আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove warts
Home remedies to remove warts

আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় - Home remedies to remove warts

আঁচিল এক প্রকার ভাইরাসজনিত সংক্রামণ। এটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে উঠতে দেখা যায়। আঁচিল কিছুটা ফোস্কার মত। মুখের ত্বকে উঠলে এটি খুব বিব্রতকর দেখায়। আঁচিল সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়। উঠলে যেন আর যেতেই চায় না। তাই আঁচিল দূর করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ওষুধ খাওয়া হয়। এই ওষুধের পরিবর্তে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে আঁচিল দূর করতে পারেন।

আঁচিল কি

আঁচিল হচ্ছে ছোট রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপর অনেকটা ফুলকপির মত বৃদ্ধি অথবা কঠিন ফোস্কার মত দেখায় । এটা সাধারণত মানুষের হাতে বা পায়ে অথবা শরীরের অন্যান্য স্থানে দেখা দেয় ।, । মানবদেহে ১০ রকমের আঁচিল বা ফুসকুড়ি হতে পারে, এর মধ্যে বেশিরভাগগুলোকেই নিরীহ বলে মনে করা হয় । আঁচিলকে ননক্যানসারাস (noncancerous) বলা হয়। আঁচিল মূলত একটি বৃন্ত (Stalk) এর সাহায্যে চামড়ায় লেগে থাকে, যাকে Peduncle বলা হয়। চিকিৎসাবিদ্যায় আঁচিলকে অনেক নামে ডাকা হয়। যেমন— acrochordon, fibroepithelial polyp, cutaneous papilloma I soft fibroma।

চেনার উপায়

প্রাথমিক অবস্থায় আঁচিল ত্বকের রঙের ছোট ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে আকারে বড়, অমসৃণ ও শক্ত হতে থাকে। সাধারণত হাতে ও পায়ে বেশি দেখা যায়। মুখ ও যৌনাঙ্গেও এটি হতে দেখা যায়।

সাধারণত কোনো ব্যথা থাকে না।

চুলকানিও সাধারণত থাকে না। তবে যৌনাঙ্গের আঁচিলে চুলকানি হতে পারে।

ধরন

আঁচিল বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন সাধারণ আঁচিল, যা হাতে ও পায়ে দেখা যায়।

মুখে যে আঁচিল দেখা যায়, তা আকারে ছোট ও সমান হওয়ার কারণে একে ‘ফ্লাট ওয়ার্ট’ বলে।

পায়ের তলায় যে আঁচিল হয়, তা পায়ের তলার আঁচিল নামেই পরিচিত।

যৌনাঙ্গের আঁচিলকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘কনডাইলোমা একোমিনাটা’। এটি এক ধরনের যৌন সংক্রমণজনিত রোগ।

আঁচিল দূর করার প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো-

১.গরম পানি

একটি পাত্রে পানি ফুটতে দিন। ফুটন্ত পানিতে আঁচিলের অংশটুকু ততক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন যতক্ষণ ব্যথা না করে। সঙ্গে সঙ্গেই গরম পানি থেকে তুলে আঁচিলের ওপর ঠাণ্ডা কিছু প্রয়োগ করুন। দিনে তিনবার করে এই পদ্ধতি চলবে দুই সপ্তাহ। 

২.কলার খোসা

একটি কলার খোসা নিয়ে তার ভেতরের দিকটি আঁচিলের দিকে মুখ করিয়ে, আঁচিলকে স্পর্শ করিয়ে রাখুন। এরপর এটিকে সুতির কাপড়ের ব্যান্ডেজ দিয়ে জড়িয়ে রেখে দিন সারা রাত। খুব সহজেই আপনি আঁচিলের থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কলার খোসায় থাকে প্রাকৃতিক এনজাইম। এ ছাড়াও থাকে অক্সালিক ও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এই দুটির মিশ্রণ খুব সহজেই আপনার মুখের দাগকে মিশিয়ে দেয়।

৩.আপেল সাইডার ভিনিগার

আপেল সাইডার ভিনিগারের সঙ্গে সমান পরিমাণে পানি মেশান। এরপরে একটু তুলা এই মিশ্রণে ভিজিয়ে নিয়ে আঁচিলের উপরে লাগান। এবার সেটি একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে দিন। তিন-চার ঘণ্টা এমনই রেখে দিন।

৪.বেকিং পাউডার

ক্যাস্টর অয়েল এবং বেকিং পাউডারের একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। মিশ্রণটা আঁচিলের উপর ভালো করে লাগিয়ে বেঁধে রাখুন জায়গাটা। সারারাত এভাবে রাখুন। দু-তিন দিন পর থেকেই ফল পেতে শুরু করবেন। ক্রমশ আঁচিল অদৃশ্য হয়ে যাবে।

৫.ডিম

একটা কাঁচা ডিম ভেঙে কুসুম ও ডিমের সাদা অংশ একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে ব্রাশের সাহায্যে আঁচিলের উপর লাগান। পর পর দু’সপ্তাহ দু’দিন করে এটি আঁচিলের উপর লাগান। কিছুক্ষণ রাখুন। তার পর মিশ্রণটি শুকিয়ে এলে সাবান ও ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।

৬.শুকনা মরিচের সস

শুকনা মরিচ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বহু বছর ধরে। আর আঁচিল দূর করতে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত। পানির সঙ্গে শুকনা মরিচ বাটা মিশিয়ে ‘পেস্ট’ তৈরি করতে হবে। এটি আঁচিলের ওপর দিনে দুই বেলা প্রয়োগ করতে হবে দুই সপ্তাহ ধরে। এতে আঁচিল রং বদলাবে এবং ছোট হতে থাকবে।

৭.পেঁয়াজ

প্রাকৃতিকভাবে আঁচিল দূর করতে পেঁয়াজ অত্যন্ত ফলদায়ক। পেঁয়াজ কুচি করে কেটে একটি পাত্রে সারা দিন ঢেকে রেখে দিন। রাতে ঘুমানোর আগে পেঁয়াজ কুচির সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে আঁচিল হওয়া ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিন। প্রথম অবস্থাতে হালকা ঝাঁজ বা জ্বালা করতে পারে, তবে এই পদ্ধতি আঁচিল দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৮.রসুন

সবার ঘরেই থাকে এই উপকারী ভেষজ। রসুনের অনেকগুলো গুণের মধ্যে একটি হলো, এটি আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে। প্রথমে রসুনের কয়েকটি কোয়া নিয়ে কুচি করে নিন। এবার সেগুলো দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্ট আঁচিলের উপরে লাগিয়ে রাখুন। মিনিট দশেক পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট বেশিক্ষণ ত্বকে না রাখাই ভালো। 

৯.আলু

আলুর একটি ছোট টুকরো নিয়ে মিনিট পাঁচেক সময় ধরে আঁচিল অংশটিতে ঘষতে থাকুন। অথবা, আলুর টুকরোটিকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে আঁচিল হওয়া অংশটিতে চেপে ধরে রাখুন। আঁচিলকে সম্পূর্ণ মিলিয়ে দিতে দিনে অন্তত দুইবার এটা করতে থাকুন।

১০.মধু

আঁচিল দূর করতে মধুও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এজন্য আঁচিলের ওপর মধু লাগিয়ে ব্যান্ডএড দিয়ে আটকে নিন। এক ঘণ্টা পরে ব্যান্ডএডটি খুলে আঁচিলের স্থানটি ধুয়ে ফেলুন। দিনে তিনবার উপায়টি অনুসরণ করলেই আঁচিল দূর হয়ে যাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।

১১.টি ট্রি অয়েল

টি ট্রি অয়েল আঁচিল সম্পূর্ণ নির্মূল করতে সক্ষম। কিছু তুলা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার টি ট্রি অয়েল ভেজা তুলাতে নিয়ে আঁচিল হওয়া ক্ষতস্থানে ঘষতে থাকুন। আপনার আঁচিল হওয়া ক্ষতস্থানে চুলকাতে পারে, তারপরেও আপনি ভালো করে টি ট্রি অয়েল দিয়ে আক্রান্তস্থান পরিষ্কার করুন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আপনার আঁচিল দূর হবে।

১২.নারকেল তেল

আঁচিলের অংশটিতে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ৩০ মিনিট। সম্ভব হলে সকালে ও রাতে এভাবে দিনে দু’বার করে ব্যবহার করুন। আপনার আঁচিলের কোনও দাগই থাকবে না। নারকেল তেল ত্বকের জলীয়ভাবকে রাসায়নিকভাবে উন্নত করে, তাই খুব সহজেই আপনি এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

১৩.অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেল আঁচিল দূর করার অ্যান্টিসেপটিক থাকে। অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল টুকু ছাড়িয়ে আঁচিল হওয়া আক্রান্তস্থানে ম্যাসাজ করুন। ত্বকে জেল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার আক্রান্তস্থান থেকে আঁচিল ধীরে ধীরে শুকিয়ে ছোট হয়ে পরিপূর্ণভাবে দূর হবে।

১৪.হলুদ

যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদানটি বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আঁচিলের চিকিৎসায়ও হলুদ কাজে লাগে। এজন্য ১ চামচ হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে ১টি ভিটামিন সি ট্যাবলেট গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর তাতে অল্প করে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আঁচিলের ওপর ব্যবহার করতে হবে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুইবার এটি ব্যবহারের ফলে আঁচিল থেকে মুক্তি পাবেন।

১৫.ডালিমের খোসা ও লেবুর রস

আঁচিল দূর করতে লেবুর রস চমৎকার কাজ করে। ডালিমের খোসা ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুড়া করে নিন। ডালিমের খোসার গুঁড়োর সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি আঁচিলে লাগান।

চিকিৎসা

আঁচিল অপসারণের জন‍্য বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ইলেকট্রোডেসিকেশান।

ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত কোষকে কেটে অপসারণ করা যায়।

লেজারের মাধ্যমে আঁচিলের চিকিৎসা করা সম্ভব।

কিছু ক্ষেত্রে স্যালিসিলিক অ্যাসিড, ইমিকুইমড ক্রিম ক্যানথারিডিন এককভাবে অথবা পোডোফিলিনের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব‍্যবহার করা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় জরায়ুতে ব্যথার কারণ - Causes of uterine pain during pregnancy
শুচিবাই কি?শুচিবাই থেকে মুক্তির উপায়
গর্ভবতী অবস্থায় রক্তপাত হলে করণীয় - What to do if you bleed while pregnant
চিকেন পক্স হলে যা করণীয় - What to do if you have chicken pox
বাংলাদেশের সেরা হাসপাতালের তালিকা
জিও ভিটা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
গর্ভবতী মহিলাদের ফলিক এসিড আয়রন ও জিংক ট্যাবলেট
পিরিয়ডের রক্তের রং জানান দেবে স্বাস্থ্যের অবস্থা
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর হোমিওপ্যাথি ঔষধ - Homeopathy medicine to reduce excessive sweating
জ্বর ও মাথাব্যাথায় যে দোয়া পড়বেন - Prayers for fever and headache