এনসেফালাইটিস কি? কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা কি?-What is encephalitis? What are the causes, symptoms and treatment?
এনসেফালাইটিস হলো মস্তিষ্কের প্রদাহ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের সংক্রমণে এটি হয়। এনসেফালাইটিসের সবচেয়ে বড় কারণ হারপিস ভাইরাস। কুকুরের কামড়ে র্যাবিস হলে, কিংবা জলবসন্তের কারণেও হতে পারে। আমাদের দেশে খেজুরের রস পান করার কারণে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে দেখা যায়। এর থেকেও এনসেফালাইটিস হতে পারে। এইডস রোগের ভাইরাস মস্তিষ্কে ছড়িয়েও এইচআইভি এনসেফালাইটিস হতে পারে।
বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল এনকেফেলাইটিস হতে পারে। এসব ভাইরাসের মধ্যে আছে-
১। হারপিস ভাইরাস
২। ভেরিসেলা জোসটার ভাইরাস
৩। ডেঙ্গু ভাইরাস
৪। মিসেলস ভাইরাস
৫। মাম্পস ভাইরাস
৬। রুবেলা ভাইরাস
৭। নিপাহ ভাইরাস
৮। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস
৯। সেন্ট লুইস ভাইরাস
১০। এনটারো ভাইরাস
১১। র্যাবিস ভাইরাস ইত্যাদি।
এনকেফালাইটিসের লক্ষণ-
১. মাথার যন্ত্রণা
২. জ্বর
৩. পেশি কিংবা গাঁটে ব্যথা
৪. ক্লান্তি এবং দুর্বলভাব
৫. খিটখিটে হয়ে যাওয়া
৬. হ্যালুসিনেশন
৭. চোখে ঝাপসা দেখা
৮. শরীরের কোনও একটি অংশে পক্ষাধাত হওয়া
৯. শোনা এবং কোনও কিছু পড়তে অসুবিধা হওয়া
১০. অনেকক্ষেত্রে রোগী কোমাতেও চলে যেতে পারে
১১. মাথা ঘোরা
১২. বমি
বুঝবেন যেভাবে
মস্তিষ্কের এমআরআই পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে এ রোগের ধারণা দিতে পারে। তবে মেরুদণ্ডের সিএসএফ পরীক্ষার মাধ্যমে এনসেফালাইটিস রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়। হারপিস ভাইরাসে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে ইইজি পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধারণা করা যায়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এইচআইভি পরীক্ষা করা যেতে পারে।
রোগ নির্ণয় পরীক্ষা
* লাম্বার পাংচার অর্থাৎ মেরূদন্ডের হাঁড়ের মধ্যে সুঁচ ফুটিয়ে ব্রেনের পানি অর্থাৎ সিএসএফ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়।
* ব্রেন সিটি বা এমআরআইতে মাঝেমধ্যে দাগ পাওয়া যেতে পারে।
* ব্রেন ইইজি করলে ব্রেন স্লো বা খিঁচুনি আছে কিনা দেখা হয়।
রোগের প্রতিকার
প্রতিকারের চেয়ে এই রোগের প্রতিরোধই সব চেয়ে কার্যকর।
১। ঘরে মশা ঢুকতে না দেওয়া। আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা, যাতে মশা জন্মাতে না পারে।
২। মশারি বা মশা তাড়ানোর ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা।
৩। তারের জাল দিয়ে ঘর স্ক্রিনিং করুন।
৪। বেড়াতে যাওয়ার আগে জেনে নিন যেখানে যাচ্ছেন সেখানে এনকেফেলাইটিসের ঝুঁকি কতটা রয়েছে।
এই রোগের জন্য টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে শিশু অবস্থাতেই এই টিকে দিয়ে দেওয়া হয়। ‘জেই টিকা’ নিলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে না। তবে যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই পড়ে কেউ, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। রোগের শুরুতেই যদি রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় তা হলে খুব সহজেই সারানো সম্ভব। কিন্ত ভাইরাসের সংক্রমণ যদি মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় তা হলে এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
* বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাস দিয়ে হয়। সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোনো লাভ নেই। এসাইক্লোভির দেওয়া হয়।
* এছারা সিমটোমেট্রিক চিকিৎসা ,অর্থাৎ উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
* অল্প মাত্রাই এনকেফালাইটিস হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরোপুরি পূর্বের মতো সুস্থ হওয়া সম্ভব।কিন্তু বেশি মাত্রা হলে, রোগের ছাপ বা অঙ্গ হানি হবার আশঙ্কা বেশি থাকে। যেমন সুস্থ হবার পরও খিঁচুনি হওয়া, পা টেনে হাটা বা শরীরের একপাশে পক্ষাঘাত হওয়া বা স্বরনশক্তি কমে যাওয়া।
উপদেশ
*পোষা জীবন্তুকে নিয়মিত পশু চিকিৎসকের কাছে নিন এবং ভ্যাকসিন দিন।
* জীবন্তু যদি কামড়ও দেয়, তবে ক্ষত স্থানটি খুব ভলো করে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ধুতে হবে।
* ডাক্তারের পরামর্শ নিন, অন্য কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন (এআরভি) নেওয়া লাগবে কিনা।
* এন কেফালাইটিস হবার পর নিয়মিতভাবে ফিজিওথেরাপি নিন।