ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ হতে যে খাবার খাবেন - Foods to eat to recover quickly from dengue
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে নানাভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু সব সময় রক্ষা পাওয়া সহজ হয় না। কোনো কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন নিজের প্রতি হতে হবে আরও বেশি যত্নশীল। ডেঙ্গুর মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। এমন কি ঘটতে পারে মৃত্যুও। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো জেনে রাখা জরুরি। কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই যাতে সতর্ক হওয়া যায়।
ডেঙ্গু কী?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাসের চার ধরনের সেরোটাইপ (serotype) থাকে। এডিস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। মশা কামড়ানোর (৪-১০) দিনের মধ্যে এই ভাইরাস দেহে বংশবৃদ্ধি করে রোগের সৃষ্টি করে। সাধারণত আমাদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ থাকে দেড় লক্ষ থেকে চার লক্ষের মধ্যে। ডেঙ্গুর তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে এই প্লাটিলেটের পরিমাণও কমতে থাকে।
এডিস মশার জন্মস্থল
এডিস মশা শহরের আবদ্ধ জলাধার বা পানিতে বেশি বংশ বিস্তার করে। যেমনঃ টবের পানি, নারকেলের খোলা, এসির নিচে জমে থাকা পানি, কমোডের পানি ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানোর মাধ্যমে এডিস মশকী প্রথমে জীবাণুবাহক হয় এবং তারপর তা অন্য কাউকে কামড়ালে লালার মাধ্যমে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়। এভাবেই এই রোগ ছড়াতে থাকে আমাদের চারপাশে।
সাধারণত বছরের জুন-জুলাই মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে, কিন্তু সবারই যে সবসময় একই রকম উপসর্গ দেখা দিবে তা নয়। চলুন তবে দেখে নেই ডেঙ্গু জ্বরের পূর্ব ও বর্তমান লক্ষণসমূহ!
পূর্ব লক্ষণসমূহ
১. আকস্মিক জ্বর
২. মাথাব্যথা
৩. চোখ ব্যথা
৪. আলোতে অস্বস্তি
৫. কোমরে বা মেরুদন্ডে ব্যথা
৬. হাড়ে ব্যথা
৭. অরুচি
৮. ক্ষুধামন্দা
৯. বমি বমি ভাব
১০. কখনো কখনো শরীরের ত্বকে লালচে র্যাশ দেখা দেওয়া।
বর্তমান লক্ষণসমূহ
তবে সম্প্রতি যে ধরনের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে দেখা দিয়েছে তাতে বমি, পাতলা পায়খানা এবং পেট ব্যথাও দেখা দিচ্ছে। ইদানিংএই ধরনের ডেঙ্গুর বেশিরভাগই হচ্ছে হেমোরেজিক ধরনের। যাতে রোগীর নাক দিয়ে, বমির সাথে, এমনকি টয়লেটের সাথেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে রোগীর প্লাটিলেট দ্রুত কমা শুরু করে এবং ভয়াবহ পরিণতিতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই তীব্র জ্বর হওয়ার পরদিনই এখন রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। অনেকের আবার তীব্র জ্বর হচ্ছে না। সাধারণ জ্বরের মতই লক্ষণ থাকে। এর সাথে পেটে ব্যথা, হালকা ঠান্ডা জ্বর ও বমি হতে পারে। আবার বমি নাও হতে পারে। এছাড়াও শরীরের ভিতর পানি জমে প্রেশার লো হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ভাইরাস আক্রমণের কারণে ওই ব্যক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
এ কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাবারের দিকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। এ সময় সঠিক খাবার না খেলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে যাবে। জেনে নিন ডেঙ্গু রোগীর পাতে কোন কোন খাবারগুলো রাখা জরুরি-
ডাবের পানি
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সাধারণ পানির পাশাপাশি প্রচুর ডাবের পানি পান করা প্রয়োজন। পানির ঘাটতি ও শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ডাবের পানি খুবই উপকারী।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই শাকটি বেশি করে গ্রহণ করলে অতিদ্রুত প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়।
মাছ ও ডিম
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মাছ ও ডিম খাওয়া জরুরি। ডেঙ্গু রোগীর জন্যও এটি অবশ্য করণীয়। এক্ষেত্রে খেতে হবে ছোট মাছ। এতে তেল কম ও প্রোটিন বেশি থাকে। শরীরে শক্তি জোগানোর জন্য প্রোটিন খুব জরুরি। সেইসঙ্গে ডিমেও থাকে প্রচুর প্রোটিন। এছাড়া থাকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি-সহ নানা উপাদান। তাই ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ হতে মাছ ও ডিম খান নিয়মিত।
পেঁপে পাতার জুস
ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে কমে যেতে পারে প্লাটিলেট। তাই এ সময় আপনার উপকার করতে পারে পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতায় পাপাইন এবং কিমোপেইনের মতো এনজাইমসমৃদ্ধ, যা হজমে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করতে পারে প্লাটিলেটের পরিমাণও। সেজন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ এমএল পেঁপে পাতার তৈরি জুস খেতে হবে।
ফল
বিভিন্ন প্রকার ফল ডেঙ্গু রোগীর জন্য কার্যকরী খাবার। প্রচুর ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ থাকে যেসব খাবারে সেগুলো বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের ফল শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেমন- আপেল, পেঁপে, বেদানা, পেয়ারা ও মৌসুমি বিভিন্ন ফল। এ ছাড়া পেঁপে পাতার রস, ভেষজ, তুলসি, অশ্বগন্ধা, অ্যালোভেরার মতো উপাদানযুক্ত খাবার ডেঙ্গু রোগীকে খাওয়ানো প্রয়োজন।
মুরগির মাংস
ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে মুরগির মাংস খাওয়া উপকারী। মুরগির মাংসে থাকে যথেষ্ট প্রোটিন। এছাড়া ফ্যাট থাকে অনেক কম। যে কারণে শরীরে শক্তি পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। মাসল লস হয় না। তাই দ্রুত সুস্থ হতে মুরগির মাংস খান। অতিরিক্ত মসলাদার নয়, অল্প মসলায় রান্না করা বা মুরগির মাংসের স্যুপ খান।
সবজি
সাধারণ মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য সবজির বিকল্প উত্তম খাবার নেই। শরীরে ফাইবারের ঘাটতি পূরণ হয় সবজিতে। ডেঙ্গু কাবু করতে পর্যাপ্ত সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
আমলকির রস
আমলকি ভিটামিন এ ও সি তে ভরপুর। বাজারে সারাবছরই এখন আমলকি পাওয়া যায়। অনেক সময় ভিটামিন সি ট্যাবলেট পাওয়া যায় না বলে, তার বদলে দিনে একটা আমলকি খান। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের ট্রেস কমায়। ইমিউনিটি ব্যুস্ট করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মেথি শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর জ্বর যখন মারাত্মক হয় তখন মেথি আরাম দিতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু জ্বরের সময় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই তৈলাক্ত ও ভাজা খাবরগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মসলাযুক্ত খাবার: ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মসলাযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবার বেশি করে খেলে পাকস্থলীর দেয়াল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: ডেঙ্গু হলে তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলো হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি নিয়ে আসতে পারে।