মেয়েদের স্তনে চাকা হওয়ার কারণ - Causes of breast lumps in girls
মহিলাদের স্তনে চাকা বা গোটা হওয়া অথবা গোটা ভাব অনুভ‚ত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এসব গোটার বেশির ভাগই ক্ষতিকর কিছু নয় অথার্ৎ এগুলো ক্যান্সার নয়। মাসিকের আগে স্তনে কিছু পরিবতর্ন হয়। স্তনের টিস্যু বিভিন্ন হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে স্তনে চাকা অথবা গোটা ভাব বা ব্যথাও অনুভব হতে পারে। নিজেদের স্তনের স্বাভাবিক পরিবতর্নগুলো মহিলাদের সবারই জানা প্রয়োজন। তাহলে অস্বাভাবিক কিছু হলে সহজে বোঝা যাবে। মাসিকের আগে সাধারণত স্তনে ব্যথা ও চাকা ভাব মনে হতে পারে। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারের পরামশর্ নেয়াই শ্রেয়।
ব্রেস্টে চাকা হবার কারণ: ব্রেস্টে চাকা হওয়ার পরিচিত কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো।
ফাইব্রএডিনসিস: সাধারণত ২৫-৩৫ বছর বয়সে হয়ে থাকে। এর কারণে মাসিকের আগে বুকে চাকা চাকা এবং ব্যথা অনুভব হয়, যা মাসিক হবার পর কমে যায়। মাসিকের সময় যে হরমোন নিঃসরিত হয় তার কারণে ব্রেস্টের টিস্যুতে কিছু পরিবর্তন হয়, ফলে এই ধরনের অনুভুতি হয়।
ফাইব্রএডিনোমা: এটি একটি বিনাইন লাম্প। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়েসে বেশি হয়। সাধারণত হঠাৎ করে বুকে এই চাকা ধরা পরে যা সহজেই নড়াচড়া করে এবং ব্যথাহীন হয়ে থাকে। এজন্য এ ধরনের চাকা কে ব্রেস্ট মাউস বলা হয়। সাইজ ছোট হলে নিজে-নিজে মিলিয়ে যেতে পারে, তবে বড় হলে অপারেশন করে অপসারণ করতে হয়।
ব্রেস্ট সিস্ট: সিস্ট হচ্ছে পানি ভর্তি টিউমার। এগুলো যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে মহিলাদের মেনপোজের আগে বেশি হয়। সিস্টগুলো মসৃণ ও গোলাকার হয়ে থাকে। এর চিকিৎসা হচ্ছে নিডেলের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা।
ব্রেস্ট এবসেস বা ইনফেকশন: এটা স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া আঘাতপ্রাপ্ত স্থান বিশেষ করে ক্রাক নিপেল দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পুঁজ তৈরি করে। এটি খুব ব্যথাযুক্ত হয়। চিকিৎসা হিসেবে ব্যথার ঔষধ, এন্টিবায়োটিক, গরম কমম্প্রেশন দেয়া হয়। পুঁজ বা এবসেস বড় থাকলে সার্জারির মাধ্যমে ড্রেইন করে নিয়মিত ড্রেসিং করার দরকার হয়।
ফ্যাট নেক্রসিস: কোন কারণে ব্রেস্ট আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্রেস্টের ফ্যাটি টিস্যু নেক্রসিস হয়ে চাকা তৈরি করে। এগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে অপসারিত হয়, কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হয়।
লাইপোমা: এটা ফ্যাটি টিস্যুর টিউমার, যা ক্যান্সার নয়। সাইজ বড়ো হলে সার্জারি করা অপসারণ করা লাগে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার: ব্রেস্টে চাকার একটি কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। অন্যান্য চাকার সাথে এর পার্থক্য হলো এটি সহজে নড়া চড়া করানো যায় না। উপরিভাগ অমসৃণ ও সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে।
কিভাবে ব্রেস্টের চাকা বুঝতে পারবো
সেলফ এক্সামিনেশনের মাধ্যমে নিজেই নিজের স্তন্য পরীক্ষা করে দেখা যায়। প্রতি মাসে মাসিকের পর আপনি ঘরে বসেই এ পরীক্ষা করতে পারেন। এসবের কোনো একটিও যদি আপনার মধ্যে অনুভব করেন তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
ক. যেকোনো চাকা অনুভব হলে অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর ধরণ নির্ণয় করতে হবে। বিশেষ করে চাকাটি যদি মাসিক হবার পরও মিলিয়ে না যায়, আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে অথবা ব্যথা থাকে।
খ. ব্রেস্টের চামড়ায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলে, যেমন: কুঁচকানো ভাব, লোমকূপের ছিদ্র বড় হয়ে যাওয়া অথবা রঙের কোনো পরিবর্তন।
গ. নিপেল ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে অথবা এ থেকে কোনো অস্বাভাবিক ডিসচার্জ বা রস বের হলে।
যেসব পরীক্ষা দরকার
চাকার কারণ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার দরকার হয়। যেমন: আলট্রাসনোগ্রাম, এফএনএসি, বায়োপসি ও ম্যামোগ্রাফি ইত্যাদি।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়:
যাদের ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের হিস্ট্রি আছে তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এছাড়া সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোনাল পিল ৩-৫ বছরের অধিক গ্রহণ না করা এবং বাচ্চাকে সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রতিরোধোক হিসেবে কাজ করে।
তথ্যসূত্র: shajgoj.com