মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ ও প্রতিকার - Back pain causes and remedies
Back pain causes and remedies

মেরুদণ্ডের ব্যথার কারণ ও প্রতিকার - Back pain causes and remedies

মেরুদণ্ডের ব্যথা বলতে বোঝায় ঘাড়, কোমর ও পিঠে ব্যথা। পৃথিবীজুড়ে ৪০–৫০ ভাগ মানুষ মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভোগে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২২ থেকে ৪৮ শতাংশ মানুষ এক মাসের ভেতর মেরুদণ্ডের কোনো না কোনো ব্যথায় (ঘাড়, পিঠ, কোমরব্যথা) ভোগে। মেরুদণ্ডের ব্যথাকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়। ঘাড়ের ব্যথা, পিঠের ব্যথা, কোমরের ব্যথা এবং কক্কিস বা মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে ব্যথা।

মেরুদণ্ড কেবল একটি হাড় নয়। অনেকগুলো ছোট ছোট হাড় বা কশেরুকার সমন্বয়। মাথা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে মেরুদণ্ডের উৎপত্তি। এর শেষ হয়েছে পশ্চাদ্দেশে। ঘাড়, পিঠ এবং কোমর—মেরুদণ্ডের এই তিন অংশ। মেরুদণ্ডের হাড়, দুই হাড়ের মাঝের ইন্টারভার্টিবাল ডিস্ক, লিগামেন্ট, মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের মাঝে যে স্নায়ু আছে এই সবকিছুর কোনো না কোনো সমস্যার জন্য মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে। বেশির ভাগ মানুষেরই এ ব্যথার অভিজ্ঞতা আছে। পজিশনগত কারণে সবচেয়ে বেশি এ ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে।

মেরুদণ্ড ব্যাথার কারণ

১) আপনি কি সারা দিন এক জায়গায় বসে কাজ করেন? দীর্ঘদিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ ভাবে কাজ করতে হলে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডের সমস্যা হতেই পারে।

২) যদি দীর্ঘদিন, নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হয়, সে ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।

৩) খুব ভারি ব্যাগ (যেমন, ল্যাপটপ ব্যাগ, বইয়ের ব্যাগ বা অন্যান্ত ভারি জিনিসপত্র) নিয়মিত পিঠে নিলে কাঁধে আর পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪) পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে যেমন শিরদাঁড়ার সমস্যা হতে পারে, তেমনই অতিরিক্ত বিশ্রাম, আলস্যের ফলেও মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।

৫) ঘুমানোর সময় অনেকেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকেন। অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে পিঠ, কোমর বেঁকিয়ে শোওয়ার অভ্যাস মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে।

৬) নিয়মিত হাই হিল পরার অভ্যাস বা শক্ত জুতো পরার অভ্যাস মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকে পরবর্তীকালে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

৭) দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে মোবাইলে চ্যাট বা ল্যাপটপে ব্যাস্ত থাকলে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পরবর্তীকালে এর ফলে মেরুদণ্ডে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

৮) দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি বা বাইকে ড্রাইভ করলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।

৯) আচমকা খুব ভারী কোনও জিনিস তোলার চেষ্টায় টান পড়ে মেরুদণ্ডে চোট লাগতে পারে।

১০) খুব শক্ত, অসমান বিছানায় দীর্ঘদিন ধরে শুলে মেরুদণ্ডের সমস্যা হতে পারে।

মেরুদণ্ড ব্যাথার প্রতিকার

১. শিরদাঁড়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক হাঁটা-চলা ও বসার ভঙ্গিমা মেনে চলতে হবে।

২. ধূমপানের প্রভাবে শিরদাঁড়ায় সঙ্গে যুক্ত কোষ ও স্নায়ুগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। তাই এই নেশা থেকে দূরে থাকাই ভাল।

৩. ভারী জিনিস সামনের দিকে ঝুঁকে কোনও কিছু তোলার অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইধরনের কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।

৪. বাথরুমে কোমট ব্যবহার করুন।

৫. অনেকক্ষণ বসে একটানা কাজ করা বা পড়াশোনা করলে টেবিল, চেয়ারে বসে করা উচিত। একটানা না বসে থেকে এক-দু’ ঘণ্টা অন্তর অন্তর হাঁটা চলা করা উচিত।

৬. শিরদাঁড়ার অপারেশনের পর প্রাথমিক নিয়ম মানার পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপি করতে হবে। এছাড়া অপারেশনের পর শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজাভাবে না উঠে পাশ ফিরে উঠতে হবে।

৭.নিয়মিত ভিটামিন ডি শরীরের প্রবেশ জরুরি। পিঠে রোদ লাগালে শিরদাঁড়া ভাল থাকে।

৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা দরকার।

মেরুদণ্ডের বিভিন্ন ব্যথায় প্রচলিত চিকিৎসা

মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণতো অর্থোপেডিক, মেডিসিন ও নিওরোমেডিসিন চিকিৎসক সমস্যা নির্ণয় করে উপযুক্ত ওষুধ প্রদান করেন। মেরুদণ্ডের সমস্যা যদি কোনো প্যাথলজিকেল কারণে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মেডিসিন চিকিৎসা প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। 

বিজ্ঞানসম্মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

গবেষণা বলছে, শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি মেরুদণ্ডের সমস্যা মেকানিক্যাল কারণে হয়ে থাকে। মেকানিক্যাল সমস্যার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের সমস্যার অন্যতম প্রচলিত চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। বাংলাদেশেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যাবস্থা প্রচলিত আছে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক প্রথমে রোগীর সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে, রোগ নির্ণয় করে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।

সধারণত যেসব ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সেসব বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহই রোগীর চিকিৎসায় ব্যাবহার করেন। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি সমুহ নিচে দেওয়া হলো:

ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি:

একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তার দক্ষ হাতে রোগীর মেরুদণ্ডের বিভিন্ন গঠন উপাদান যেমন ডিস্ক, ছোট জয়েন্ট, লিগাম্যান্ট, মাংশপেশীর বিভিন্ন সমস্যা সংশোধন করতে বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। এদের ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি হলো- ম্যাক্যাঞ্জি কনসেপ্ট, মেইটল্যান্ট কনসেপ্ট, সিরিয়াক্স কনসেপ্ট, ম্যালীগান টেকনিক, মাল্টিমডেল ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি টেকনিক।

২০১৯ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মেরুদণ্ডের সমস্যা যদি মেকানিক্যাল কারণে হয়ে থাকে তবে ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি কোমর, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসায় অনেক বেশি কার্যকরী ফলাফল দিতে পারে।

ইলেক্ট্রোথেরাপি:

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা উপকরণ হিসেবে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক মেশিন বা ডিভাইস বেশ প্রচলিত আছে। এদের ইলেক্ট্রোথেরাপি বলে। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রোথেরাপি মেশিনের মধ্যে ইউএসটি, এসডব্লিউডি, এমডব্লিউডি, ট্রাকশন, লেজার, আইএফটি, টিইএনএস, আইআরআর বহুল প্রচলিত।

তবে কোনো কোনো সমস্যায় ইলেক্ট্রোথেরাপি প্রয়োগ করতে হবে এবং তার মাত্রা বা ডোজ কি হবে তা শুধু একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকই নির্ধারণ করেন।  

ইলেক্ট্রোথেরাপি ব্যথা কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে, টিস্যু ঠিক করতে, মাংশপেশী শক্তিশালি করতে ভূমিকা রাখে। যদিও অনেকেই ইলেক্ট্রোথেরাপিকে চিকিৎসা সহায়ক উপকরণ মনে করেন, তবে কিছু কিছু ইলেক্ট্রোথেরাপি মেশিনের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা বৈজ্ঞানীক গবেষণায় সমর্থিত নয়।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ইলেক্ট্রোথেরাপির ব্যাবহার ম্যানিপুলেটিভ থেরাপির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে করলে কোমর, ঘাড় ও পিঠের ব্যথার রোগীকে অনেক দ্রুত আরোগ্য প্রদান করা যায়।

ফিজিওথেরাপি কাকে বলে? 

ফিজিওথেরাপি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভৌতিক পদ্ধতির সাহায্যে করা হয় । যেমন আলো, উত্তাপ , ঠান্ডা, বি‌দ্যুৎ , ব্যায়াম ও ম্যাস্যাজ প্রভৃতি। দেহকে সুস্থ রাখতে এবং উপসর্গকে দমন করতে এই প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করা হয় , একে ফিজিওথেরাপি বা ফিজিক্যাল থেরাপি বলা হয়। ফিজিও অর্থে ভৌত এবং থেরাপি অর্থে চিকিৎসাকে বোঝায়

ফিজিওথেরাপি কখন প্রয়োজন

ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করতে সময় নেয়। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। এ ছাড়া নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন যারা, তাদেরও এই চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।

পাইলসের কার্যকরী ঘরোয়া সমাধান
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় - Ways to avoid dengue
বর্ষায় সর্দি-কাশি দূর করার উপায় - Ways to get rid of cold and cough in monsoon
মোনাস ১০ খাওয়ার নিয়ম
কারমিনা সিরাপ এর উপকারিতা
মেয়েদের ব্রেস্ট ঝুলে যাওয়ার কারণ - Causes of sagging breasts in girls
পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
মেয়েদের ব্রেস্ট টাইট করার উপায় - Ways to tighten the breasts of girls
সাদাস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove vaginal discharge
দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ - Symptoms of gum cancer