গর্ভবতী অবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় কি? - What to do if you have back pain while pregnant?
গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ হবু মায়েরা পিঠ এবং কোমর ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এই সময়টা নারী জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত এবং জটিল সময়। মা হতে যাচ্ছি, এই সুখবরটা যেকোনো মেয়ের জন্য পরম প্রাপ্তি! এই ধরনের ব্যথা এই সময়টাকে কষ্টের করে তোলে। অনেকের জন্য এই ব্যথা তেমন সমস্যা নাও হতে পারে, আবার কারো জন্য এটা খুবই মারাত্মক ও অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।
কোমর ব্যথা কেন হয়?
* প্রজেস্টেরন ও রিলাক্সেশন হরমোন অন্তঃসত্ত্বা নারীর অস্থিসন্ধির হাড়গুলোকে নরম ও ঢিলে করে দেয়। এর কারণ সন্তান জন্মদানের জন্য মায়ের শরীরকে প্রস্তুত করা। অস্থিসন্ধির এই পরিবর্তনের কারণে কোমরব্যথা হয়।
* সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জরায়ু বড় হতে থাকে। জরায়ুর এই পরিবর্তন পেটের পেশিকে দুর্বল করে। এর ফলেও কোমরব্যথা অনুভূত হয়।
* গর্ভকালে নারীর ওজন বৃদ্ধি পায়। এই বাড়তি ওজন বহন করতে গিয়ে কোমরের হাড়ে ব্যথা হয়।
* আমাদের পেলভিসে রাউন্ড লিগামেন্ট থাকে। জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে এটি রাবাবের মতো বড় হতে থাকে এবং ক্রমশ পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে হালকা নড়াচড়াতেও অন্তঃসত্ত্বা লিগামেন্টে ব্যথা পান।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা সারানোর উপায়
এখানে কোমর ব্যথা কমানোর ৯টি টিপস তুলে ধরা হয়েছে—
১. মেঝে থেকে কিছু তুলতে হলে আগে হাঁটু ভাঁজ করে নিন। পিঠ সোজা রেখে এরপর জিনিসটি তুলুন। সামনে ঝুঁকে মেঝে থেকে কোনো কিছু তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. ভারী জিনিস ওঠানামা করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. কোনোদিকে ঘুরতে হলে খেয়াল রাখুন যেন মেরুদণ্ড বা শিরদাঁড়ার হাড় সোজা থাকে ও মোচড় না খায়। শরীরের কেবল ওপরের অংশটি না বাঁকিয়ে পুরো শরীর ঘুরিয়ে ফেলুন।
৪. শরীরের ওজন দুই পায়ে সমানভাবে বণ্টন করার জন্য হিল জুতা না পরে ফ্ল্যাট বা সমতল জুতা পরুন।
৫. কেনাকাটা করার সময়ে হাতে ব্যাগ বহন করতে হলে এমনভাবে বহন করুন যেন দুই হাতের ব্যাগের ওজনের মধ্যে ভারসাম্য থাকে।
৬. ঘরে অথবা অফিসে বসে কাজ করার সময়ে পিঠ সোজা রাখুন। গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য বিশেষ বালিশ (ম্যাটারনিটি সাপোর্ট পিলো) ব্যবহার করতে পারেন।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের কয়েক মাস যথেষ্ট বিশ্রামের বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
৮. কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এ ছাড়া শরীর ম্যাসাজ বা হালকাভাবে মালিশ করতে পারেন।
৯. এমন জাজিম, তোষক ও ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন যা সঠিকভাবে শরীরের ভার বহন করতে পাররে। প্রয়োজনে নরম জাজিমের নিচে একটি হার্ডবোর্ড রেখে সেটি কিছুটা শক্ত করার ব্যবস্থা করতে পারেন।
ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এই কোমর ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। সবসময় ঔষধের সাথে থাকা কাগজে যে নির্দেশনা লেখা আছে সেটি পড়ে নিতে হবে।
চিকিৎসা
* ব্যথার স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিন কিছুক্ষণ। এতে ব্যথা অনেকটা কমবে। আইসব্যাগ না থাকলে বরফ তোয়ালে দিয়ে মুড়ে সেঁক দিন। এ ছাড়া গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিলেও ভালো ফল পাবেন। প্রতিদিন ২০ মিনিটের মতো এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। তবে পেটে ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেবেন না।
*পেটের বৃদ্ধির কারণে এ সময় সোজা হয়ে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে। চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব সোজা হয়ে হাটঁতে। এতে কোমরে চাপ কিছুটা কমবে।
* কোমরব্যথা দূর করতে মাসাজও উপকারী। যখন ব্যথা বেশি হবে, তখন খালি হাতে কোমরে হালকা মাসাজ করতে পারেন। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
* গর্ভকালে কোমরব্যথা একটি পরিচিত সমস্যা। পুরোপুরি কোমর ব্যথা হয়তো নিরাময় হবে না। তবে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চললে ব্যথার তীব্রতা কমবে।