অণ্ডকোষ ফুলে গেলে করণীয়
অণ্ডকোষে ব্যথা হলে কিংবা অণ্ডথলির (যে থলির মধ্যে অণ্ডকোষ থাকে) একপাশে বা দু’পাশে ব্যথা হলে সেটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো বয়সের পুরুষদের এমনকি নবজাতকেরও অণ্ডথলিতে ব্যথা করতে পারে। অণ্ডকোষ হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ। শরীরে দু’টি অণ্ডকোষ থাকে। এই অঙ্গ বা গ্রন্থিগুলো খুবই সংবেদনশীল। খুব সামান্য আঘাতেও ব্যথা হতে পারে। অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে যেকোনো ধরনের ব্যথা হলেই চিকিৎসাগত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে অথবা তীব্র হতে পারে। এ ব্যথা আঘাতের কারণে হতে পারে, ব্যথার সাথে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অণ্ডথলিতে ব্যথার সাথে রোগীর অণ্ডথলিতে চাকা, জ্বর, অণ্ডথলির ত্বক লাল, প্রস্রাবে রক্ত, মূত্রনালী পথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ ও গলা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকলে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে বন্ধ্যাত্ব ও পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। রোগীর তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকবে। অনেক সময় রোগীর অপারেশন করে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ব্যথার উৎস অণ্ডকোষ নয়, ব্যথা শুরু হয় অণ্ডথলি এলাকায়। অণ্ডকোষের কাজ হলো শুক্রাণু তৈরি করা। তাই অণ্ডকোষকে সুস্থ রাখা অপরিহার্য। প্রতিটি অণ্ডকোষের উপরে থাকে এপিডিডাইমিস। এই এপিডিডাইমিসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়। অণ্ডথলি হচ্ছে এমন একটি থলি যা অণ্ডকোষ ও এপিডিডাইমিসকে সুরক্ষা দেয়।
অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ
অণ্ডকোষ কিংবা অণ্ডথলির ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে -
আঘাত
হার্নিয়া
কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিওর
হাইড্রোসিল
অণ্ডকোষের প্রদাহ
অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া
ভ্যারিকোসিল বা অণ্ডথলির শিরার স্ফীতি
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ
গোপনাঙ্গ এলাকায় শল্য চিকিৎসা
ঘরোয়া চিকিৎসা
১. ক্র্যানবেরি জুস
অণ্ডকোষে ইনফেকশনের কারণ যদি হয় ইউটিআই তাহলে ক্র্যানবেরি জুস খেতে হবে। প্রতিদিন ১ গ্লাস করে চারদিন খেলেই ব্যথা কমে আসবে।
২. হলুদ
বড় এক গ্লাস ঘোলের সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ গুড়ো মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন তিনবার এই পানীয়টি খেলে অণ্ডকোষের ব্যথা কমে আসবে।
৩. পান পাতা ও মধু
পান পাতায় মধু মাখিয়ে নিন। এরপর অণ্ডকোষের যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে পান পাতাটি লাগিয়ে রাখুন। যেন ত্বকে মধু লাগে। এভাবে লাগিয়ে রেখে ৩-৪ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন প্রদাহ ব্যথা এবং সংক্রমণ কমে এসেছে।
৪. অলিভ অয়েল
৯ ফোটা অলিভ অয়েল, ১ ফোটা নাইজেলা তেল এবং ৭ ফোটা মাছের তেল নিন। এরপর সেগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি থেকে কয়েকফোটা নিয়ে প্রতিরাতে অণ্ডকোষে লাগান। এভাবে তেলের মিশ্রণটি ৪-৭ দিন ব্যবহার করুন। দেখবেন সংক্রমণ দূর হয়ে যাবে।
৫. রসুন
আধা চা চামচ রসুনের জুস নিয়ে এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ তিলের বীজের তেল মেশান। কয়েকটি নিম পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর সামান্য পরিমাণে পেট্রোলিয়াম জেলি নিন। সবগুলো উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে অণ্ডকোষের যে অংশটুকুতে ব্যথা হচ্ছে সেখানে হালকা ঘষে লাগান। প্রতিদিন ঘুমের আগে এভাবে ২-৩ দিন পেস্টটি ব্যবহার করুন।
৬. কর্পূর
ডিমের সাদা অংশ, মধু, কর্পূর এবং গ্লিসারিন সমপরিমাণে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর সেই মিশ্রণটি অণ্ডকোষে লেপে দিন।
৭. কলার ফুল
একটি কলার ফুল নিয়ে তা এক বা দুদিনে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকানোর পর তা গুড়ো করে পাউডার বানান। এক লিটারের একটু বেশি ছোট একটি পাত্রে পানি ভরে ওই পাউডার থেকে ১ টেবিল চামচ নিয়ে তাতে মেশান। একদিন ভিজিয়ে রাখার পর পরের দিন সকালে খালি পেটে পানিটুকু পান করুন। সেদিন আর কিছু খাবেন না। পরের দিন দুধ পান করুন। এবং উপোস করুন। এভাবে করলে অণ্ডকোষের সংক্রমণ সেরে যাবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
যদি আপনার অণ্ডথলি ফুলে যায়, যদি ফোলাটা ব্যথাযুক্ত হয় কিংবা যদি অণ্ডকোষে চাকা অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
রোগ নির্ণয়
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করে হাইড্রোসিল নির্ণয় করা হয়। অ-থলি ফুলে গিয়ে বড় হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে না। সাধারণত চারপাশের পানির কারণে অ-কোষে হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না। পেটে কিংবা অ-থলিতে চাপ দিলে কখনও কখনো পানিপূর্ণ থলি বড় বা ছোট হতে পারে এরকম হলে বুঝতে হবে ইনগুইনাল হার্নিয়া রয়েছে।
চিকিৎসা
যদি শিশু জন্মের এক বছর পরও হাইড্রোসিল মিলিয়ে না যায় কিংবা আরও বড় হতে থাকে তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল বড় হয়ে অস্বস্তি ঘটালে অথবা আকৃতির কারণে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। অপারেশন সর্বদা দক্ষ সার্জন দিয়ে করাতে হবে।