মুখের ভেতরে ঘা হওয়ার কারণ ও সমাধান - Causes and solutions for mouth sores
mouth sores

মুখের ভেতরে ঘা হওয়ার কারণ ও সমাধান - Causes and solutions for mouth sores

আমাদের শরীরের সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে মুখ প্রথম সারিতে থাকে। মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতি বছর ২০ মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে’ পালিত হয়।

সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার ও মুখের যত্নের অভাবে প্রায়ই আমাদের মুখে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মুখের বিভিন্ন রোগের মধ্যে অন্যতম মুখের ঘা।

চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, প্রায় ২০০ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখগহ্বরের ঘায়ের মাধ্যমে। মুখে ঘায়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে, মুখের ভেতরের মাংসে বা জিহ্বায় ঘা, মাড়িতে ব্যথা, কিছু খেতে গেলে জ্বলা ইত্যাদি। আবার অনেকের মুখ ফুলে যাওয়া বা পুঁজ বের হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

যেসব কারণে ঘা হতে পারে

নানা কারণে মুখের ভেতরে ঘা হতে পারে। মুখের কোন জায়গা কেটে গেলে মুখের ভেতরের অংশে বা জিবে ঘা হয়। শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলেও এ সমস্যা দেখা দেয়। খুব গরম পানীয় পান করলে বা কিছু চিবাতে গিয়ে গালের ভেতরে কামড় লাগলেও ঘা হতে পারে। আবার অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, দুর্বল স্বাস্থ্য, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণেও এগুলো হয়।

ভিটামিন বি১২ ও জিঙ্কের ঘাটতির কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে শুধু ভিটামিনের অভাবেই এই সমস্যা হয় না। এর পাশাপাশি সিগারেট, জরদা সহ সব ধরনের তামাক, মুখের ইনফেকশনের কারণে হয়। এছাড়া দাঁত ভাঙা থাকলে তার খোঁচা গালে লেগে ক্ষত তৈরি হয়। এক্ষেত্রে এই সমস্যারগুলির কথা আলাদা করে মাথায় রাখতে হবে। তবেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

মুখের ঘা থেকে সাবধান থাকবেন যেভাবে

১. মুখে আঘাতের বিষয়ে সাবধানে থাকবেন। দাঁত ব্রাশের সময় সতর্ক থাকবেন। দাঁত আঁকাবাঁকা থাকলে সেটার চিকিৎসা করান।

২. এ সমস্যা রোধের জন্য পরিমিত খাবার, ঘুম, মানসিকভাবে চাঙা থাকার চেষ্টা করবেন।

মুখের ঘা সারানোর ঘরোয়া উপায়

মাংসভাত খাওয়ার সময় কামড়টা যখন লাগল, তখনই বুঝলেন, অবিলম্বে ঘা হবে। ব্যস! ঘা হওয়ার পর থেকে মশলা দেওয়া খাবার তো দূরের কথা সাধারণ তরি-তরকারিই খেতে পারছেন না। তবে যে শুধু কামড়ে ফেললেই ঘা হয়— এমন নয়। ঠান্ডা লাগা থেকেও মুখে ঘা হতে পারে। ঘায়ে জ্বালার সঙ্গে এমন তীব্র ব্যথা হয় যে, কথা বলতেও অসুবিধে হতে পারে। ওষুধ খেয়ে যতটা উপকার পাবেন, তার চেয়ে বেশি উপকার রয়েছে এই সব ঘরোয়া টোটকায়। জেনে নিন ঘা হলে কী করবেন?

১.মধু 

ঘরে বসেই মুখের ঘা সারাতে চাইলে অবশ্যই মধু ব্যবহার করুন। মুখের ঘায়ের উপশমে মধু সবচেয়ে ভালো কাজ করে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি মুখগহ্বরে আর্দ্রতা প্রদান করে ও ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে। খুব ভালো হয় যদি মধুতে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাতে মুখের ঘা দ্রুত সেরে যায়।

২.নারকেল দুধ

এক টেবিল চামচ নারকেল দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ দিনে তিন থেকে চারবার ঘায়ের জায়গায় লাগান। মধু ছাড়া শুধু নারকেলের দুধ দিয়েও ক্ষত স্থানে মালিশ করতে পারেন। ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।

৩.তুলসী পাতা

ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ তুলসী মুখের ঘা সারাতে কার্যকরীভাবে কাজ করে। তুলসীর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফলে মুখের ঘায়ে তুলসীর রস লাগালে তা আলসারকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে। তুলসী ঘায়ের নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুততর করে। তাই মুখের ঘা থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতা চিবিয়ে নিন। এছাড়া ঈষদুষ্ণ জলে তুলসী পাতা ফেলে দিনে দু’বার গার্গেল করুন। হাতের কাছে তুলসী পাতা না পেলে মেথি পাতা দিয়েও গার্গেল করতে পারেন।

৪.যষ্টিমধু

মুখের ঘা সারাতে যষ্টিমধু বেশ কার্যকর। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে দুই থেকে তিন ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এটি দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করুন। যষ্টিমধুর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরী এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের ঘা ভাল করে থাকে।

৫.টি ব্যাগ

দ্রুত ব্যথা এবং জ্বালা দূর করতে টি ব্যাগ খুবই কার্যকর। একটি টি ব্যাগ ঠান্ডা জলেতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের জায়গায় লাগান। ব্যথা এবং ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।

৬.লবণ পানি

মুখে একটু জ্বালা জ্বালা ভাব দেখা যায় বলে আলসার কমাতে লবণ জলের মিশ্রণ অনেকে ব্যবহার করতে চান না। তবে লবণ জল কার্যকরভাবে মুখের আলসার শুকাতে ব্যবহৃত হয়। লবণ একটি প্রাচীন উপাদান যা ক্ষত নিরাময়ে এবং ক্ষত সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে, ব্যাকটেরিয়া মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। ফলে নিয়মিত ঈষদুষ্ণ জলে লবণ ফেলে গার্গেল করলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে যেমন মুক্ত থাকা যায় তেমনই আলসারের সমস্যাও দূর হয়।

৭.অ্যালোভেরা

অ্যালভেরার রস মুখে ঠান্ডা এবং প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি দিতে পারে। অ্যালোভেরার রস নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখে ঘা জনিত ব্যথাও দূর হয়। এছাড়া অ্যালোভেরার রস মুখের ঘায়ের নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। অতএব মুখের ঘা থেকে মুক্তি পেতে দিনে দু’বার অ্যালোভেরার রস দিয়ে কুলকুচি করুন। অ্যালোভেরা জ্যুস না পেলে আলসারের স্থানে অ্যালোভেরা জেলও লাগাতে পারেন।

৮.হলুদ

হলুদ গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখের ভেতরে হওয়া ঘা-এ লাগান।

৯.টমাটো

খাবারের সঙ্গে পাতে কাঁচা টমাটো খাওয়া অভ্যাস করুন। কয়েক দিন খেলেই মুখের ভেতরের ঘা সেরে যাবে।

১০.ধনেপাতা

ধনেপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। দিনে কয়েকবার করে করলে আরাম পাবেন।

এ ছাড়াও মুখের ঘায়ের ব্যথা বেশি হলে এক টুকরা বরফ নিয়ে ঘায়ের স্থানে রাখুন। অথবা ঠান্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এক টুকরো লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখুন বা লবঙ্গের রস ক্ষত স্থানটিতে লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন।

তথ্যসূত্র: somoynews.tv
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ - Colon cancer symptoms
কোলনস্কপি কি এবং কেন করা হয়? - What is a colonoscopy and why is it done?
এন্ডোসকপি কি এবং কেন করা হয়? - What is endoscopy and why is it done?
একজিমা – কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা - Eczema – Causes, Symptoms and Treatment
ডাম্পিং সিন্ড্রোম: লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা - Dumping Syndrome: Symptoms, Causes and Treatment
হার্নিয়া: কারণ, চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়-Hernia: Causes, treatments, and diagnosis
ফ্লাকোল শিশুরা কখন? কেন? কিভাবে খাবে?
গর্ভাবস্থায় যেসব ওষুধ খাওয়া যাবে না - Medicines that cannot be taken during pregnancy