বাচ্চা বুকের দুধ কম পেলে করণীয় কী
মায়ের বুকের দুধ যে নবজাতকের জন্য সবচেয়ে সেরা খাবার সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। এবং প্রত্যেক মায়ের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা থাকে বাচ্চা যে ভালো থাকে, ভালো ভাবে খায় এটাই। বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই সাধারণ এবং সহজ একটি বিষয়। তবুও কোন কোন সময় এই সাধারণ কাজটিও সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হয়েছেন এবং সহযোগিতা করার মত পরিবেশ পান নাই তাড়া বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। ফলে, বুকের দুধের পরিমাণ (প্রবাহ) কমে যায়। বাচ্চা পরিমানমত দুধ পায় না। কেন মায়ের বুকের দুধের প্রবাহ কমে যায় এবং কিভাবে প্রবাহ ধরে রাখা যায় বা বৃদ্ধি করা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা করবো।
বাচ্চা বুকের দুধ কম পাওয়ার কারন
১।উদ্বেগ, পারিবারিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি এবং কুসংস্কারের কারণে বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
২।মায়ের অনিয়মিত ঘুম বা অনিদ্রা ও একটি বড় কারণ।
৩।কোনো অসুখ বা কিছু ওষুধের কারণেও বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
৪। বাচ্চাকে বার বার ফিডারে দুধ দেয়া হলে শিশু খুব আরামে দুধটা খেতে পারে কারন ফিডারে অল্প চাপে বেশি দুধ পায়। কিন্তু মায়ের দুধ পেতে বাচ্চাকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এজন্য সে আর মায়ের স্তন মুখে নিতে চায় না।
৫।মা অপুষ্টিতে ভুগলে,পুষ্টিকর খাবার না খেলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চা দুধ পাবে না।
৬।বাচ্চা জন্মের সময় মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরন মায়ের বুকের দুধ কম হবার পিছনে বিশেষ একটি কারণ।
৭। বাচ্চার জন্মের সময় প্রি-ম্যাচুউর হলে মায়ের স্তনের গ্রন্থি ও কোষের বিকাশে বাধা পায় ফলে বুকের দুধ কম হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৮। সঠিক উপায়ে বাচ্চাকে না খাওয়ালে (breastfeeding position) ও বাচ্চা দুধ কম পেতে পারে।
৯। আগে ব্রেষ্ট সার্জারী হয়ে থাকলে, সেটি ও দুধ কম হওয়ার কারন হতে পারে।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায়
এমন কিছু খাবার রয়েছে যা দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে বুকে দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় হচ্ছে মেথি বীজ। কিছু গবেষণা বলছে যে, মেথি বীজ বুকের দুধ উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে। এই বীজে দুধের উৎপাদন বাড়াতে পারে এমন হরমোন প্রিকারসর রয়েছে, কিন্তু গবেষকরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানেন না যে কিভাবে এটা ঘটে। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে, স্তন মডিফায়েড সোয়েট গ্ল্যান্ড হওয়ার কারণে মেথি বীজ দুধ উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করতে পারে। এই বীজ খাওয়ার ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বুকে দুধের পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১৮ সালের একটি রিভিউ গবেষণা মেথি বীজের এ উপকারিতাকে সমর্থন করছে। আপনি মেথি চা পান করতে পারেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেথি সাপ্লিমেন্ট/ফেনুগ্রীক ক্যাপসুলও সেবন করতে পারেন।
বেশি করে তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে- এসব খাবার বুকে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। বেবি অ্যান্ড কোম্পানির সিএনএম ডিএনপি মার্গারেট বাক্সটন জানান, ‘কৃষিজাত খাবারে প্রচুর পানি থাকে, তাই আপনি এসব খাবার খেয়ে পানি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। এছাড়া ফল ও শাকসবজি এমন পুষ্টি সরবরাহ করে যা দুধ উৎপাদন করতে শরীরের প্রয়োজন হয়।’ বুকে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে আপনার সালাদ, স্ন্যাক ও রেসিপিতে বিভিন্ন বর্ণের ফল ও শাকসবজি রাখতে পারেন।
পানি
ডা. বাক্সটন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরকে প্রচুর পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ স্তন্যপানে মায়ের শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘স্তন্যপানকালে চিনিযুক্ত শরবত অথবা কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো উচিত। এসময় সচরাচরের চেয়ে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে। বাচ্চাকে প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এক গ্লাস পানি পানে অভ্যস্ত হোন। আপনি পর্যাপ্ত পানি না খেলে মেথির উপকারিতাও পাবেন না।’
হার্বাল চা
অ্যাক্ট ন্যাচারাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেসের নোটারি পাবলিক পাম পিন্টো জানান, ‘অনেক অসুস্থতায় হার্বাল চা পানে উপশম পাওয়া যায় এবং কিছু হার্বাল চা দুধ উৎপাদন ও শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।’ বুকে দুধের পরিমাণ বাড়াতে পারে এমন একটি হার্বাল চা হচ্ছে বিছুটির চা বা নেটল টি। বিছুটিতে উচ্চ মাত্রায় আয়রন থাকে, যা ক্লান্তি দূর করে। এছাড়া এই হার্ব দুধ উৎপাদনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
মৌরি
মৌরি সালাদ, মৌরি বীজ, মৌরি স্যূপ ও মৌরি রেসিপি- যেভাবেই খান না কেন, এই হার্বটি ল্যাকটেশন বা দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। নোটারি পাম পিন্টো বলেন, ‘আপনার বুকে দুধের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে সালাদে কাঁচা মৌরি যোগ করতে পারেন অথবা অন্যান্য শাকসবজির সঙ্গে রান্না করে খেতে পারেন। ফ্লেভার সমৃদ্ধ এই হার্ব থেকে ল্যাকটেশন বিষয়ক উপকারিতা পাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে মৌরি বীজের চা বা ফেনেল সিড টি পান করা।’
গরম মসলা
তরকারিতে ব্যবহারের জন্য একটি জনপ্রিয় উপকরণ হচ্ছে গরম মসলা। গরম মসলা হচ্ছে বিভিন্ন মসলার ব্লেন্ড যা তরকারিতে ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে বীজ, জিরা বীজ, মৌরি বীজ, জায়ফল ও তেজপাতা দিয়ে আপনি নিজেই ঘরে গরম মসলা তৈরি করতে পারবেন। মসলার এই ব্লেন্ড স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকার করে। এটি শরীরকে উষ্ণ করতে পারে বলে এর নাম দেয়া হয়েছে গরম মসলা। আপনার স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়াতে তরকারিতে গরম মসলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। এনওয়াইসি সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েটসের সার্জন রায়ান নেইনস্টেইন বলেন, ‘গরম মসলা শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় পাওয়া গেছে, মসলার এই ব্লেন্ড দুধের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করতে উদ্দীপনা যোগাতে পারে।’
আকুপাঙ্কচারে বুকের দুধ বাড়ে
কিছু চিকিৎসকের মতে স্তন্যপান করানো নারীদের বুকে দুধের পরিমাণ বাড়াতে আকুপাঙ্কচার সহায়তা করতে পারে। নিউরোপ্যাথিক ফিজিশিয়ান রালফ এসপোজিতো বলেন, ‘স্তনে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আকুপাঙ্কচার ভালো কাজ করে। স্মল ইন্টেস্টাইন ১১ নামক একটি পয়েন্ট প্রেগন্যান্সির পর নারীদের প্রোল্যাকটিন লেভেল বা দুধ উৎপাদনে উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হরমোনের মাত্রা বাড়াতে পারে।