নারীস্বাস্থ্য নিরাপদে মেন্সট্রুয়াল কাপ
Menstrual cups safe for women's health

নারীস্বাস্থ্য নিরাপদে মেন্সট্রুয়াল কাপ

মেন্সট্রুয়াল কাপ নামটির সঙ্গে ইতিমধ্যে অনেকেই পরিচিত। আগে মেয়েরা ঋতু চলাকালে কাপড় ব্যবহার করত। এরপর এল স্যানিটারি ন্যাপকিন, তারপর ট্যাম্পন। তবে এগুলো একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক নয়। বর্তমানে এই প্রোডাক্টটি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হলেও অনেকেই মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। আবার অনেকে এর সম্পর্কে জেনেও ব্যবহার করতে ভয় পান, দ্বিধায় ভোগেন। মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতার দিনগুলোতে মেন্সট্রুয়াল কাপ হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যকর আরামদায়ক মাসিকের পরিপূরক।

মেন্সট্রুয়াল কাপ কী?

এটি মূলত ফানেলের মতো আকৃতির মেডিকেল গ্রেড সিলিকনের কাপ। এটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো রক্ত শুষে না নিয়ে কাপে জমা রাখে। ভাঁজ করে যোনিপথ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেটা ভেতরে গিয়ে প্রসারিত হয়ে জরায়ু মুখে আটকে যায়। ইকো ফ্রেন্ডলি হওয়ায় অন্যান্য সব পদ্ধতি থেকে এটি বেশি স্বাস্থ্যকর। ফ্লোর ওপর ভিত্তি করে এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্তও ব্যবহার করা যায়। তবে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর বের করে পরিষ্কার করা শ্রেয়।


কোন সাইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ পড়বেন?

কোন সইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ (Menstrual Cup) প্রয়োজন তা নারীর বয়স, ওজন, শারীরিক গড়ন ও সন্তান প্রসবের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেছে নিতে হবে। যেমন সন্তানের জন্মদান করলে ভ্যাজাইনার গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় বা ভেজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাপের সাইজ অবশ্যই বড় প্রয়োজন হবে।

আবার কিশোরী বা কম বয়সের নারীদের জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপের মাপ অপেক্ষকৃত ছোট হবে এটাই স্বাভাবিক। বাজারে ছোট, মাঝারী ও বড় মিলিয়ে মোট চারটি সাইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্য থেকে আপনার সারভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার গভীরতা জেনে মেনস্ট্রুয়াল কাপ সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

মাসিক বা পিরিয়ডের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা সব থেকে নিরাপদ ও আরামদায়ক হিসাবে বলে মনে করেন অধিকাংশ কর্মজীবি নারীরা, এছাড়াও যারা খেলাধুলা করেন বা বাইকিং বা হাইকিং এর নেশা আছে তাদের কাছে মেন্সট্রুয়াল কাপ একটি স্বাধীনতারই নাম। খুব বেশিদিন হয়নি তবে বাংলাদেশেও অনেকে এটি ব্যবহার শুরু করেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা

সব বয়সের মেয়েরাই ব্যবহার করতে পারেন।

কোনো কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক উপকরণ না থাকায় এটির কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া নাই।

ব্যাকটেরিয়াঘটিত কোন জীবানু সংক্রমনের ঝুঁকি নেই। তবে স্টেরিলাইজ বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে নির্দিষ্ট সময় পরপর।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের থেকে এটা সাশ্রয়ী। একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ অনায়াসে ৮ থেকে ১০ বছর ব্যবহার করা যায়।

এটা পরিবেশ বান্ধব একটি পন্য, ব্যবহারের পরে ফেলে দিলে এটা মটিতে খুব দ্রুত মিশে যায়।

মসিক চলাকনীন সময়েও আপনি স্বাভাবিক সময়ের মত সব কাজ করতে পারবেন।

মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের অসুবিধা

প্রথমবার ব্যবহারের সময় কাপটি পড়তে বা খুলতে সাধারনত সকলেইর একটু সমস্যা হয় যা পরে ঠিক হেয় যায়।

জরায়ুতে যদি আগে থেকে কোনো ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তবে এটা ব্যবহার না করাইটাই ভালো।

পিরিয়ড ব্লাড মেন্সট্রুয়াল কাপে জমা থাকে, আর এটা নিজেকেই পরিষ্কার করতে হয়, এই কজটিতে আপনার যদি কোনো অস্বস্তি না হয় তবে কাপটি ব্যবহারে আর কোনো সমস্যাই নেই!

মেনস্ট্রুয়াল কাপ যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয় তাই অবিবাহিত মেয়েরা এটি ব্যবহার করতে ইতস্তত বোধ করতে পারেন।

ব্যবহারের সময়-বিধি ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা

স্যানিটারি নাপকিনগুলোতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যেগুলোতে রক্তের ফোঁটা পড়ার ৪ ঘন্টার মধ্যে, ভেতরের আর্দ্রতা আর পরিবেশের জন্য ব্যাক্টেরিয়াল কালচার/ ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়।

এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনার রাস্তা হয়ে জরায়ু বরাবর চলে যায়।

এতে করে, ভ্যাজাইন্যাল এরিয়া, জরায়ুর রাস্তা, গর্ভাশয়ে মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে।

মাঝে মাঝে এসব ইনফেকশন থেকে বন্ধ্যাত্বও চলে আসতে পারে।

কিংবা জীবণ বাঁচাতে জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হতে পারে নারী, এর ফলে হারিয়ে ফেলে মা হওয়ার ক্ষমতাটাকে।

আবার এসকল ব্যক্টেরিয়াল ইনফেকশন যে খালি জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাই করে, তা হয়।

প্রস্রাবের রাস্তার ইনফেকশন থেকে শুরু করে,বড় ধরণের কিডনি সংক্রান্ত ইনফেকশন বা জটিলতাও এই ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণে হতে পারে।

তাই কোন স্যানিটারি ন্যাপকিনই ৪ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে?

আপনার বয়স, ভ্যাজাইনার গঠন এবং সন্তানধারণ করেছেন কি না এসব মিলিয়ে আপনাকে কাপের সাইজ নির্ধারণ করতে হবে। কেননা সন্তানের জন্ম দিলে ভ্যাজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়, তখন বড় সাইজের কাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আবার কিশোরী বয়সে সেটার মাপ আলাদা হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

আপনার যদি ফাইব্রোয়েডস (Fibroids) বা জরায়ুতে ইনফেকশন থেকে থাকে, তাহলে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। হেভি ফ্লো বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা আছে কি না সেটাও এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে। মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা অবশ্যই নিরাপদ। আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় উন্নত দেশগুলোতে এটির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই। এই ব্যাপারে আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অবশ্যই কাপের কোয়ালিটি, কী ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি, মেডিক্যাল গ্রেড কি না এগুলো খুব ভালোভাবে জেনে তারপর ব্যবহার করবেন।

যেভাবে ব্যবহার করবেন মেন্সট্রুয়াল কাপ

১.প্রথমেই আপনার হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। কাপের খোলা অংশটি ওপরে রেখে নিচের অংশ শক্ত করে ধরে যোনিপথে ঢোকাতে হবে।

২.কাপটি সি শেপে ফোল্ড করে ভাঁজ করে নিতে পারেন। নানা ধরনের শেপে ভাজ করা যায় যেমন—সি ফোল্ড, পাঞ্চ ডাউন, সেভেন ফোল্ড, ট্রায়াঙ্গেল, ডায়মন্ড শেপ ইত্যাদি। ভেতরে ঢোকানোর পর কাপটি ছাতার মতো খুলে যাবে। তারপর সেটিকে ঘুরিয়ে মুখ আটকে দিতে হবে, যাতে রক্ত বাইরে বেরিয়ে না আসে। এভাবে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লিকেজের টেনশন ছাড়া এবং চেঞ্জ করা ছাড়া ব্যবহার করা যাবে। ৮ ঘণ্টা পরে টান দিয়ে খুলে রক্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া ইউটিউবে নানা ধরনের ভিডিও পেয়ে যাবেন। 

৩.গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। আপনার বয়স, ফ্লোর পরিমাণ, কাপের ধারণক্ষমতা ছাড়াও সন্তান ধারণ করেছেন কি না এর ওপরও নির্ভর করে আপনার কাপের সাইজ। সন্তান জন্মের পর ভ্যাজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়। তখন বড় সাইজের কাপ ব্যবহার করতে হয়। আবার কিশোরী বয়সে সেই মাপটা ছোট হয়। তা ছাড়া আপনার যদি ফাইব্রোয়েডস বা জরায়ুতে ইনফেকশন থাকে, তাহলে এটি না ব্যবহার করাই শ্রেয়। 

৪.প্রতিবার পিরিয়ড শেষে কাপটি গরম পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর মুছে শুকনো জায়গায় রাখুন। পরে এটিকে পরিষ্কার হাতে ধরুন। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে একটি কাপ ৮-১০ বছর ব্যবহারের উপযোগী হবে।

কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়?

প্রতিবার পিরিয়ডের শেষে এটিকে গরম পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর মুছে নিয়ে তুলে রাখুন। জীবাণুমুক্ত রাখতে এটি শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। আর একটা কথা, পরিষ্কার হাতে এই কাপটি খুলতে, পড়তে বা ধরতে হবে। হাত থেকেও কিন্তু জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। তাই সবসময়ই নিজের হাইজিন নিয়ে সতর্ক থাকবেন।


মেন্সট্রুয়াল কাপ নিয়ে যত ভ্রান্ত ধারণা

১.ঋতুপাত্র ধারণ করলে সতীত্ব নষ্ট হবে। কিন্তু ঋতুপাত্র ব্যবহার করলে আঘাতের সম্ভাবনা নেই। তাই এটি ভাবা উচিত নয়।

২.মেন্সট্রুয়াল কাপ যোনীপথে সেট করলে কোথাও হারিয়ে যাবে। সার্জারি করে বের করতে হবে। এটিও সঠিক নয়। নারীদের যোনিপথ ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। যার শেষপ্রান্তে জরায়ু অবস্থিত। অর্থাৎ, যোনীপথের সামনের দিকটিই খোলা। তাহলে কাপ হারানোর জায়গা কোথায়?

৩.মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে নষ্ট হয়ে যাবে এবং আবার কিনতে হবে। ভালো মানের কাপ কিনলে টানা ৮-১০ বছর ব্যবহার করা যায়।

৪.মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করলে মল-মূত্রত্যাগ করা যায় না। নিজের শরীর সম্পর্কে জানুন, তারপর না হয় এসব ভাববেন।

৫.মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যথার কারণ হতে পারে। মূলত এটি সিলিকন দিয়ে তৈরি। এজন্য ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম। গবেষণা অনুযায়ী, প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও পরে স্বাভাবিক মনে হয়।

দ্রুত মেদ ঝরাতে খাবেন ৫ খাবার
মানসিক হাসপাতালের ঠিকানা
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য-Nutritious food during pregnancy
ব্লাড ক্যান্সারের কারণ ও এর প্রতিকার - Causes and treatment of blood cancer
শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে করণীয় - What to do to prevent pneumonia in children
জরায়ু ইনফেকশন এর লক্ষণ ও করণীয়
দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষণ - Symptoms of gum cancer
পিল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পেট কামড়ানোর ঘরোয়া চিকিৎসা - Stomach Biting Home Remedies
ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা