আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা- home treatment for dysentery
Dysentery

আমাশয় রোগ সারাতে ২০ টি ভেষজ চিকিৎসা

আমাশয় (ইংরেজি:  Dysentery) মানব অন্ত্রে রোগজীবাণুর সংক্রমণজনিত রোগ। সাধারণত এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা (Entamoeba histolytica) কিংবা শিগেলা (Shigella) গণভুক্ত ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রে সংক্রমণ করলে এই রোগ হয়। আমাশয়ের প্রথম লক্ষণ হল দিনে ৩ থেকে ৮ বারের মতো তরল বা নরম অস্বাভাবিক মলত্যাগ হওয়া। আমাশয় রোগের বিকাশের সাথে সাথে আপনার পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে এবং দিনে ১০০ বারের বেশি মলত্যাগের বেগ হতে পারে।

আমাশয়ের প্রকারভেদ

আমাশয় দুই প্রকার যেমন অ্যামিবিক আমাশয় এবং ব্যাসিলারি আমাশয়। প্রতিটি ব্যক্তির উপর আমাশয়ের নিজস্ব প্রভাব আছে। আপনি যখন সঠিকভাবে আমাশয় প্রকারভেদ নির্ণয় করতে পারবেন, তখন খুব সহজেই আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।

১. অ্যামিবিক আমাশয়

অ্যামিবিক আমাশয় সাধারণত নেশাজাতীয় খাবার বা জল খাওয়ার কারণে হয় এবং লক্ষণগুলি খুব বেদনাদায়ক হতে পারে। যাইহোক, যখন আপনার অ্যামিবিক আমাশয় হয় তখন আপনি যেমন অনুভব করবেন তা হল-

পেটে প্রচণ্ড ব্যথা

বমি বমি ভাব এবং বমি

শ্লেষ্মা সহ রক্ত ​​বেদনাদায়ক মল

ক্লান্তি

২. ব্যাসিলারি আমাশয়

ব্যাসিলারি আমাশয় খুব বিপজ্জনক হতে পারে। এটি সংক্রমণের ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। ব্যাসিলারি আমাশয় প্রথম লক্ষণ হল ডায়রিয়া। এখানে ব্যাসিলারি আমাশয়ের কিছু লক্ষণ রয়েছে।

গতি পাস করার সময় রক্ত

পেটে প্রচণ্ড ব্যথা

মাত্রাতিরিক্ত জ্বর

বমি বমি ভাব এবং বমি

আমাশয় রোগের ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা

১.বেত ফল:

বেত ফলের মধ্যে প্রোটিন, পটাসিয়াম এবং পেকটিন থাকে। পাশাপাশি থায়ামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি জাতীয় পুষ্টি থাকে বেতের ফলগুলোতে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং ট্যানিন জাতীয় যৌগগুলোও বেশি থাকে। যা আমাশয় রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যাদের পুরনো আমাশয় আছে তারা এই বেত গাছের শাঁস নিয়মিত খেতে পারেন। এতে করে চিরতরে আমাশয় সেরে যাবে।

২.হলুদ:

আমাশয়র সমস্যা হলে লোপেরামাইড, অ্যামিট্রিপটাইলিন, অ্যান্টিবায়োটিক রিফ্যাক্সামিনের মতো ওষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে জীবনযাপন ও খাদভ্যাসে পরিবর্তন এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ খেলে আইবিসের সমস্যা ৬০ শতাংশ কমে যায়। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে ৩০০-৪০০ মিলিগ্রাম হলুদ খেতে পারেন।

৩.থানকুনি পাতা:

আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর করতে হলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। এমনটা টানা সাত দিন যদি করতে পারেন, তাহলেই কেল্লাফতে! এই ধরনের সমস্যা কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রনটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

৪.আদা চা

আদা একটি অলৌকিক মশলা যা অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটির বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এবং আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। এটি হজমে সহায়তা করে, খাবারের স্থবিরতা হ্রাস করে এবং আপনার পেটকে শক্তিশালী করে। এক ইঞ্চি লম্বা আদার টুকরো নিয়ে কিমা করে নিন। এবার এক কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে আদা কুচি দিয়ে দিন। আগুন বন্ধ করুন এবং এটি প্রায় ১০ মিনিটের জন্য ঠান্ডা হতে দিন। এই আদা চা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন।

৫.কারি পাতা

কারি পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার ও ভিটামিন। এ ছাড়াও কারি পাতা ভিটামিন এ, বি, সি ও বি২ সমৃদ্ধ। পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কারি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। কারি পাতার গুঁড়া বাটারমিল্কে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় থেকে সহজেই নিস্তার পাবেন। কারি পাতা অন্ত্রের হজমকারী অ্যানজাইমগুলোকে উদ্দীপিত করে।

৬.পুদিনা এবং লেবু জল

লেবু এবং পুদিনা আপনার পেট প্রশমিত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পুদিনা অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি আপনার হজম রসের প্রবাহকেও উন্নত করে এবং আপনার পেটের আস্তরণকে শান্ত করে। এই পানীয়টি ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং পেটের অস্বস্তি কমিয়ে দেবে। প্রায় ২০ টি পুদিনা পাতা নিন এবং এটির রস বের করার জন্য একটি মোল ব্যবহার করে গুঁড়ো করুন। এক গ্লাস পানি নিন এবং এতে এক চা চামচ পুদিনার রস এবং এক চা চামচ লেবুর রস যোগ করুন। এটি দিনে তিন থেকে চার বার পান করুন।

৭.আম জাম পাতার রস:

কাঁচা আমপাতা ও জামপাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে খেলে আমাশা সেরে যাবে। এছাড়াও সাদা বা রক্ত আমাশয় যাদের আছে জামের কচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সেরে যায়। সম্ভব হলে ছাগল দুধ তাতে মিশিয়ে নিলে ভালো।

৮.ডালিমের খোসা:

ডালিমের শুকনো খোসা বা কাঁচা খোসা সেদ্ধ করে ছেঁকে জলটা খান। এছাড়াও ডালিমের শুকনো গুড়ো খোসা ১-২ গ্রাম মধু দিয়ে খেলে খুব উপকার পাবেন।

৯. শুঠের গুড়া:

পুরানো আমাশয় যাঁদের আছে, তাঁদের উচিত আদা ১ গ্রাম মাত্রায় (সহমত) শুঠের গুড়া গরম জলের সঙ্গে খাওয়া, এর দ্বারা আম পরিপাক হয়।

১০.তেঁতুল:

আমাশয় অনেকদিন থেকে হলে অর্থাৎ পুরাতন আমাশয় হলে ৪ থেকে ৫ গ্রাম তেঁতুল পাতা সিদ্ধ করে চটকে নিয়ে তা ছেঁকতে হবে। প্রাপ্ত জলকে জিরার ফোড়নে সাঁতলে[১] নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বহুদিনের পুরানো এবং পেটে সঞ্চিত আম (Mucus) বেরিয়ে যায়; অবশ্য নতুন আমাশার ক্ষেত্রেও টোটকা চিকিৎসায় এটার ব্যবহার হয়ে থাকে।

১১.বেতো বা বতুয়া শাক:

রক্ত আমাশয় বেতো বা বতুয়া শাকের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ অল্প গরম করে দুধ মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্তপড়া বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে মহিষের দুধ হলে ভাল হয়। শুধু আমাশা রোগে  বেতোশাক শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প দই মিশিয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে তার সঙ্গে ডালিমের রস দিতে বলা হয়েছে চরকে।

১২.অর্জুন:

রক্ত আমাশয়ে ৪ থেকে ৫ গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথ ছাগল দুধ মিশিয়ে খেল ওটা সেরে যাবে। এখানে একটা কথা জেনে রাখা ভালো, অর্জুন গাছের সব অংশই কষায় রস (Astringent); এর জন্যই ওর ক্বাথে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ওদিকটাও লক্ষ্য রাখা দরকার। তবে এটা দেখা যায় দুধে সিদ্ধ অর্জুন ছালের ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।

১৩.আমড়া:

অজীর্ণ চলছে অর্থাৎ ভালো হজম হচ্ছে না অথচ বেশ চর্বচোষ্য করে গুরুভোজন করে চলেছেন তার পরিণতিতে এলো আমাশা, তারপর একদিন বাদেই দেখা গেল রক্ত পড়ছে, এক্ষেত্রে আমড়ার আঠা ৩ থেকে ৪ গ্রাম আধা কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে তার সঙ্গে আমড়া গাছের ছালের রস এক চা চামচ মিশিয়ে একটু চিনি দিয়ে খেলে ২ দিনের মধ্যেই ঐ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং আমাশাও সেরে যাবে।

১৪.কুলেখাড়া পাতা:

আমাশয় হলে সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র কুলেখাড়া পাতার রস বা ডাঁটা বাদে ৪ চা-চামচ একটু গরম করে ছেকে, সকালে ও বিকালে দু’বার খেতে হবে; এর সঙ্গে ২ থেকে ৫ ফোঁটা মধু দেওয়াও চলে।

১৫. গোল মরিচ:

আমাশয়ে আম বা মল বেশি পড়ে না। কিন্তু শুলুনি ও কোথানিতে বেশি কষ্ট দেয়; এক্ষেত্রে গোল মরিচ চূর্ণ এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে ও বিকালে দু’বার জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ আমদোষ ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই সমস্যা চলে যাবে।

১৬.বেল

দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় ও ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল নিয়মিত খেলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

১৭.ভুঁই আমলা

আমাশয় ও উদরাময়ের রোগে জন্য ভুঁই আমলা গাছের কচি পাতার রস ১০ চামচ পরিমাণে রোজ দু’বার অর্থাৎ সকাল এবং সন্ধ্যায় খেলে উভয় রোগ দূর হয়।

১৮.উদয়পদ্ম

আমশয় একটি কঠিন রোগ। এই রোগ অনেকেরেই হয়ে থাকে। অনেকরই পুরোনো আমাশয় থাকে। এই পাতার রস যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।

১৯.ডুগডুগি

ডুগডুগি গাছের ফল প্রতিদিন খেলে রক্ত আমাশয়ে উপকার পাওয়া যায় ।

২০.দুর্বা ঘাস

সাদা বা রক্ত আমাশয়। যাই হোক না জামপাতা ২টি ও দূর্বা ঘাস ৫ থেকে ৭ গ্রাম একসঙ্গে বেটে সেই রস ছেকে নিয়ে একটু গরম করে অল্প দুধ মিশিয়ে খেলে ২ দিনেই সেরে যায়।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট এবং ওজন বৃদ্ধি - Baby Weight Chart and Weight Gain During Pregnancy
দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায় - Ways to remove black stains on teeth
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাবের কারণ - Causes of white discharge during pregnancy
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove warts
যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয় যেসব খাবার - Foods that reduce sex drive
পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান
আমলকির সিরাপের উপকারিতা
আপেলিন সিরাপ এর উপকারিতা
গলা ব্যথা সারানোর উপায় - Ways to cure sore throat
জাপানি তেলের উপকারিতা - Benefits of Japanese oil