
ত্বকের অ্যালার্জির লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা-skin allergy Symptoms, Diagnosis & Treatment
স্কিন এলার্জির খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা। জীবন যাপনে সামান্য এদিকসেদিক হলে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। অনেকের চোখ লাল হয়ে যায়। অনেকের আবার তোকে লালচে দানা ওঠে। হালকা ধুলোবালির সংস্পর্শে আসতে পারেন না। এলার্জির কারণে চরমভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই যাদের অ্যালার্জি আছে তারাই বুঝতে পারে এলার্জির জ্বালা কতটুকু। আবার অনেকের এমন এলার্জি আছে যেগুলো কোনো বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল। যেমন হতে পারে তা কোন অলংকার, প্রসাধন সামগ্রী, সাবান ডিটারজেন্ট, রাসায়নিক বস্তু, দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রী। অনেক বস্তুর সংস্পর্শে আসলেই এলার্জি দেখা দিতে পারে।
যেহেতু আমাদের মধ্যে অনেকেই স্কিন এলার্জির সমস্যায় ভুগতেছেন এবং তারা স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাই আজকের আর্টিকেল আমরা আলোচনা করব স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়।
স্কিন এলার্জির কারণ
এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় জানার আগে আমরা জেনে নিব এলার্জি হওয়ার কিছু কারণ। এই কারণগুলো থেকে যদি আমরা দূরে থাকতে পারি তাহলেও এলার্জি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
* পরিষ্কার পরিছন্নতা
* সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুলে রং করা অথবা শরীরে ট্যাটু করা
* ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফল
* ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে
* পোকামাকড় কামড়ালে এলার্জির আক্রমণ হতে পারে
* বায়ু দূষণের কারণে এলার্জি হতে পারে
* আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এলার্জি হতে পারে
স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
পরিষ্কার পরিছন্নতা
আমরা যখন প্রতিনিয়ত বাহিরে যাই তখন বাহির থেকে অনেক ধুলোবালি ময়লা এবং রোগজীবাণু আমাদের সাথে আমাদের ঘরে পৌঁছে। এইসকল রোগজীবাণু এবং ধুলা-ময়লা আমাদের এলার্জি তৈরির পেছনে কাজ করে। তাই এলার্জি থেকে বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আপনি যে বিছানায় ঘুমানো মাসে অন্তত একবার সেই বিছানার চাদরটি ধৌত করতে হবে। আপনার কাপড় চোপড় রোদে শুকানো লাগবে। তারপর আপনার শোবার ঘর এবং বাথরুম সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
মাস্ক ব্যবহার করা
এই শহরের ধুলাবালি এবং ময়লা থেকে বাঁচতে আপনাকে মাক্স ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আপনি সর্দি-কাশি থেকেও বেঁচে থাকতে পারবেন। আমরা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করে থাকি। এটি আমাদের এলার্জি থেকেও রক্ষা করবে। এমন মাস্ক ব্যবহার করুন যেটি আপনাকে ধুলাবালি থেকে শতভাগ নিশ্চয়তা দেবে।
পানি পান করুন
আমাদের খাদ্য হজম থেকে যাবতীয় শরীরবৃত্তীয় কাজে পানি প্রচন্ডভাবে সহায়তা করে। আমরা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য যে পানি পান করি তা অনেক রোগ দূর করে থাকে। শুধু পানি নয় আপনি চাইলে বিভিন্ন ফলের জুস খেতে পারেন যেগুলো আপনার শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করবে।
কর্পূর এবং নারিকেল তেল
যদি আপনার শরীরে এলার্জি হয় এবং প্রচন্ড চুলকানি থাকে তবে সেই জায়গায় কর্পূর এবং নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। কর্পূর এবং নারিকেল তেল আপনার এলার্জিজনিত চুলকানি থেকে অনেকটাই উপশম করবে।
ফিটকিরি
ফিটকিরির জল দিয়ে যে জায়গাটাতে এলার্জি হয়েছে সেই জায়গাটা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। দেখবেন এলার্জি কিছুটা উপশম হয়েছে। তারপর কর্পূর এবং সরিষার তেল সেই জায়গায় লাগাতে থাকুন।
আমরা সবাই জানি মধু আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে যে কয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি তার মধ্যে মধু একটি উত্তম উপাদান। এলার্জি বিশেষজ্ঞগণ আমাদেরকে প্রতিনিয়ত মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এলার্জি মধু একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।
অ্যালোভেরা জেল একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক প্রাকৃতিক নিরাময় অংশগ্রহণ করে। অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিয়ে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে পেস্ট তৈরি করে নিন। আক্রান্ত স্থানে এলোভেরা জেল কে ভালভাবে লাগিয়ে নিন। 30 মিনিট পর এলোভেরা জেল থেকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। কিছু এভাবে এলোভেরা জেল কে যদি আপনাদের আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন তাহলে ভালো হয় একটি ফলাফল পাবেন বলে আশা করি।
ঠাণ্ডা পানিতে গোসল
যখন অনেক বেশি চুলকানি হয় তখন আপনারা ঠাণ্ডা পানিতে একটি গোসল সেরে নিতে পারেন। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়। এর ফলে হিস্টামিন বের হতে পারে না। এতে আপনার তীব্র এলার্জির কিছু পাবে এবং স্বস্তি অনুভব করবেন। এটা হচ্ছে অ্যালার্জি নিবারণের একটা দ্রুততম উপায় কিন্তু স্থায়ী পদ্ধতি নয়।
অলিভ অয়েল
স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অলিভ অয়েলের ব্যবহার। অলিভ অয়েল ব্যবহার করে সহজেই স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আপনার হিসেবে ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল আপনাদের এলার্জি রাশির সহায়তা করবে।
নিম পাতা হল বিভিন্ন রকমের রোগের ঔষধ। স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতার ব্যবহার এর জুড়ি মেলা ভার। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ তারা এলার্জিতে নিমপাতা ব্যাবহার করলে ভাল কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
যারা প্রচুর পরিমাণ তাজা শাক-সবজি, ফল ইত্যাদি খায় তাদের এলার্জির লক্ষণ অনেকটাই কম। যেহেতু গবেষকরা এখনো এলার্জির কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারপরেও সুষম খাবার আপনাকে সকল ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে রাখবে। তাই প্রচুর পরিমাণে তাজা শাকসবজি গ্রহণ করুন এবং ফলমূল খান।
স্কিন এলার্জি ঔষধ এর নাম এবং দাম
স্কিন এলার্জির সবচেয়ে কার্যকরী ঔষুধ গুলোর নাম উল্লেখ করা হলো :
Rupadin – রোপাডিন
Oradin – ওরাডিন
Alatrol 10 – এ্যালাট্রল ১০
Vitamin A & Zinc – ভিটামিন-এ এবং জিঙ্ক
Antioxidant – এন্টিঅক্সিডেন্ট
নিচে ঔষধ গুলোর মূল্য এবং ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হলো :
Rupadin – রোপাডিন:
রোপাডিন এই ট্যাবলেটটি রাতে ঘুমানোর আগে একটি সেবন করতে হয়। এটি ত্বকের এলার্জি দূর করার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। একটি রোপাডিন ট্যাবলেটের মূল্য ১২ টাকা। এই ট্যাবলেটটি একাধারে ১২/১৫ টি সেবন করতে হবে।
Oradin – ওরাডিন:
ওরাডিন এই ট্যাবলেটটি সকালে ও রাতের খাবার খাওয়ার পর সেবন করতে হয়। এটি ত্বকের অনেক পুরাতন এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটি ওরাডিন ট্যাবলেটের মূল্য ৪ টাকা। এই ট্যাবলেটটি একাধারে ১৫/১৮ টি সেবন করতে হবে।
Alatrol 10 – এ্যালাট্রল ১০:
এ্যালাট্রল ১০ এই ট্যাবলেটটি সকালে ও রাতের খাবার খাওয়ার পর সেবন করতে হয়। এটিও ত্বকের অনেক পুরাতন এলার্জি এবং যেকোনো ধরনের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটি এ্যালাট্রল ১০ ট্যাবলেটের মূল্য ৩ টাকা। এই ট্যাবলেটটি একাধারে ১৫/২০ টি সেবন করতে হবে।
Vitamin A & Zinc – ভিটামিন-এ এবং জিঙ্ক:
ভিটামিন-এ এবং জিঙ্ক আমাদের ত্বকের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। ভিটামিন-এ এবং জিঙ্ক এর একটি ট্যাবলেটের মূল্য ৩-৫ টাকা। এই ট্যাবলেটটি সকালে এবং রাতের খাবার খাওয়ার পর সেবন করতে হবে। এই ট্যাবলেটি একাধারে ১৫/২০ টি সেবন করতে হবে।
Antioxidant – এন্টিঅক্সিডেন্ট:
এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আমাদের ত্বকের এলার্জি দূর করতে খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। এন্টিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেট ও সিরাপ উভয়ই পাওয়া যায়। বাজারে বিভিন্ন নামে এন্টিঅক্সিডেন্টের ট্যাবলেট এবং সিরাপ পাওয়া যায়। একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেট ৩-৬ টাকা। এটি একাধারে ১০/১২ দিন দিনে দুই বেলা খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে।