হয় এবং চোখ দিয়ে পানি পরে তাদের জন্য এই অল্পাডিন ড্রপ খুবই কার্যকরী একটি ড্রপ। এটি একাধারে ৬/৭ দিন ব্যবহার করতে হয়। এটি দিনে ২/৩ বার ব্যবহার করতে হয়। এটি ব্যবহারে চোখে হালকা ব্যাথ্যা অনুভব হয়। এই ড্রপটির মূল্য ১০০ টাকা।
Alercon – এ্যালারকন
যেসকল রোগীরা এলার্জির কারনে তাদের চোখ চুলকাতে চুলকাতে লাল করে ফেলে এবং চোখ দিয়ে অনাবরত পানি পরতে থাকে তাদের এই ড্রপটি ব্যবহার করে হয়। এই ড্রপটি দিনে একবার এক ফোটা করে ৫/৬ দিন ব্যবহার করতে হবে। তবে আপনার চোখে এলার্জির তীব্রতা কতটা তার উপর নির্ভর করে এর ডোজ বাড়াতে বা কমাতে হতে পারে। এই ড্রপটির মূল্য ৯০ টাকা।
Patadin – প্যাটাডিন
এই ড্রপটিও চোখের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের চোখ থেকে অনাবরত পানি পরতে থাকে তাদের জন্য এই ড্রপটি বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। এই ড্রপটি দিনে তিন বার দুই ফোটা করে ব্যবহার করতে হবে। এটি একাধারে ৬/৭ দিন ব্যবহার করতে হবে। এই প্যাটাডিন ড্রপটির মূল্য ১৬০ টাকা।
স্থান এবং সময় বেধে ঔষধ গুলোর উল্লেখিত মূল্যের কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন