গর্ভাবস্থায় ক্ষুধামান্দ্য-কারণ এবং প্রতিকারসমূহ-Aversion to food during pregnancy
গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বেশীরভাগ হবু মাকেই নির্দিষ্ট কোন খাবারের প্রতি আসক্তি এবং কিছু খাদ্যে অরুচি এই দুটি বিপরীতধর্মী পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে দেখা যায়। সাধারণত খাদ্যের অরুচি দেখা যায় গর্ভাবস্থার প্রথম ও তৃতীয় তিন মাসে।
অ্যাপেটাইট নামক জার্নালে প্রকাশিত ২০০২ সালের গবেষণায় জানানো হয় যে, ৬১% গর্ভবতী নারীর খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয় এবং ৫৪% গর্ভবতী নারীর খাদ্যের অরুচির অভিজ্ঞতা হতে দেখা যায়। এছাড়াও ৬০% গর্ভবতী নারীর বমি বমিভাব এবং খাদ্যের অরুচির অভিজ্ঞতা হতে দেখা যায়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তনেই সমাধান
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে খাদ্যের অরুচির সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় নারীর স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি তীব্র হয় বলে শক্তিশালী গন্ধে বমির উদ্রেক করে। এর ফলে নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অরুচি তৈরি হয়।
সাধারণত যে খাবারগুলোর প্রতি অরুচি তৈরি হয় সেগুলো হল – মুরগী ও গরুর মাংস, ডিম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ, উচ্চ চর্বিযুক্ত এবং ভাজা খাবার, পেঁয়াজ, রসুন, চা ও কফি এবং মশলাদার খাবার।
১. টক বা ঝালজাতীয় খাবার কিংবা একটু ভিন্ন স্বাদের কোনো খাবার খেলে অনেকেই কিছুটা রুচি ফিরে পান।
২. যেসব খাবারে অরুচি হয় তার পরিবর্তে বিকল্প পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন। যেমন: আপনার মাছ খেতে অরুচি হলে এর পরিবর্তে মাংস, ডিম ও দুধ একটু বেশি করে খান। কোনো নির্দিষ্ট ধরনের পুষ্টিগুণের সব খাবারের প্রতি অরুচি হলেও চেষ্টা করুন অল্প অল্প করে কয়েকবারে খাওয়ার। প্রয়োজনে রান্নার পদ্ধতি বদল করে নিজের পছন্দমতো উপায়ে রান্না করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে অপুষ্টি প্রতিরোধে অরুচি হলেও কোনো পুষ্টিকর খাবারকে তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে দেবেন না।
৩. শরীর বেশি খারাপ লাগলে জোর করে খেতে যাবেন না। বরং শুয়ে বিশ্রাম নিন।
৪. নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার বিষয়ে নমনীয় হোন। সকালে হয়তো আপনার ডিম খেতে ভালো লাগবে না কিন্তু একই ডিম দুপুরে খেতে ভালো লাগতে পারে।
৫. গন্ধযুক্ত খাবারে অরুচি হলে তার পরিবর্তে সাময়িকভাবে গন্ধহীন, হালকা ও শুকনা খাবার খেতে পারেন। যেমন: মুড়ি, চিড়া অথবা বিস্কুট। তবে এসব খাবারে সব পুষ্টি উপাদান থাকে না। তাই এসব খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের খাবারগুলোও অল্প অল্প কয়েকবারে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৬. আপনার খাবারের মেনু আগে থেকেই ঠিক না করে খাওয়ার আগ মুহূর্তে নির্ধারণ করুন। যাতে কী খাবেন তা নিয়ে আপনাকে অনেকক্ষণ চিন্তা করতে না হয়। ফলে আপনার মস্তিষ্ক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ পাবেনা। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ঠিক খাবার খাওয়ার সময়ে খেতে হবে এমন না করে যখনই মন চাইবে তখনই অল্প করে খান। এতে আপনার শক্তির মাত্রা ঠিক থাকবে এবং আপনি ক্লান্ত হবেন না।
৭. খাবার রান্নার সময় পেঁয়াজ বা রসুনের পরিবর্তে তুলসী, রোজমেরি, সেজ, থাইমের মত ভেষজ যোগ করতে পারেন। এতে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পাবে।
৮. যদি আপনার চা বা কফির প্রতি অরুচি হয় তাহলে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ এগুলোতে যে ক্যাফেইন থাকে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এগুলোর পরিবর্তে ঘরে তৈরি লেমনেড বা ফলের জুস পান করুন।
সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে খাদ্যের অরুচির সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু যেকোন সময়ই এটা হতে পারে। সন্তান জন্মের পরে এটি দূর হয়ে যায়। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এটি প্রসবের পরেও অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
তথ্যসূত্র: টপ টেন হোম রেমেডিস