জিনসেং কী ?
জিনসেং হল গাছের মূল। গাছটির নামই হল জিনসেং। মূলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুণসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত – অ্যামেরিকান এবং এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অনেকবেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেংকে প্যানাক্স জিনসেং। প্যানাক্স শব্দটি গ্রীক শব্দ “panacea” থেকে এসেছে, এর অর্থ হল “All healer” বা সর্ব রোগের ঔষধ। জিন সাদা (খোসা ছাড়ানো) ও লাল (খোসা সমেত) এই দুই রকম পাওয়া যায়। খোসা সমেত অবস্থায় এটি অনেক বেশি কার্যকরী। জিনসেং এর মধ্যে উপস্থিত জিনসেনোসাইড নামক উপাদানটি এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এনার্জি বুস্টার হিসেবে যুগ যুগ ধরে কোরিয়াতে এই পানীয়র ব্যবহার চলে আসছে। জিনসেং কে wonder herbs বা আশ্চর্য লতা বলা হয়। চীনে সহস্র বছর ধরে জিনসেং গাছের মূল আশ্চর্য রকম শক্তি উৎপাদনকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকে জিনসেং চা হিসেবে খেয়ে থাকেন।
মুলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুনসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত- আমেরিকান ও এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে বলা হয় প্যানাক্স জিনসেং।
জিনসেং এর উপকারিতা
উত্তর চীন কোরিয়া তথা সাইবরিয়াতে পাওয়া জিনসেং কে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ হিসাবে বিচার করা হয়। একটি প্রচন্ড জনপ্রিয় পুষ্টিকর ভেষজ হিসাবে ইহাকে চৈনিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। এর সুবিশাল ঔষধি গুণের জন্য ইহার ব্যবহার পশ্চিমী দেশগুলোতেও হতে থাকলো। তাহলে চলুন স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য কে প্রভাবিত করা জিনসেং এর উপকার এবং ক্ষতি সম্পর্কে জানা যাক।
১. এনার্জি বাড়ায়
এনার্জি বাড়াতে এবং অবসন্নতা কাটিয়ে উঠতে জিনসেং ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। যারা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করছেন তাদের জন্য এই ভেষজ উপাদানটি দারুণ কার্যকরী। পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিনসেং ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। ক্লান্তি কমাতে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে জিনসেং পরিপূরকগুলি পাওয়া গেছে, যদি এটি প্রমাণ করতে আরও অধ্যয়ন প্রয়োজন।
টিউমার বৃদ্ধি রোধ করার ক্ষমতা একে ক্যানসারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তুলেছে। জিনসেং টি সেল এবং এনকে সেলগুলির (প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ) কার্যকারিতা বাড়িয়ে কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধেও লড়াই করে এবং ক্যানসার কোষের মৃত্যু ঘটায়।
পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, জিনসেংয়ের মধ্যে উপস্থিত জিনসেনোসাইডগুলি ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং কিডনি, ডিম্বাশয়, পেট, ত্বক এবং জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে।
৩. ওজন কমায়
জিনসেং পরিপাক ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, কীভাবে জিনসেং ইঁদুরের দেহের ওজন কমাতে পারে। অন্যান্য পরীক্ষায় এর স্থূলতা বিরোধী প্রভাবও প্রমাণিত হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষুধা হ্রাস করে যা এর অন্যতম একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
বেশকিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে অ্যামেরিকান জিনসেং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, জিনসেং ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নতি করে এবং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি সুস্বাস্থ্যকর।
জিনসেংকে অনেকে ভেষজ ভায়াগ্রা বলে থাকে, এর পিছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত এটি ইরেকটাইল (বা যৌন) কর্মহীনতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি উপায়েও এটি পুরুষদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে তা হল এটি নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ায়, যা লিঙ্গকে শিথিল করে এবং রক্তপ্রবাহকে উদ্দীপিত করে। এই চা উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত ফাইটো টেস্টোস্টেরনের উৎস। জিনসেং শুক্রাণু গণনাকে উন্নত করে এবং এড্রেনাল এবং প্রোস্টেট গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা বাড়ায় ।
৬. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
জিনসেং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালজাইমার সমস্যা সমাধান করতে পারে।
৭. স্ট্রেস কমায়
পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিনসেং মুড ঠিক রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী।
৮. প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পরীক্ষায় প্রমাণিত, জিনসেং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশির সমস্যা কম করে। আরও একটি কোরিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, জিনসেং ম্যাক্রোফেজস, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ, টি সেল, বি সেল, ডেন্ড্রিটিক সেল সহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিরোধক কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে। জিনসেংয়ের এই উপাদান জ্বালা যন্ত্রণা কমায় এবং জীবাণু সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৯. অ্যান্টি এজিং
গবেষণা অনুযায়ী, জিনসেং অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভেষজ এই ঔষধি কোলাজেন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা ত্বককে বলিরেখা মুক্ত করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
১০. জ্বালা–যন্ত্রণা কমায়
জিনসেংয়ের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রভাব জিনসেসোসাইডের ভূমিকাকে প্রভাবিত করে। যাদের আর্থারাইটিস বা গাটের ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য এটি উপকারী। তাছাড়াও এটি পেটে ব্যথা ও অন্ত্রে জ্বালা-যন্ত্রণা কমাতে দারুণ কাজ করে।
১১. ফুসফুস কার্যকারিতা উন্নত করে
পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিনসেং ফুসফুসে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
Chronic obstructive pulmonary disease (COPD) হচ্ছে ফুসফুসের অন্যতম সাধারণ একটি সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে কফ জমে, কারও ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্ষয় গটে। জিনসেং গ্রহণে সার্বিকভাবে COPD এর অবস্থার উন্নতি হয় বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
জিনসেংয়ের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রোজেসিয়া সহ ত্বকের নানা সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ করে। ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
১৩. চুলের যত্ন
জিনসেং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জিনসেং এক্সট্রাক্ট চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া রোধ করে। স্কাল্পের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং চুলে পুষ্টি জোগায়।
জিনসেং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
জিনসেং এর অত্যন্ত পরিমাণে সেবন আপনার মাথা ব্যথা, অনিদ্রা এবং পেটে সমস্যা এর মত অসুবিধা দিতে পারে।
শক্তিশালী ভেষজ তাই এটি শরীরে অনেক ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এর সেবন কোন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করলে বেশি ভালো হয়।