ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যেসব সমস্যা হয় - Eye problems caused by diabetes
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যে রোগের কারণে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রোগাক্রান্ত হতে পারে। চোখের মনি, লেন্স, রেটিনা, চোখে ছানি পড়া, চোখের ইনফেকশন- সবকিছুই ডায়াবেটিসের কারণে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব রোগের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, তার মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি একটি। যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে ৩/৪ বছর ডায়াবেটিসের মধ্যেই রেটিনা খারাপ হয়ে যায়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের কোন কোন রোগে ভোগেন?
ছানি
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে ছানির সমস্যা খুবই সাধারণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছানি আরও খারাপ প্রভাব ফেলে চোখে। ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ছানি আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।
গ্লুকোমা
ক্ষতিগ্রস্থ স্নায়ু বা রক্তনালিগুলো দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায় ও চোখে চাপ তৈরি করে। ফলে চোখে যে পরিমাণ তরল জমা হয় তা নিষ্কাশিত হয় না। ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ ধরনের গ্লুকোমা অর্থাৎ ওপেন-এঙ্গেল নিরাময় করতে পারে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
আপনার যদি টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে চোখের এই রোগের বিকাশ ঘটতে পারে। রেটিনার ক্ষতির কারণে এটি ঘটে।
ম্যাকুলার এডিমা
এটি সাধারণত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির সঙ্গে একত্রে ঘটে। এক্ষেত্রে চোখের ভেতরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি, তরল বা রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যা স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
ঝাপসা দৃষ্টি
ডায়াবেটিসের কারণে অনেকের দৃষ্টি ঝাপসাও হয়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো।
করণীয়
আমাদের করণীয় যদি কোনো ব্যক্তির ডায়াবেটিস থাকে, বছরে একবার অন্তত চোখ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। রেটিনা পরীক্ষা করা উচিত। ১০ বছরের উপরে যেসব ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আক্রান্ত হতেই পারে। এখন আমাদের দেশে এই রোগী সুচিকিৎসা দেওয়া হয়। শুধু ঢাকাতে নয় বিভাগীয় শহরগুলোতেও পরীক্ষা ও সার্জারি করা হচ্ছে।
চিকিৎসা
রোগ কতটা থাবা বসিয়েছে তা বিচার করে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সেটা দেখার জন্য রেটিনা সার্জনরা সাধারণত কয়েকটি পরীক্ষা করান। এগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি (DFA), চোখের স্ক্যান (OCT)। লেজার থেরাপি, চোখের ইঞ্জেকশন (anti VEGF) বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে জল জমা কমিয়ে দৃষ্টিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এই রোগে চোখের সূক্ষ্ম রক্তজালিকাগুলি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ভিট্রিও রেটিনাল সার্জনদের কাছে সবচেয়ে বেশি এই সমস্যাগুলি নিয়েই রোগীরা আসেন। এই সমস্যার মূল চিকিৎসা লেজার থেরাপি। যার নাম প্যান রেটিনাল ফটোকোয়াগুলেশন (PRP)।
রোগীর কেন্দ্রীয় দৃষ্টিপথের আশপাশে যেসব কোষকলায় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় সেগুলিকে লেসার রশ্মি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এভাবে ভঙ্গুর ও লিক করতে থাকা রক্তজালিকাগুলির বৃদ্ধি রোধ করাও সম্ভব। এই চিকিৎসা করে রোগের বাড়বাড়ন্ত রোধ করা সম্ভব। চোখে রক্তক্ষরণও প্রতিরোধ হয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া