
কৃমি ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
কৃমি আকারে খুবই ছোট। প্রায় অদৃশ্য। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই ধরনের কৃমি গুলো মানুষের অন্ত্র থেকে প্রতিদিন ০.২ মিলিলিটার রক্ত শোষণ করে ফেলে। আর যদি শরীরে অনেক কৃমি থাকলে প্রতিদিন কত পরিমাণে রক্ত যাবে একবার ভেবে দেখুন। কৃমি ফলে শিশুরা অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভোগে। বড়দেরও কম কষ্ট হয় না। এছাড়া কৃমির কারণে অ্যালার্জি, ত্বকে চুলকানি, শুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় কৃমি অন্ত্রের নালীতে আটকে যায় এবং বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে। তাই কৃমির সংক্রমণ একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।
কৃমি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই জানতে হবে কেন এমন হয়? নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানীয় জল, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খালি পায়ে হাঁটা কৃমির সংক্রমণের জন্য দায়ী। ওষুধের মাধ্যমে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় রয়েছে। কিন্তু ভুল ধারণার ভয়ে অনেকেই কৃমির ওষুধ খান না। বাচ্চাদের খাওয়াতে চায় না। কিন্তু ওষুধের নিয়ম মেনে এবং কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করে সহজেই কৃমি দূর করা যায়।
কৃমি কি
কৃমি হলো এক ধরণের পরজীবি যা অন্ত্রে বাস করে। কিছু কৃমি ডিম্বাণু হিসেবে মানুষের মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। আবার কিছু লাভা হিসেবে ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করে। কৃমি অনেক সময় মানুষের যকৃত এবং অন্য অঙ্গতেও আক্রমণ করতে পারে।
কৃমির প্রকারভেদ
কৃমি কয়েক প্রকারের/ধরণের হয়: যেমন-
গোল কৃমি : এগুলো সাধারণত গোল, পাতলা, সাদা বা গোলাপী রঙের হয় এবং ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়।
সুতা কৃমি : এগুলো সুতার মত, ছোট, পাতলা এবং সাদা রঙের হয়।
বক্র কৃমি : এগুলো আকারে খুবই ছোট, গারো গোলাপী রঙের হয়। এগুলো খালি চোখে দেয়া যায় না।
ফিতা কৃমি : এগুলো ২-৩ মিটার লম্বা এবং সমান হয়।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
দুই বছরের অধিক বয়সী সকলের জন্য কৃমির ওষুধের ডোজ সবার একই। অর্থাৎ আপনার আড়াই বছরের বাচ্চারাও আপনি যে পরিমাণ ওষুধ খাবেন, তারাও একই পরিমাণ ওষুধ খাবেন। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। বাড়ির সবাই মিলে একই দিনে কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম।
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ।
সুস্থ মানুষ বা শিশুরা চার থেকে পাঁচ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ সেবন করলে ক্ষতি নেই। আজকাল, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদেরও কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে, তবে শিশুদের খাওয়ানোর পূর্বে প্রথমে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
বাচ্চাদের কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
কৃমি একটি নিয়মিত সমস্যা। শিশুদেরও এই সমস্যা হয়ে থাকে। সেজন্য শিশুদেরকেও নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হয়। এক্ষেত্রে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে।
স্কুলগামী ৯০% শিশু কৃমি রোগে ভোগে। এর মধ্যে গোলকৃমির প্রকোপ বেশি। এই কৃমিগুলি অন্ত্রে বাস করে এবং শিশু খাদ্যের বেশিরভাগ পুষ্টিকর খাবার তারাই খেয়ে ফেলে। তাই আক্রান্ত শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে।
যেসব শিশু খালি পায়ে পায়খানা করে এবং খালি পায়ে মাঠে ঘুরে বেড়ায় তাদের পায়ের তলায় হুকওয়ার্ম শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এসব কৃমি রক্ত চুষে খেয়ে ফেলে, ফলে শিশুদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একটি শিশুর পায়খানার রাস্তায় প্রায়ই সুই কৃমি নামে এক ধরনের ছোট কীট দেখা যায়। আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত খিটখিটে হয়। কৃমি রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা হ্রাস, পেট ফোলাভাব, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে হওয়া, বমি বমি ভাব, বা অবিরাম পেট খারাপ হওয়া।
কৃমির ওষুধের নাম
Bendex 400 Tablet
1 Tablet- MRP₹ 8.59
Cipla Ltd
Zeebee Tablet
1 Tablet-MRP₹ 8.49
Sun Pharmaceutical Industries Ltd
Abd 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 8.60
Intas Pharmaceuticals Ltd
Zybend Tablet
1 Tablet-MRP₹ 8.60
Zydus Healthcare Limited
Xenith 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 10.55
Mapra Laboratories Pvt Ltd
Anthel 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 10.40
Lincoln Pharmaceuticals Ltd
Vermanth 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 10.40
Almet Corporation Ltd
Aldezole 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 14.93
Alde Medi Impex Ltd
Helminex 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 16.10
Shrinivas Gujarat Laboratories Pvt Ltd
Alone 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 9.58
Acron Pharmaceuticals
Eldoben 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 14.58
Elder Pharmaceuticals Ltd
Bantil 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 11.85
Thrift Pharmaceuticals
Pikworm 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 12.18
Aarpik Pharmaceuticals Pvt Ltd
Thelmin 400mg Tablet
1 Tablet-MRP₹ 18.45
Moxy Laboratories Pvt Ltd
Sezole 400mg Tablet
Albendazole 400mg Tablet
Almex 400 mg
Albendazole ট্যাবলেট কি?
অ্যালবেন্ডাজল ট্যাবলেট (Albendazole Tablet) হল একটি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ, যা পরজীবী কৃমি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দূষিত কৃমিগুলিকে নির্মূল করে কাজ করে এবং রোগকে ছড়িয়ে পড়া থেকে বাধা দেয়।
কৃমিতে আক্রান্ত হয় তবে মেবেনডাজল ১০০ মিলিগ্রামের একটি বড়ি ১২ ঘণ্টা পরপর তিন দিন বা অ্যালবেনডাজল ৪০০ মিলিগ্রাম একটা বড়ি বা পিপেরাজিন ৪ গ্রাম একটি বড়ি খাওয়াতে হবে। সুতা কৃমি হলে মেবেনডাজল ১০০ মিলিগ্রাম বা অ্যালবেনডাজল ৪০ মিলিগ্রাম বা পিপেরাজিন ৪ গ্রাম একটি বড়ি খাওয়াতে হবে। তিন দিন খাওয়ার পর দুই সপ্তাহ পার হলে আরও একটি বড়ি খেতে হবে।
কৃমির ট্যাবলেট এর পার্শপ্রতিক্রিয়া
পেট ব্যাথা
বমি
বুক ব্যাথা
ঠান্ডা
কাশি
বেদনাদায়ক বা কঠিন প্রস্রাব
ত্বকে লাল দাগ চিহ্নিত করুন
গলা ব্যথা
কৃমির জীবাণু কিভাবে ছড়ায়
দূষিত খাবার এবং পানি গ্রহণের ফলে
কৃমিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে
মাটি থেকে শরীরের চামড়ার মাধ্যমে
কৃমি কেন হয়?
মনে রাখবেন এমনি এমনি পেটে কিন্তু কৃমি হয়না। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণও রয়েছে। কৃমি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে বংশবৃদ্ধি করে। কৃমির ডিম বাতাস, বাথরুম, খাবার, পানি, দরজার হাতল, প্রাণীর শরীর ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। কৃমির লার্ভা মানুষের ত্বকের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। শরীরে প্রবেশ করার পর, তারা ব্যাপকভাবে প্রজনন করে।
খালি পায়ে হাঁটলে, অপরিষ্কার পরিবেশে থাকলে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও, সঠিকভাবে না ধুয়ে ফল এবং শাকসবজি খেলে কৃমি সংক্রমিত হতে পারে।
কৃমি দূর করার উপায়
১। নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ পরিহার করতে হবে।
২। বাইরে হাটতে গেলে স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করতে হবে।
৩। খাবার ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে।
৪। ফল ও সবজি ভালো করে ধুয়ে রান্না করে খেতে হবে।
৫। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৬। টয়লেট ব্যবহারের পর হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
৭। নিয়মিত হাত ও পায়ের নখ কাটতে হবে।
৮। শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৯। নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
বাচ্চাদের কৃমির লক্ষণ
সাধারণত শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে শিশুর আচরণে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক বাচ্চা কৃমির কিছু লক্ষণ-
১. ঘন ঘন পেটে ব্যথা এবং ক্ষুধা হ্রাস।
২. খাবার খেয়ে পেটে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. অনেক শিশু আবার থুথু ফেলে বা অযথা থুতু ফেলে।
৪. কামড় দেয়, খিমচে দেয় কৃমির উপদ্রব বাড়লেও এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
৫. অনেক সময় মল দিয়েও কৃমি বের হয়। তাই শিশুর মলের দিকে নজর রাখতে হবে।
শিশুর কৃমির চিকিৎসা
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চয়ন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ৩ বছর বয়স থেকে ৬ মাস পর পর শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। ১২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়ানো যায়। এ ছাড়া জরুরি হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি।
বাচ্চাদের কৃমি থেকে বাচাতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
১. সন্তানের খাবার, পানি , এমনকি ন্যাপি বদলানোর আগেও হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও ব্যবহার করতে পারেন।
২. শিশুটি বাইরে থেকে খেলে বা ঘুরে এলে অবশ্যই ভাল করে সাবান দিয়ে তার হাত-পা ধুয়ে দিন।
৩. শিশুর নখ পরিষ্কার রাখতে হবে ও নিয়মিত নখ কাটতে হবে। খেয়াল রাখুন, সে যেন নখ না খায়। নখের কোণে যে ময়লা জমে, তার থেকেও কিন্তু কৃমি প্রবেশ করতে পারে শরীরে।
৪. ফল, আনাজপাতিও বাজার থেকে এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরে খেতে হবে।
কৃমি কি ক্ষতি করে?
কৃমি একটি পরজীবী যা মানবদেহে বসবাস করে। এরা সাধারণত মানুষের অন্ত্রে বাস করে। একই সময়ে, তারা মানবদেহ থেকে পুষ্টি এবং রক্ত শোষণ করে প্রজনন করে। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে কৃমি একটি ক্ষতিকারক পরজীবী। এতে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কৃমির কারনে মানুষের শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে তা নিচে দেখুন:
১। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
২। রক্তাল্পতা
৩। দুর্বল লাগছে
৪। পেটে ব্যথা
৫। ডায়রিয়া
৬। নার্ভাস ক্ষুধাহীনতা
৭। ওজন কমানো
৮। পেট ফাঁপা
৯। বদহজম
১০। ক্ষুদ্রান্ত্রকে বন্ধ করে দেওয়া
১১। অন্ত্রনালিকে ছিদ্র করা
১২। জন্ডিস