দাঁতে শিরশির অনুভূতি হলে কী করবেন
বিভিন্ন কারণে দাঁতে শিরশিরানি হতে পারে। তবে শীতে এ সমস্যা আসতেই বেড়ে যায়। বিশেষ করে অতিরিক্ত ঠান্ডা, গরম বা টকজাতীয় খাবার খেলে দাঁতে শিরশির ভাব হতে পারে। দাঁতে এনামেল নামক এক প্রকার উপাদান থাকে যা দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানটি ক্ষয়ে গেলে দাঁতের ভিতরে থাকা স্নায়ুগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে বিশেষত ঠান্ডা খাবার ও পানীয় এই স্নায়ুগুলির সংস্পর্শে এলে শিরশির করে ওঠে দাঁত। একে বিজ্ঞানের ভাষায় টুথ সেনসিটিভিটি বলে।
শিরশির করার কারণ
* ভুলভাবে দাঁত ব্রাশ করলে বা শক্ত টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। তখন এনামেলের পরের স্তর ডেনটিন বেরিয়ে আসে। এর ফলে দাঁতে সেনসিটিভিটি হয়।
* অনেক সময় একটি দাঁতের সঙ্গে আরেকটি দাঁত শক্তভাবে লেগে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
* মাড়ির ক্ষয়ের কারণে এটি হতে পারে। এ ছাড়া মাড়ির বিভিন্ন ধরনের অসুখের কারণেও সেনসিটিভিটি হয়।
* যেসব খাবারের মধ্যে ক্যামিকেল থাকে এসব খাবার খেলে এই সমস্যা হয়। যেমন : কোল্ড ড্রিংস, ঠাণ্ডা খাবার, এলকোহল ইত্যাদি।
* বয়সের কারণেও অনেক সময় দাঁতের শিরশির অনুভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ বছরকে সেনসিটিভ বয়স হিসেবে ধরা হয়।
* যেকোনো দুর্ঘটনায় দাঁত যদি ভেঙে যায়।
* অনেক সময় শক্ত খাবার খাওয়ার সময় এ রকম হতে পারে।
* দীর্ঘ সময় ধরে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে এই সমস্যা হয়।
* যেসব খাবারে এসিড থাকে সেসব খাবার খেলে এই সমস্যা হয়। যেমন : বিভিন্ন ধরনের ফল, টমেটো, চা ইত্যাদি।
* দাঁতের বিভিন্ন কাজের সময় এ রকম হতে পারে। যেমন : রুট ক্যানেল, ক্রাউন প্লেসমেন্ট এবং দাঁতের রেসটোরেশন ইত্যাদি।
দাঁতে শিরশিরানি? ঘরোয়া টোটকায় সমাধান
যদিও এ সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার মেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মানলে। তবে হঠা করেই যদি এ সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়েও এর সমাধান করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কিছু টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করলেও এ অসুবিধা এড়ানো যায়। পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করেও দাঁতের শিরশিরানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন-
লবণ পানি
এক কাপ উষ্ণ গরম পানির মধ্যে আধা চা চামচ লবণ নিন। এই পানি দিয়ে কুলি করুন। লবণপানি মুখের সব অংশে ছড়িয়ে গেলে ব্যথা হতে পারে। তবে কয়েক মিনিটের জন্য এই পানি মুখে রাখুন। এর পর ফেলে দিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধোন। দিনে দুবার এটি করলে দ্রুত শিরশির ভাব থেকে মুক্তি পাবেন।
রসুনের পেস্ট
একটি রসুন বেটে এর মধ্যে ২-৩ ফোটা জল ও সামান্য লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতে মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখুন। এরপর লবণ জল দিয়ে মুখ কুলি করুন। দিনে দুবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেই দাঁতের শিরশিরানি দূর হবে।
মধু ও কুসুম গরম পানির মিশ্রণ
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে মিশ্রণটা নেড়ে আগের মতো কুলকুচি করুন। দিনের বেলা এটা করলে ভালো। রাতে করা একেবারেই নিষেধ।
ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট
সামন্য ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট তুলায় করে মাড়িতে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তারপর মুখ ধুয়ে নিন হালকা গরম পানিতে। কিছুদিন ব্যবহারেই ফল পাবেন।
এক টেবিল চামচ হলুদ, আধা চামচ সর্ষের তেল ও আধা চামচ লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দাঁতে লাগালে কমতে পারে দাঁত শিরশির করার সমস্যা। হলুদে থাকে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি জীবাণুনাশক ও প্রদাহনাশক হিসেবে বেশ কার্যকর। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এটির ব্যবহার রয়েছে।
ক্যাপসাইসিন জেল
মরিচের ঝালের পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্যাপসাইসিন নাম একটি যৌগ। যেকোনো প্রদাহ কমাতে এটি দারুণ কার্যকর। ক্যাপসাইসিন জেল বা মাউথওয়াশ স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমদিকে একটু জ্বলতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে।