পেট কামড়ানোর ঘরোয়া চিকিৎসা
পেটে ব্যথা এবং পেটে মোচড় সাধারণ বিষয়। প্রচুর মানুষ পেটের সমস্যায় ভুগছেন। এর অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকজ্বালা, গ্যাস ইত্যাদি। তবে পেটে ব্যথার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে যা বিপজ্জনক হতে পারে। পেটের আলসার, পাথর বা অ্যাপেনডিক্সেও ব্যথা হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন যে গরম এবং খাবারের কারণে পেটে ব্যথা হচ্ছে, তাহলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনি এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর জন্য ওষুধের সাহায্যও নিতে পারেন, তবে ঘরোয়া প্রতিকারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। এই পরিস্থিতিতে, আপনি এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্বস্তি পেতে পারেন।
পেট কামড়ানো রোগ বা আইবিএস কি
আইবিএস অনেকের কাছেই পরিচিত একটা সমস্যা। পেটে কামড় দিয়ে বারবার টয়লেটে যাওয়া, পেটে প্রায়ই গ্যাস হওয়া, কারও কারও কোষ্ঠকাঠিন্য, কারও ডায়রিয়া, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে দুটি সমস্যাই থাকে। পায়খানার সঙ্গে বিজল, মিউকাস বা আম যায়। সব মিলিয়ে এটি পেটের একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। আবার কেউবা মনে করেন গ্যাস্ট্রিক হয়েছে। কেউ মনে করেন পেটে বড় একটা রোগ হয়েছে। এ রোগ সহজে নিরাময় হয় না। রোগীরা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করেন। অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও কোনো রোগ ধরা পড়ে না। এটি আইবিএস রোগ। একে ফাংশনাল ডিজিজ বলে।
পেট কামড়ানোর লক্ষণ
খাবার খাদ্যনালি থেকে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যথলি বা পাকস্থলীতে পৌঁছে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন বিপাকের মাধ্যমে দেহে খাদ্য শোষিত হয়ে অপাচ্য অংশ দেহ থেকে মল আকারে বের হয়ে যায়। এই নালিতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে গ্যাস, পেটে ব্যথা, টয়লেটে সমস্যাসহ বিভিন্ন বিব্রতকর সমস্যায় রোগীরা পড়েন। এটি মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এতে রোগী কষ্ট পায়; কিন্তু শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। এটি শরীরকে ভেঙে ফেলে না। কোনো কোনো খাবারে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার, বিভিন্ন ধরনের শাক, কারও কারও বাঁধাকপি খেলে এ লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। রোগীর যে খাবার খেলে সমস্যা হয়, রোগী সে খাবারগুলো পরিহার করবে। স্টেস বা দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ এই রোগকে বাড়িয়ে দেবে। তাই চেষ্টা করুন এ রোগ নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হতে। রিল্যাক্স থাকুন এবং সুষ্ঠু জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করুন। ডাক্তারের পরামর্শে এ রোগের কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খেয়ে ভালো থাকা যায়। এ উপসর্গের সঙ্গে যদি পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, ওজন অতিরিক্ত কমে যায়, ঘন ঘন বমি হয়, টয়লেট হওয়ার পরও পেট ব্যথা অনেকক্ষণ ধরে থাকে। এ উপসর্গগুলো থাকলে আইবিএস না হয়ে অন্য কোনো গুরুতর রোগ হতে পারে।
পেট কামড়ানো ঘরোয়া চিকিৎসা
মৌরি
অনেক সময় পেটে গরমের কারণে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এর জন্য মৌরি ব্যবহার করতে পারেন। মৌরিতে এমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব থাকলেও মৌরি উপকারী। এক কাপ জলে এক চা চামচ মৌরির দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার জল ঠান্ডা হলে ফিল্টার করে পান করুন। আপনি চাইলে এতে মধুও যোগ করতে পারেন। দিনে দুই-তিনবার এভাবে করলে ব্যথা উপশম হবে।
আপেল
আপেল বুকজ্বালা ও অ্যাসিড কমাতে কাজ করে। ফলে খাবারের বিষক্রিয়া প্রতিকারে আপেল বেশ সহায়ক। তাছাড়া এই ফলে থাকা এক ধরনের এনজাইম ডায়রিয়া ও পেট ব্যথার জন্য দায়ী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি দমিয়ে রাখতে পারে।
এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা রোগ নিরাময়ে এবং খাবারের বিষক্রিয়ার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কয়েকটি কলা ও আপেল চটকে খেতে পারেন অথবা 'বানানা শেইক' খাওয়া যেতে পারে।
লেবুর টক খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে লেবুর রসের সঙ্গে এক চিমটি চিনি মিশিয়ে বা লাল চায়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি হজম সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে আদা বেশ কার্যকারী। ১ টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা আদার রস মিশিয়ে খেলে খাদ্য বিষক্রিয়া জনিত প্রদাহ ও ব্যথা কমে যায়।
জিরা পেটের প্রদাহ উপশম করাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। ১ টেবিল-চামচ জিরাগুঁড়া সুপের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
বাজিল পাতা
পেট ও গলার সংক্রমণ নিরাময়ে বাজিল পাতা চমৎকার কাজ করে। এক টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে কয়েক ফোটা বাজিলের রস মিশিয়ে খেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সুফল পাওয়া যায়। বাজিল না পেলে তুলসীপাতা ব্যবহার করতে পারেন।
পানি
ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি বা এই ধরনের খাবার জনিত সমস্যা হলে বেশি করে পানি পান করা খুব জরুরি। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এছাড়া শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ও ব্যাকটেরিয়া বের করে দেওয়াসহ তাড়াতাড়ি রোগ নিরাময়ে পানি বেশ কার্যকর। পাশাপাশি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্যও পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
ভিনেগারের ক্ষারীয় উপাদান, বিশেষ করে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার অন্ত্র উপশমে সাহায্য করে। পাশাপাশি পেটে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে বাধা দেয় আর সেরে উঠতে সাহায্য করে।