দাঁতের ইনফেকশন থেকে হতে পারে অনেক রোগ - Dental infection can cause many diseases
শরীরের যেকোনো অঙ্গের মতো দাঁতের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। দাঁত তুলে ফেললে শুধু যে সৌন্দর্য ব্যাহত হয় তা নয়, পাকস্থলীর সমস্যাও দেখা দেয় এবং কথা বলতে শব্দ উচ্চারণ ও সমস্যা হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দাঁতে কোনো ইনফেকশন হলে চোখের অপারেশন করা যায় না। আগে দাঁতের ইনফেকশন কমিয়ে তবেই চোখের সার্জারি করা যায়। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসায় আজকাল ইনফেকশন কমিয়ে দাঁতের সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ ছাড়াও দেখা গেছে দাঁতে ইনফেকশন হলে অনেক সময় মাথা, চোখে, কানে রেফারড পেন হয়। গবেষণায় দেখে গেছে, হার্টের সমস্যা থাকলে দাঁত সার্জারির সময় হার্টের সমস্যা হতে পারে। কারণ ডেন্টাল সার্জারিতে ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করে, ফলে তা হার্টের ক্ষতি করে। সময় মতো অ্যান্টিবায়োটিক কভারেজে দাঁতের চিকিৎসা এবং সেই সাথে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত টেকনোলজি অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে দাঁতের চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
ডায়বেটিস :
দাঁতে ইনফেকশন আর ডায়বেটিসের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। ডায়বেটিস রোগীদের দাঁতের ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে একজন সুস্থ মানুষের চেয়ে শতকরা সাড়ে তিন ভাগ বেশি। তেমনি এর উল্টোটাও হয়ে থাকে। তাছাড়া ডায়বেটিস রোগীদের দাঁতের সংক্রমণ হলে তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় :
দাঁতে ইনফেকশন বা পেরিওডেন্টাইটিস রোগ যদি জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একথা বেশ স্পষ্টভাবেই জানান জার্মানির দন্তবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ক্রিস্টফ ড্যরফার।
আক্রান্ত হতে পারে ফুসফুস :
দাঁতে বাসা বাঁধা জীবাণু নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে ফুসফুসেকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে এটা সাধারণত হয়ে থাকে যাঁরা বেশি সময় ধরে বিছানায় শুয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে হাসপাতালের বিছানায় বেশিদিন শুয়ে থাকলে এমনটা হতে পারে।
হার্টে সমস্যা হতে পারে :
দাঁতের ইনফেকশন বা পেরিওডেন্টাইটিস এবং হৃদরোগ দু’টো একে-অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত। এ বিষয়ে করা বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞ ড্যরফার।
মুখ :
পেরিওডেন্টাইটিস বা দাঁতের ইনফেকশন রোগ দীর্ঘস্থায়ী হলে দাঁতের চোয়ালের হাড়ের ক্ষয় হয় এবং তখন দাঁত নড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত দাঁতটিকে হারাতেও হয়।
জীবাণু ঢোকার রাস্তা :
মুখের ভেতর নানা ধরনের ৭০০টি জীবাণুর বাস, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি। এ সব জীবাণু ঢোক গেলা এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। তাছাড়া রক্ত চলাচলে মধ্য দিয়েও জীবাণু মুখে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ দাঁতে জীবাণু ঢোকার প্রবেশ পথ অনেক। তাই সকলেরই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
একথা সত্য যে দাঁতের কোনো সমস্যা হলে অনেকেই প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমের জন্য ‘পেইন কিলারের’ আশ্রয় নিয়ে থাকেন অনেকে। অথচ দাঁতের সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে সমস্যার শুরুতেই সমাধান সম্ভব, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শরীরের যে কোনো অঙ্গের মতো দাঁতের যত্নও অত্যন্ত জরুরি। তাই দাঁতকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে নিয়মিত যত্ন ছাড়াও ডাক্তারি চেকআপ প্রয়োজন। তাছাড়া দাঁতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় কোনো রোগীর চোখ, কান, মস্তিষ্ক বা হার্টের মতো অঙ্গে অপারেশন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ