অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করার ঘরোয়া উপায়
প্রাপ্তবয়স্ক একজন কিশোরী কিংবা তরুণীর নিয়মিত ও সময়মতো পিরিয়ড বা মাসিক হওয়াটা স্বাভাবিক। তা না হয়ে মাসিক যদি অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তখন বুঝতে হবে আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা আছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অসুস্থতা শরীরে ভর করেছে কিনা বা জীবনচর্চায় কোনো ক্ষতিকর অভ্যাস যুক্ত হয়েছে কিনা, তার দিকে নজর দেয়া উচিত।
ব্যায়াম
যেসব নারী নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের মাসিকের সমস্যা থাকে না। নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো করলে অনেক সময় মাসিক হয়ে যায়।
ব্যায়ামের কারণে পেশি বাঁধা পেয়ে থাকে, যার কারণে পেশি সংকোচন শুরু করে, শরীরে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিয়ে থাকে। ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার পর ব্যায়াম করলে পরবর্তী সময়ে সঠিক সময়ে মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পার্সলে
পার্সলে (Parsley) বহু শতাব্দী ধরে নারীদের মাসিক সমস্যা নিরোধে প্রাকৃতিক এবং ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকটা ধনে পাতার মতো দেখতে এই মসলা জাতীয় উদ্ভিদটিতে থাকা দুটি পদার্থ জরায়ুর সংকোচনকে উদ্দীপিত করে, যা আপনার মাসিক চক্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: আপনি প্রতিদিন ৬ গ্রাম করে শুকনো পার্সলে খেতে পারেন যা প্রতি ডোজে ২ গ্রাম করে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য দিনে ৩ ডোজ শুকনো পার্সলে যথেষ্ট। আপনি এটি ১৫০ মিলি পানিতে সেদ্ধ করে খেতে পারেন। অথবা চাইলে দিনে দুবার পার্সলে চা পান করতে পারেন।
পেঁপে
সঠিক সময়ে মাসিকের জন্য পেঁপে সবচেয়ে কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিষেধক। পেঁপে আপনার শরীরের উপস্থিত ক্যারোটিন ইস্ট্রোজেন হরমোনকে উদ্দীপিত করে। যার ফলে মাসিকেরপ্রারম্ভিক সময়কে প্রভাবিত করা সক্ষম হয়। Parsley এর মতো কাঁচা পেঁপেও জরায়ুতে সংকোচনের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং পিরিয়ড প্ররোচিত করতে সহায়তা করতে পারে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: কাঁচা পেঁপে বা পেঁপের রস দিনে দুইবার খাওয়া যেতে পারে। আকারে এক কাপ পেঁপের রস (প্রায় ২০০ মিলিলিটার) বা এক বাটি তাজা পাকা পেঁপে কার্যকরভাবে চক্রের মাঝখানে খাওয়া যেতে পারে।
আদা চা
আদা চা হ’ল অন্যতম শক্তিশালী ইমেনাগোগ যা শরীরকে ঋতুস্রাবে উৎসাহিত করে। আদা জরায়ুর চারপাশে উত্তাপ বাড়িয়ে তোলে, এইভাবে সংকোচনের প্রচার করে। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কেবলমাত্র যাদের অতিরিক্ত দেরিতে মাসিক হয় তাদেরই আদা চা পানের পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ, আদা চা শরীরে অম্লত্বের মতো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: চা বা টাটকা আদার রস আকারে কিছু মধু বা মধুর পাশাপাশি কাঁচা আদা খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত তারিখের কয়েক দিন আগে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে এক কাপ তাজা আদার রস পান করুন।
ধনে বীজ
ধনিয়া বীজ অনিয়মিত মাসিকের জন্য কার্যকর ঘরোয়া সমাধান বলে মনে করা হয়। কারণ এর রয়েছে Emmanagogue বৈশিষ্ট্য। ধনিয়া বীজে অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: ১ চা চামচ ধনিয়ার গুড়া দিয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে গরম করুন এবং অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না পানি কমে যায়। এটি আপনার মাসিকের সম্ভাব্য তারিখের কয়েক দিন আগে থেকে দিনে তিনবার পান করুন।
ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী (Aloe Vera) রস সাধারণত অস্থির পেটে প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি দেরিতে মাসিক হওয়ার প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘৃতকুমারী দেহের অভ্যন্তরীণ পদ্ধতির সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন: অ্যালোভেরার ছুটি দুটি কেটে জেলটি বের করে নিন। জেলের সাথে ১ চামচ মধু মিশ্রণ করুন এবং প্রাতঃরাশের আগে এটি গ্রহণ করুন। কয়েক মাস ধরে ভাল ফলাফল পেতে প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যান।
টকজাতীয় ফল
উচ্চ মাত্রায় টকজাতীয় ফল দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে মাসিককে প্ররোচিত করতে পারে। এই হরমোনের বর্ধিত মাত্রা জরায়ু সংকোচনে উদ্দীপনা জাগায়। যার ফলস্বরূপ রক্তপাতকে উদ্দীপিত করে। টকজাতীয় ফল প্রজেস্টেরনের মাত্রাও হ্রাস করতে পারে। যা জরায়ুর দেয়ালগুলি ভেঙে দেয়ার কাজ করে এবং দ্রুত মাসিকের পথে নিয়ে যায়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন সাইট্রাস ফল, কিউইস এবং শাকসব্জী যেমন টমেটো, ব্রকলি এবং বেল মরিচকে আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। নিচে কিছু টকজাতীয় ফল জাতীয় খাবারের তালিকা দেয়া হলো যা আপনার দেরিতে মাসিক হওয়ার ঘরোয়া প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। যেমন গাজর, পুদিনা পাতা, করলার রস, ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস ইত্যাদি।
দারুচিনি
যে সমস্ত খাবার বহুগুণে গুণান্বিত, দারুচিনি তার মধ্যে অন্যতম। অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করতে চা বা লেবুর রসের সাথে দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি পিরিয়ড নিয়মিত করার পাশাপাশি পিরিয়ডকালীন ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ
হলুদ মসলা জাতীয় দ্রব্য হলেও প্রাচীন কাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে এর ব্যবহার নানামুখী। এটি পিরিয়ড নিয়মিত করতে এবং শরীরে হরমোন ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ জরায়ুর মাংসপেশী সঙ্কোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ পিরিয়ড-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ নিয়ে মধু বা গুড় দিয়ে কিছুদিন খেয়ে দেখুন, পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন।
আপেল সাইডার ভিনেগার
খাবার খাওয়ার আগে ২ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এটি রক্তের ইনসুলিন ও ব্লাড সুগার কমিয়ে দিয়ে থাকে, যা মাসিক নিয়মিত করে থাকে।