বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে করনীয় - What to do if children have stomach gas
hildren have stomach gas

বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে করনীয় - What to do if children have stomach gas

জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুদের পেটে গ্যাস জমতে পারে এবং তৎপরবর্তী বয়সী শিশুদের পেটেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তবে বড়দের মতো শিশুদের গ্যাসের কারণ ও ধরন ভিন্ন। নবজাতক শিশুদের জন্য এটা এক অস্বস্তিকর অবস্থা এবং অবশ্যই অভিভাবকদের জন্য তো বটেই। এ সমস্যাটা ক্ষেত্রবিশেষে কারো কম, কারো বেশি। কারো আবার স্বল্পমেয়াদি, কারো বা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। কিছুদিন পর এমনিতেই এটা নিরাময় হয়ে যায়।

গ্যাসের কারণটা কী?

♦ আসলে পুরো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে মনে করা হয় যে এটা হরমোনজনিত কারণ। যাকে বলা হয় ‘ইনফ্যান্টাইল কোলিক’।

এ ছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে; যেমন—

♦ নবজাতক শিশুটির পাকস্থলীর গঠন প্রকৃতি থাকে দুর্বল। এ সময় তাদের হজমশক্তি কম থাকায় কিছুটা গ্যাস সৃষ্টি হয় বটে।

♦ বাইরের বাজারজাত ফর্মুলা মিল্ক ও ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ালে বোতলে অতিরিক্ত ফেনা বা বাতাস জমার কারণে শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি হয়।

♦ শিশুর পেটে বাতাস ঢোকার ফলে পেট ফুলে যায় এবং পেটে কামড়ায় বা পেট ব্যথা করে বিধায় তারা অতিরিক্ত কান্না করে। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।

♦ মায়ের যদি বুকের দুধ বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয় বা যেসব বাচ্চা ফিডারে দুধ খায় এবং ফিডারের নিপলের ছিদ্র যদি মোটা হয় সে ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ও বেশি পরিমাণে দুধ বাচ্চার পেটে চলে যায়। পাশাপাশি অনেক পরিমাণে বাতাসও বাচ্চার পেটে প্রবেশ করে। ফলে শিশুর পেটে গ্যাসের উদ্রেক করে।

আরো পড়ুন: বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা

♦ বিপরীতভাবে মায়ের বুকের দুধ কম আসলে বা ফিডারের নিপলের ছিদ্র যদি ছোট হয়, সে ক্ষেত্রে খুব ধীরগতিতে ও কম পরিমাণে দুধ আসার কারণে বাচ্চার পেটে অধিক বাতাস প্রবেশ করে এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়।

♦ এ ছাড়া মায়ের কিছ সমস্যার কারণেও শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যেমন—মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।

♦ শিশুর ছয় মাস বয়সে বাড়তি খাবার শুরু করার সময়ও পেটে গ্যাস হতে পারে।

♦ একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে বাইরের খাবার বা জুস ইত্যাদি যাতে সুক্রোজ বা ফ্রুকটোজ বেশি থাকে, এটার কারণেও পেটে গ্যাস হতে পারে, হজমে ব্যাঘাত হতে পারে।

গ্যাসের লক্ষণ

♦ অস্থিরতা, ক্ষুধামান্দ্য।

♦ অতিরিক্ত কান্না করা।

♦ অতিরিক্ত মোচড়ানো।

♦ পেট ফোলা ও তলপেট শক্ত হওয়া।

♦ অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ।

আরো পড়ুন:  শিশুর যেসব ওষুধ ঘরে রাখবেন

বাচ্চার গ্যাস হলে কী করবেন

১। শিশুর গ্যাসের সমস্যা হলে তাকে উপুড় করে হাঁটুর ওপরে শোয়াতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে তার পিঠে মালিশ করতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ মালিশ করলে শিশুর গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।

২। পিঠে মালিশের পর যদি কাজ না হয়, তবে শিশুকে স্বাভাবিকভাবে শুইয়ে তার পেট মালিশ করতে হবে। আস্তে আস্তে হাতের আঙুল দিয়ে তার পেটে চাপ দিয়ে মালিশ করতে হবে।

৩। বাচ্চা যত বেশি কান্না করবে, তত বেশি তার কান্নার সঙ্গে বাতাস পেটে ঢুকবে। এই বাতাসও কিন্তু পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুর কান্নার আগেই তার সঙ্গে খেলা করুন বা তাকে খেতে দিন।

৪। বাচ্চাদের জন্য বাজারে কিছু ‘বেবি গ্যাস ড্রপস’ কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহারে শিশুদের গ্যাসের সমস্যা কমতে পারে। তবে এইগুলো যে সব শিশুদের ক্ষেত্রে কাজ করবে তা কিন্তু না। আর এগুলো কেনার বা শিশুকে দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুন:  বাচ্চাদের পেট ব্যাথা কমানোর উপায়

৫। গ্যাস হলে শিশুকে খুবই হালকা গরম পানি পান করানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর জিহ্বা যেহেতু খুবই স্পর্শকাতর, তাই পানি যেন এমন তাপমাত্রার হয় যাতে সে তা খেতে পারে।

৬। বাচ্চার গ্যাস যদি অনেক বেশি হয়, তবে কিছুদিন তাকে প্যাকেটজাত দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ অনেক সময় এসব দুধ হজমে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৭। যে মা শিশুকে দুধ পান করাচ্ছেন, তার খাবার বা ডায়েটের কারণে শিশুর গ্যাস হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিতে হবে, মায়ের কোনো ধরনের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে কিনা।

তথ্যসূত্র: kalerkantho.com