সেরা হোমিওপ্যাথিক ঘুমের ঔষধ-Best Insomnia medicine in homeopathy
এক গবেষণায় দেখা গেছে আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে ঘুমজনিত সমস্যা অন্যতম। পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমালে একজন মানুষের শরীরে সবচেয়ে বড় আঘাতটা লাগে মস্তিষ্কে। কেবলমাত্র মস্তিষ্কে ছাড়াও শরীরে আরো অনেক সমস্যার জন্ম দেয় অপর্যাপ্ত ঘুম। আর এসব সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকে অনেক পথ বেছে নেন। যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হলেও অনেক ক্ষেত্রে তেমন একটা কাজে আসে না। ঘুমের সমস্যার চিকিৎসার জন্য হোমওপ্যাথিকে খুব প্রভাবিত উপায় বলে মনে করা হয়।
ঘুমের হোমিও ঔষধের নাম তালিকা-Homeopathic Sleeping Medicine Name
Nux vomica – রাতে বিছানায় যাওয়ার পরে সারাদিনের কাজ-কর্মের চিন্তা মাথার ভিতরে নানা দুশ্চিন্তা কাজ করতে থাকে, অসহনীয় বিরক্তি হয় ; ফলে ঘুম আসতে চায় না। বিশেষত যারা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে, বেশী বেশী চা-কফি পান করেন, যাদের পেটের অসুখ বেশী হয়, নাক্স ভমিকা তাদের অনিদ্রায় ভালো কাজ করে থাকে। নাক্স ভমিকা আপনার দুশ্চিন্তা জনিত ইমসোমনিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করতে পারে।
Opium – ঘুমঘুম ভাব কিন্তু ঘুম আসে না, চোখে প্রচন্ড ঘুম মনে হয় তবে শোয়ার পর ঘুম আসে নাহ । খুবই সেনসিটিভ, ঘড়ির কাটার শব্দ কিংবা দূরের কোন মোরগের ডাকেও তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। দুঃস্বপ্ন দেখে, কুকুর, বিড়াল, প্রেতাত্মা, বোবায়ধরা স্বপ্নে দেখে, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে অপিয়াম ঔষধটি খেতে হবে। হোমিও ওষুধের কথা বলা হয়েছে, অন্য কিছু মনে করবেন নাহ!
Ignatia amara – সাধারণত শোক-দুঃখ-বিরহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদি কারণে ঘুম না আসলে তাতে ইগ্নেশিয়া আমারা প্রযোজ্য। এদের ঘুম এত পাতলা হয় যে, তারা ঘুমের মধ্যে চারপাশের সবকিছুই শুনতে পায়। মানে ঘুম অনেক পাতলা হয়, তাদের জন্য এ ওষুধটি উপকারি হতে পারে।
Magnesium carbonica – সাধারণত পেটের কোন অস্বস্তি, ভীষণ শীতকাতর জামাকাপড় খুলতে চান না, পেটে গ্যাসের উৎপাত, আক্কেল দাঁত ওঠা, সারারাত ঘুমিয়েও ফ্রেস লাগে না বরং ঘুম থেকে ওঠার পরে খুবই টায়ার্ড লাগে মনে হয় সারারাত কুস্তি খেলেছেন, আগুন ডাকাত ঝগড়া মরা মানুষ ইত্যাদি স্বপ্ন দেখে ইত্যাদি লক্ষণে ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনিকা খেতে পারেন। আশা করি উল্লেখিত লক্ষণযুক্ত সমস্যা হলে Magnesium carbonica ভালো কাজ হতে পারে।
Cocculus indicus – সাধারণত ভীতু, নার্ভাস, অত্যধিক পড়াশোনা করে এমন লোকদের ক্ষেত্রে কুকুলাস ইনডিকাস প্রয়োগ করতে হয়। রাত জেগে কাজ করার কারণে যদি অনিদ্রা দেখা দেয়, তবে অবশ্যই ককুলাস ইনডিকাস খাবেন।
Cannabis indica – ক্যানাবিস ইন্ডিকা সাধারণত দীর্ঘদিনের পুরনো এবং দুরারোগ্য অনিদ্রা রোগে প্রযোজ্য হতে পারে । যাদের একেক দিন একেক টাইমে ঘুম আসে, দিনে ঘুম আসে প্রচুর, রাতের ঘুমে কোন আরাম পাওয়া যায় না, রাতে গরম লাগে যেন কেউ তার গায়ে গরম পানি ঢালতেছে ইত্যাদি লক্ষণে ক্যানাবিস ইনডিকা খেতে পারেন। যেহেতু এই ঔষধটি গাঁজা থেকে তৈরী করা হয়, তাই বলা যায় গাঁজার নেশা করার কারণে যদি কারো অনিদ্রা দেখা দেয়, তারা এটি খেয়ে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।
Kali phosphoricum অনিদ্রার একটি সেরা ঔষধ। বিভিন্ন কঠিন রোগ ভোগ, অত্যধিক শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, অপুষ্টি, দীর্ঘদিন যাবত স্তন্যদান করা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃষ্ট নিদ্রাহীনতায় (বা অন্যকোন রোগে) ক্যালি ফসফরিকাম খেতে হয়। মাঝে মাঝে সপ্তাহ খানেক বিরতি দিয়ে দীর্ঘদিন খান। হৃদপিন্ড, স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের উপর ইহার প্রশান্তিকারক ক্রিয়া বিদ্যমান। তাছাড়া যেহেতু এটি একটি ভিটামিন জাতীয় ঔষধ, তাই ইহার কোন ক্ষতিকর সাইড ইফেক্ট নাই বললেই চলে।
Coffea cruda – মানসিক উত্তেজনা, উৎকন্ঠা, দুঃশ্চিন্তা থেকে অনিদ্রা দেখা দিলে তাতে কফিয়া ক্রুডা প্রযোজ্য। সুসংবাদ শুনে, আনন্দের আতিষয্যে, শিশুদের দাঁত ওঠার বয়সে বা রাত জাগার কারণে অনিদ্রা হলে তাতে কফিয়া ক্রুডার কথা ভাবতে হবে। মহিলাদের সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ের অনিদ্রায় কফিয়া ক্রুডা ভালো কাজ করে। খুবই সেনসেটিভ রোগীদের ক্ষেত্রে কফিয়া ক্রুডা প্রযোজ্য যারা আওয়াজ সহ্য করতে পারে না, গন্ধ সহ্য করতে পারে না, স্পর্শ সহ্য করতে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
Ambra Grisea – সাধারণত চাকুরি বা ব্যবসা সংক্রান্ত দুঃশ্চিন্তার কারণে নিদ্রাহীনতা হলে তাতে এমব্রাগ্রিসিয়া প্রযোজ্য। সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত,শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে কিন্তু যখনই বালিশে মাথা রাখে, সাথে সাথেই ঘুম চলে যায়। এই ঔষধের একটি অদ্ভূত লক্ষণ হলো এরা অপরিচিত কেউ সামনে বা আশেপাশে থাকলে, পায়খানা করতে পারে না।
Hyoscyamus niger – মাত্রাতিরিক্ত মাথা খাটুনির কাজ (brainwork) করার কারণে অনিদ্রা দেখা দিলে তাতে হায়োসাইয়েমাস নিগার খেয়ে উপকার পাবেন। মাথার মধ্যে জোয়ারের পানির মতো ফালতু চিন্তার স্রোত বইতে থাকে। যদি শিশুরা ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে, কাঁপতে থাকে ; তবে তাতে হায়োসায়েমাস নিগার প্রযোজ্য।
Sulphur – সকাল দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, শরীর গরম লাগা, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, মাথার তালু-পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি লক্ষণ পাওয়া গেলে নিদ্রাহীনতা রোগেও সালফার প্রয়োগ করে দারুণ ফল পেতে পারেন ।
Belladonna – যদি মুখমন্ডল বা মাথা গরম বা লাল হয়ে থাকে, মাথা ব্যথার থাকে, শরীরে জ্বালা-পোড়াভাব থাকে ইত্যাদি কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, তবে তাতে বেলেডোনা প্রযোজ্য।
Chamomilla – শরীরের কোথাও মারাত্মক ব্যথার কারণে ঘুমাতে না পারলে, সেক্ষেত্রে ক্যামোমিলা প্রয়োগ করতে হবে। যারা অর্থহীন আজেবাজে স্বপ্নের কারণে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, ঘুমের ভেতরে ছটফট করতে থাকে, দুবর্ল-নার্ভাস মহিলা, শরীর গরম, প্রচুর পিপাসা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ক্যামোমিলা উপকার দিতে পারে।
Arsenic album – মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা, এক মূহূর্তও এক পজিশনে স্থির থাকতে পারে না, লক্ষণ থাকলে তাতে আর্সেনিক আলবাম খেতে হবে। রাতে একবার ঘুম ভাঙলে আর ঘুম আসে না, লক্ষণ থাকলে তাতে আর্সেনিক আলবাম খেতে হবে।
Gelsemium – সাধারণত যারা অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম করেন অথবা বিষন্নতায় ভোগেন, তাদের অনিদ্রা দূর করতে এটি ব্যবহৃত হয়। এ লক্ষণ থাকলে তাতে জেলসেমিয়াম খেতে হবে।