সাদাস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove vaginal discharge

সাদাস্রাব থেকে পরিত্রাণের উপায়

সাদা স্রাব বা শ্বেতসার মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগটি থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। বেশিরভাগ কিশোরী মেয়েরাই এ সমস্যাটির সম্মুখীন হয়। যদিও অল্প পরিমাণে সাদা স্রাব তেমন কোন সমস্যা নয়। তবে এর অত্যধিক উপস্থিতী অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।

ইংরেজিতে লিউকোরিয়াকে যোনি স্রাব হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যা শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ বা সংকোচনের ফলে সাদা, হলুদ বা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এটি যোনি, ফ্যালোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয়, বা সর্বাধিক জরায়ু থেকে উদ্ভূত হতে পারে।

মাসিক চক্রের উপর নির্ভর করে স্রাবের রঙ পরিবর্তিত হতে পারে। রক্তাক্ত স্রাব একটি অপ্রীতিকর গন্ধ বা অনেক বৃদ্ধি করে এবং এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। যে কোন সংক্রমণ, ম্যালিগন্যান্সি এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে।

সাদাস্রাব কি?

সাদাস্রাব বা Leucorrhea নারীদের জরায়ু ও যোনিপথের একটি সাধারণ নিঃসরণ, যাতে মৃত কোষ ও কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। স্বাভাবিক স্রাব পাতলা এবং সামান্য চটচটে হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা সর্দির মত। তবে কারো ক্ষেত্রে কখনো কখনো হলুদ বা সবুজ বর্ণেরও হতে পারে।

সাদাস্রাব একটি সাধারণ রোগ যা অপ্রীতিকর গন্ধ ছড়াতে পারে। ব্যথা, চুলকানি বা জ্বালা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। যে কোন সংক্রমণ, ম্যালিগন্যান্সি এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এটি যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে।

স্রাবের  বিভিন্ন ধরণ

এটি নারীদের ১৯ থেকে ৪৭ বছর বয়সের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। বিভিন্ন ধরণের যোনি স্রাব রয়েছে। আলাদা আলাদা রঙের ভিত্তিতে যোনি স্রাবকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। কিছু যোনি স্রাব স্বাভাবিক। তবে অন্যগুলো একটি অন্তর্নিহিত অবস্থা নির্দেশ করতে পারে যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

সাদা: মাসিক চক্রের শুরুতে বা শেষে সাদা রঙের স্রাব হতে পারে। যদি স্রাবের সাথে চুলকানি হয় এবং ঘন, কুটির পনিরের মতো বের হয়, তবে এটি স্বাভাবিক নয় এবং এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।

পরিষ্কার এবং পানিযুক্ত: পরিষ্কার এবং পানিযুক্ত স্রাব সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এর ধরনের স্রাব মাসের যে কোন সময় ঘটতে পারে। ব্যায়ামের পরে এটি বিশেষভাবে ভারী হতে পারে।

বাদামী বা রক্তাক্ত: বাদামী বা রক্তাক্ত স্রাব সাধারণত স্বাভাবিক, বিশেষত যখন এটি আপনার মাসিক চক্রের সময় বা ঠিক পরে ঘটে। আপনার পিরিয়ড শেষে স্রাব দেরীতে হলে লালের পরিবর্তে বাদামী দেখতে পারে।

পরিষ্কার এবং প্রসারিত: স্রাব যখন পরিষ্কার কিন্তু প্রসারিত এবং শ্লেষ্মার মত, পানির পরিবর্তে, এটি নির্দেশ করে যে আপনি সম্ভবত ডিম্বস্ফোটন করছেন। এটি একটি সাধারণ ধরনের স্রাব।

হলুদ বা সবুজ: হলুদ বা সবুজ স্রাব যখন ঘন, চকচকে বা অপ্রীতিকর গন্ধের সাথে থাকে, এটি স্বাভাবিক নয়। এই ধরনের স্রাব ট্রাইকোমোনিয়াসিস সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণত যৌন মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়।

অতিরিক্ত সাদাস্রাব-এর কারণ ও লক্ষণসমূহ

১. জরায়ূরতে ব্যাকটেরিয়া জন্মালে। জরায়ূ সব সময় ভেজা থাকে তাই তাড়াতাড়ি ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধতে পারে।

২. ছোঁয়াচে যৌন রোগ।

৩. ইস্ট এর সংক্রামন ঘটলে।

৪. অতিরিক্ত সাদা স্রাব-এর কারণে কোমরে ব্যথা করে।

৫. গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাব নিঃসরণ।

৬. তলপেট ভারি হয়ে থাকা।

৭. শরীর দুর্বল লাগা।

৮. চোখের নিচ গর্ত হয়ে যাওয়া, চোখের নিচ কালো হয়ে যাওয়া।

৯. বদ হজম।

১০. জরায়ূতে চুলকানি অথবা জ্বালাপোড়া।

১১. আন্ডার গার্মেন্টস এ দাগ লেগে থাকা।

১২. মুখের মলিনতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ও

১৩. সহবাসের সময় যৌনিতে জ্বালা করা।

সাদা স্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ কি

সাদা স্রাব মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা হলে ও কখনো কখনো এর থেকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হতে পারে । এই সমস্যাটি বেশিরভাগ কিশোরী মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ এর মাধ্যমে  আপনি এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

অনেকেই আবার জানতে চায় সাদাস্রাব কি খেলে ভাল হয়। আজকের আর্টিক্যালে প্রাকৃতিক উপায়ে যেসব খাবার খেলে সাদাস্রাব ভাল হয় সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত জানবো। তো চলুন জেনে নেই মেয়েদের সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার লিউকোরিয়ার জন্য বিভিন্ন আশ্চর্যজনক উপকারিতা রয়েছে। কারণ এটি অতিরিক্ত স্রাব, চুলকানি এবং জ্বলন্ত সংবেদন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি জরায়ুর টিস্যুগুলিকে টোন করতে সাহায্য করে এবং জরায়ুতে শক্তি যোগায়।

অ্যালোভেরার একটি তাজা রস প্রস্তুত করুন এবং প্রতিদিন দুবার পান করুন। আপনি যোনির আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরার রস লাগাতে পারেন। চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরা এবং পানি সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন এবং এই মিশ্রণ দিয়ে আপনার যোনি ধুয়ে নিন।

মেথি

সেদ্ধ মেথি বীজ খেলে সাদা স্রাবের সমস্যা সমাধান হতে পারে। আধা লিটার পানিতে কিছুটা মেথি সেদ্ধ হতে দিন। পানি অর্ধেকে নেমে না আসা পর্যন্ত সেদ্ধ করতে পারেন। এরপরে ঠান্ডা হয়ে এলে পানি পান করুন।

ঢেঁড়স

সাদা স্রাবের সমস্যাটির চিকিৎসার জন্য আরেকটি ভালো প্রতিকার হলো ঢেঁড়স। কয়েকটি ঢেঁড়স পানিতে সেদ্ধ করে চটকে খেতে পারেন। অনেকে আবার এটি দইয়ের সঙ্গেও মিশিয়ে খান।

ধনিয়া

কিছু ধনিয়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে পানিটা ছেকে নিয়ে খালি পেটে রাখুন। সাদা স্রাবের চিকিৎসার জন্য এটি অন্যতম সহজ এবং নিরাপদ ঘরোয়া উপায়।

আমলকি

ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি যেকোনোভাবেই খাওয়া যায় - কাঁচা, গুঁড়া, মোরব্বা বা ক্যান্ডি তৈরি করে খেতে পারেন। নিয়মিত আমলকি খেলে সাদা স্রাবের সমস্যা কমবে।

তুলসি

বিভিন্ন রোগ সারাতে যুগে যুগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তুলসি। কিছু তুলসি পাতা পানিতে সেদ্ধ করে নিতে পারেন। এতে কিছুটা মধুও যোগ করতে পারেন। সমস্যাটি দূর করতে প্রতিদিন দু’বার এই পানীয় পান করুন। দুধের সাথেও তুলসি খেতে পারেন।

ভাতের মাড়

সাদা স্রাবের সমস্যা নির্মূল করতে নিয়মিত ভাতের মাড় পান করতে পারেন। ক্রমাগত সাদা স্রাবের সমস্যায় ভুগলে আপনার জন্য ভাতের মাড় একটি অনন্য প্রতিকার।

নিম পাতা

নিম পাতা হল সেরা এমন একটি উদ্ভিদ যা সর্ব রোগেরই মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।  যাতে রয়েছে  অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টিসেপটিক এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়ার চিকিৎসার জন্য অনেক আগে থেকেই মানুষ নিম পাতা ব্যবহার করে আসছে। নিম পাতা শরীরে থাকা অপকারি ব্যাকটেরিয়া মেরে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

তাজা নিম পাতা থেকে নিম পাতার রস তৈরি করে খেতে পারেন। অথবা তাজা নিম পাতা নিয়ে সেদ্ধ করুন। তারপর সেই পানি ঠাণ্ডা হওয়ার পর ছেঁকে নিন। তারপর এই জল দিয়ে আপনার যোনি ধুয়ে ফেলুন। এতে বেশ চমৎকার উপকার পাবেন।

পেয়ারা পাতা

সাদা স্রাবের পাশাপাশি চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিলে কিছু পেয়ারা পাতা পানিতে সেদ্ধ করে নিন। এটি ঠান্ডা হওয়ার পরে পান করতে পারেন। দিনে দু’বার পান করুন।

নারকেল

সাদাস্রাব এর সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি খেতে পারেন। কেননা নারিকেলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল রাসায়নিক উপাদান যা আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিবে। কয়েক ফোঁটা নিম তেলের সঙ্গে নারকেল তেল ভালভাবে মিশিয়ে নিন।এবং সাদাস্রাব রোগীদের ব্যথা, চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে যোনির আক্রান্ত স্থানে এই মিশ্রণটি লাগাতে পারেন।

মাইগ্রেন থেকে মুক্তির উপায়
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ - Symptoms of water loss during pregnancy
মাথা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা - Home remedies for headache
স্তন সুন্দর ও সুডৌল করার টিপস - Tips to make breasts beautiful and shapely
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা- home treatment for dysentery
জিও ভিটা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
অনবরত হাঁচি হলে দ্রুত যা করবেন - What to do quickly if you sneeze continuously
পানিশূন্যতায় নারীস্বাস্থ্যের যেসব সমস্যা হয় - Women's health problems due to dehydration
বাচ্চা বুকের দুধ কম পেলে করণীয় - What to do if the baby gets less breast milk