মুখের আলসারের কারন ও  প্রতিরোধের উপায়-Causes and prevention of mouth ulcers
mouth ulcer

মুখের আলসার বলতে কী বোঝায়? মুখের আলসার প্রতিরোধে করণীয়-What does mouth ulcer mean? What to do to prevent mouth ulcers

মুখের ভেতরে, গালের নরম মাংসপেশিতে, জিহ্বার এক পাশে একধরনের ঘা দেখা যায়। যার নাম অ্যাপথাস আলসার। ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময় পুঁজ জমে থাকে। পুঁজের চারপাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির অংশে যা হয়।

মুখের ঘা, ক্ষত বা মুখের আলসার বলতে কী বোঝায়?

আমাদের মুখের ভেতর নরম যে আবরণ থাকে, তাকে মিউকাস মেমব্রেন বলে। এই মেমব্রেন ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে মুখগহ্বরে ঘা বা ক্ষত বা আলসারের সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

ঘা রোগ বা মুখের আলসার কোথায় হয়

* মুখগহ্বরের ভেতরে যেমন ঠোঁট বা গালের ভেতরের দেয়ালে, ঠোঁটের কোণে

* জিহ্বার (ওপরে বা নিচের অংশে, দুই পাশে)

* দাঁতের মাড়ির গোড়ায়

* ওপরের চোয়ালের তালুতে

একই মানুষের একই সঙ্গে একাধিক মুখের আলসার দেখা দিতে পারে। সমগ্র জনগোষ্ঠীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নারী-পুরুষ, শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে কিশোরী, পূর্ণবয়স্ক কিংবা ৪৫–ঊর্ধ্ব নারীদের সংখ্যাই বেশি।

সাধারণ উপসর্গ

* মুখের কোনো স্থানে ক্ষত 

* মুখের ভেতর লাল হয়ে যাওয়া

* স্বাভাবিক খাবারে অতিরিক্ত ঝাল লাগা

* কিছুটা বৃত্তাকৃতির সাদা বা হালকা হলুদ বা ধূসর রঙের কেন্দ্রের চারপাশে লাল রঙের ক্ষত সৃষ্টি

* লাল ক্ষতস্থানে কিছুটা অ্যালার্জি বা চুলকানি অনুভব করা

* প্রচণ্ড ব্যথা সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার সময় জ্বালাপোড়া করা, অতিরিক্ত লালা নির্গত হওয়া

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ এই উপসর্গগুলো ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবে নিচের লক্ষণগুলো কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* উপসর্গবিহীন গালের ভেতর দেয়ালে বা জিহ্বার অংশবিশেষে সাদা ছোপ ছোপ দাগের আবির্ভাব

* দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া বা পুঁজ বের হয়ে দাঁত নড়ে যাওয়া

* ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ

* নতুন এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়া বা আকারে বড় হওয়া

* ক্ষতের সঙ্গে জ্বর আসা

* মুখের হা ছোট হয়ে আসা

ওপরের লক্ষণসমূহ দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মুখের আলসারের প্রকারভেদ

যেসব আলসার সচরাচর বেশি দেখা যায়—

* অ্যাপথাস আলসার 

* বার্নিং মাউথ ডিজিজ 

* লাইকেন প্ল্যানাস 

* হারপেটিক

এ ছাড়া আরও অনেক ধরনের আলসার রয়েছে।

মুখের ঘা বা আলসারের কারণ

* মুখগহ্বরের যত্নে অবহেলা।

* দুর্ঘটনাবশত বেশি জোরে দাঁত ব্রাশ বা শক্ত ব্রাশ ব্যবহারে আঘাত পেলে বা মুখের ভেতরে দাঁতের কামড় বসলে বা ভাঙা দাঁতের অমসৃণ অংশের ঘর্ষণ। 

* খুব গরম খাবার বা পানীয়, অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার, অ্যাসিডিক বা অম্লীয় খাবারের কারণে পুড়ে গিয়ে ছাল বা নরম মাংসপেশির অংশ উঠে গেলে।

* ধূমপান, জর্দা-সুপারি।

* পুষ্টির অভাব খাদ্যে ভিটামিন বি-১২ বা অন্যান্য ভিটামিন, জিংক, ফলিক অ্যাসিড বা আয়রনের অভাব ঘটলে, রক্তস্বল্পতাজনিত কারণে।

* বদহজম বা ডায়রিয়া বা ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম—রোগীদের বেশি হয়, কারণ ঘা বা ক্ষত নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলো সঠিকভাবে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে না।

* হরমোনের ভারসাম্যে তারতম্য ঘটলে (বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন, মেনোপজ কিংবা গর্ভাবস্থায়) বা থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণে।

* অতিরিক্ত স্ট্রেস, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা।

* ছত্রাক (শিশুদের বেশি), ভাইরাস (হারপিস প্রজাতি)-জনিত সংক্রমণ।

* রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম—ডায়াবেটিস রোগী (অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস), এইডস বা ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তি, দীর্ঘদিন কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত।

* বংশগত অ্যালার্জি, খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি।

মুখের ঘা প্রতিরোধের উপায়

* অতিরিক্ত নোনতা, ঝালযুক্ত, অ্যাসিডিক বা আ্যলার্জি হতে পারে, এমন খাবার পরিহার করা।

* অতিরিক্ত পরিমাণে কড়া পানীয় যেমন চা-কফি, অ্যালকোহল পান বর্জন করুন।

* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

* ধূমপান, জর্দা পরিহার করুন।

* খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট (ভিটামিন এ, সি, ই) সমৃদ্ধ খাবার রাখা যেমন শাকসবজি, সবুজ রঙিন ফল (পেঁপে, আম, গাজর, লেবু, পেয়ারা, কাঠবাদাম, রঙিন ক্যাপসিকাম) ইত্যাদি।

* আয়রন এবং ভিটামিন বি-১২, ফলিক অ্যাসিডের অভাব পূরণে কচুশাক, কাঁচা কলা, দুধ, টক দই, চর্বি ছাড়া মাংস গ্রহণ করা।

* নির্দিষ্ট সময় অন্তর দাঁতের পরীক্ষা করা, দাঁতের গোড়ায় প্ল্যাক বা ময়লা বা দাঁতের ক্যারিজজনিত রোগ হলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা।

* মুখগহ্বর সর্বদা পরিষ্কার রাখতে সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করতে হবে, নরম ও উন্নত মানের দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করা, তিন মাস পরপর ব্রাশ পরিবর্তন করা।

* ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

* মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা এড়িয়ে চলতে হবে

* বারবার মুখের ক্ষতে হাত দেওয়া বা পুঁজ বের করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তাৎক্ষণিক ব্যথা থেকে কিছুটা আরামের জন্য বেনজিড্যামিন হাইড্রোক্লোরাইড মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই সাত দিনের বেশি নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২০০ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখগহ্বরের ঘা বা আলসারের মাধ্যমে। এর মধ্যে কিছু ঘা বা ক্ষতকে ‘প্রি-ক্যানসার লিশন’ বা ‘ক্যানসার পূর্বাবস্থার ক্ষত’ বলা হয়। অবহেলিত মুখের ঘা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে।

অবহেলা নয়

মুখের ঘা নিয়ে তাই অবহেলা নয়। মুখের ঘায়ের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড দন্তচিকিৎসকের (বিডিএস) পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের শরণাপন্ন হতে হবে।

সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, দুই সপ্তাহ বা ১৫ দিনের বেশি যদি স্থায়ী হয়, অবশ্যই বায়োপসি বা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আলসারের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা গেলে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং কার্যকরী।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, মুখ ও দাঁতের যত্ন নিন।

তথ্যসূত্র: prothomalo.com
গর্ভপাত বা মিসক্যারেজের কারণ - Causes abortion or miscarriage
জবার উপকারিতা ও ঔষধি গুণ
সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা
ময়েশ্চারাইজার বানানোর নিয়ম
শ্বেত দূতী এর উপকারিতা - Benefits of coral swirl
ত্বকে বরফ লাগানোর উপকারিতা-Benefits of applying ice to the skin