ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা - Breast cancer symptoms and treatment
Breast cancer treatment

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা - Breast cancer symptoms and treatment

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকের ধারণা, স্তন ক্যান্সার শুধু নারীর ক্ষেত্রেই হয়। আসলে এতে নারী-পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এই রোগে পুরুষের তুলনায় নারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারীর ক্ষেত্রে বয়স চল্লিশ পার হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। আবার দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পদ্ধতিও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুহার কমছে না তেমন। এর একমাত্র কারণ হলো দেরিতে রোগ চিহ্নিতকরণ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরেও যে অসংখ্য নারী এই অসুখের বলি হন, তার একমাত্র কারণ, স্তনের অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব বুঝতে না-পারা অথবা বুঝেও উদাসীন থাকা।

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার কি? 

চিকিৎসকেরা বলছেন, স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।


ব্রেস্ট ক্যান্সারের ৮টি লক্ষণ বা উপসর্গ

১) স্তনে চাকা ও লাম্প বা পিন্ড অনুভব করা যা ব্যথাহীন ও খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে আকারে।

২) স্তনের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন যেমন চামড়া কুঁচকে যাওয়া, কমলার খোসার মত ছোট ছোট ছিদ্র দেখা দেয়া, চামড়ায় টোল পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা ইত্যাদি।

৩) নিপল (বোঁটা) দিয়ে রস নিঃসরণ হওয়া বা রক্তপাত হওয়া।

৪) নিপল ও তার আশেপাশের (Areola) কালো অংশা ফুঁসকুড়ি ও চুলকানি হওয়া।

৫) স্তনে দীর্ঘদিন ব্যথা অনুভূত হওয়া।

৬) স্তনের আকার পরিবর্তন হওয়া।

৭) গলার কাছে অথবা বগলে চাকা অনুভব করা।

৮) স্তনের বোটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া অথবা বোটা দিয়ে পুঁজ নির্গত হওয়া।

স্তন ক্যান্সারের কারণ

বয়ঃসন্ধির পর থেকেই মেয়েদের স্তন-এর বিকাশ ঘটতে থাকে। অজস্র কলা-কোষ, রক্তজালিকা, গ্রন্থি ও স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাট-এর সমন্বয়ে স্তন গঠিত হয়। যখন দেহের কোষগুলী স্বাভাবিক এর তুলনায় দ্রুত ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মৃত্যু ঘটে না তখন ওই কোষ গুলী টিউমারের আকারে জমতে থাকে এবং ক্যান্সারের সৃষ্টি করে এই অস্বাভাবিক কোষগুলি আশে-পাশের স্বাভাবিক বা সুস্থ কোষগুলি থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, খাদ্য ও অন্যান্য উপাদান গ্রহণ করে । কোষগুলি আক্রান্ত স্তনের জালিকাবাহ বা রক্তবাহের মাধ্যমে দেহের লিম্ফ নোডগুলিতে এবং দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে তোলে । স্তনের দুধ উৎপাদনকারি নালীগুলি র কোষগুলির সর্ব প্রথম এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

দেহে হরমোন এর ভারসাম্যহীনতা , আধুনিক জীবনযাত্রা এবং পরিবেশগত সমস্যা স্তন ক্যান্সারের (Breast Cancer) ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তবে এইসব ঝুঁকির কারণ না থাকলেও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হয়। তার কারণ হল তার জিন । কারও মা বা তার বংশের ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে ভবিষ্যতে তার স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।

ঘরে বসেই যেভাবে স্তন পরীক্ষা করা যায়

২০ বছর বয়স থেকেই প্রত্যেকের উচিত স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন পরীক্ষা করা। মাসিক শুরুর ৫-৭ দিন পর এই পরীক্ষা করতে হবে যখন স্তন নরম ও কম ব্যথা থাকে।

১) শুয়ে বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্তনকে চারটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি অংশের অভ্যন্তরে কোন চাকা বা দলার মতো আছে কিনা তা অনুভব করুন।

২) স্তনের আকৃতির বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখুন।

৩) সাধারণত দুই স্তনের আকার এক রকম নাও হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাই চিন্তার কিছু নেই।

৪) নিপল থেকে অকারণে কোন তরল রস বের হয় কিনা তা লক্ষ্য করুন। তবে প্রসব পূর্ববর্তী বা প্রসব পরবর্তী নিঃসরণকে এর সাথে মিলিয়ে ফেলা চলবে না।

৫) বগলে কিংবা ঘাড়ে কোন চাকা অনুভব করতে পারছেন কিনা লক্ষ্য করুন।

৬) আপনার বাম হাত দিয়ে ডান পাশের ও ডান হাত দিয়ে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করুন।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি

প্রথমেই বিশেষজ্ঞরা রোগীর রোগের history নিয়ে থাকেন। শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়। রোগীর বয়সের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখেই বিশেষজ্ঞরা তা দিয়ে থাকেন। যেমন-

* ম্যামোগ্রাফি * আলট্রাসনোগ্রাফি * এমআরআই * FNAC -চাকা থেকে * বায়োপসি/মাংস পরীক্ষা

ম্যামোগ্রাম– এটি একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে, এর সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিকতা এবং ক্যান্সারের কারণে স্তনে সৃষ্ট লাম্প বা শক্ত মাংসপিণ্ড এর খোঁজ করা হয়।

ইউ.এস.জি ও এম.আর.আই– শিষ্ট বা টিউমারের প্রকৃতি এবং ক্যান্সারের বিস্তার জানতে ব্যবহৃত হয়।

বায়োপসি– এক্ষেত্রে দেহের আক্রান্ত স্থান বা টিউমার থেকে কোষ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এটির সাহায্যে ক্যান্সারের প্রকৃতি এবং হরমনের সক্রিয়তা নিশ্চিত করা হয়।


চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েকভাগে বিভক্ত-

* সার্জারি * কেমোথেরাপি * রেডিওথেরাপি

* হরমোন থেরাপি * টার্গেটেড থেরাপি।

সার্জারি : স্তন ক্যান্সরের যে কোনো পর্যায়েই রোগীর সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারি করা যাবে কিনা বা কী ধরনের সার্জারি হবে তাই প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয়। সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জন এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দু’জনে মিলে। অনেক সময় শুধু টিউমার কেটে ফেলা হয়। অনেক সময় পুরো বেস্টই ফেলে দেয়া হয়।

কেমোথেরাপি : প্রায় সব রোগীকেই কেমোথেরাপি নিতে হয়। সার্জারির আগে বা পরে এমনকি রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও কেমোথেরাপি কাজ করে। যদিও কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবুও রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য কেমোথেরাপির বিকল্প নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা, কেমোথেরাপির কার্যকারিতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত পরামর্শ দেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে কম হয় তারও ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।

রেডিওথেরাপি : বিশেষ ধরনের মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ কেমোথেরাপির পরই রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুধু breast এ নয়, যদি Cancer হাড়েও ছড়িয়ে পড়ে তাহলেও সেখানে রেডিও থেরাপি দিয়ে হাড়ের ভাঙন বা ফ্র্যাকচার রোধ করা যায়।

হরমোন থেরাপি : সব ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীর জন্য হরমোনের দরকার নেই। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই হরমোনের চিকিৎসা কাদের লাগবে তা শনাক্ত করেন।

টার্গেটেড থেরাপি: এ থেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেমন- Transtyuumab, Lapatinib, Bevacizumab ইত্যাদি।

গর্ভপাতের মারাত্মক কয়েকটি লক্ষণ - Some serious symptoms of miscarriage
দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায় - Ways to remove black stains on teeth
ঢাকার কিডনী বিশেষজ্ঞদের তালিকা
বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল
আমলকির সিরাপের উপকারিতা
সাদাস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove vaginal discharge
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর হোমিওপ্যাথি ঔষধ - Homeopathy medicine to reduce excessive sweating
মেয়েদের ব্রেস্ট ব্যথার কারণ - Causes of breast pain in girls
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া প্রতিকার - Home remedies for heartburn during pregnancy
দাঁতের শিরশির ভাব দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to get rid of toothache