মরুঅঞ্চলের ফল খেজুর। পুষ্টিমানে যেমন এটি সমৃদ্ধ, তেমনি এর রয়েছে অসাধারণ কিছু ঔষধিগুণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয়েছে, সারা বছর খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া, এই ফলটিতে রয়েছে প্রাণঘাতী রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা।পৃথিবীতে সাড়ে চারশ’ জাতেরও বেশি খেজুর পাওয়া যায়।
খেজুর সম্পর্কে হাদিস:তামার বা খেজুর শব্দটি আল কোরআন ও রাসূলের বাণীতে অনেক বার এসেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনি রোজাদারকে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি খেজুর পাবে সে যেন তা দিয়ে ইফতার করে। আর যদি না পায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করবে কেননা তা অধিক পরিষ্কারক ও পবিত্র। -সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিজি
বাংলাদেশের খুলনা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফরিদপুর, লালমাই পাহাড়ী এলাকা, ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ে এ গাছ বেশি এবং সর্বত্রই কমবেশি জন্মে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে, বাংলাদেশে ৬৮.১০ বর্গকিলোমিটার জমিতে খেজুর গাছ জন্মে। এদেশে খেজুর গাছের সংখ্যা ৬ কোটি ৬৭ লক্ষের বেশি।খেজুর গাছ স্ত্রী, পুরুষ উভয়ই হয়। শতকরা ৫০ ভাগ স্ত্রী গাছ হয়। ৪-৮ বছরের মধ্যে গাছে ফল আসে। স্ত্রী গাছে ফুল ও ফল হয়। ফল প্রথমে সবুজ. পাকলে খয়েরি লাল রঙের হয়। শীতের শেষে ফুল ধরে ও গ্রীষ্মে ফল পরিপক্ব হয়। একটি গাছে ৭০-১৪০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এ দেশের খেজুর বিস্বাদ হয়।
খেজুরের পুষ্টিগুণঃ
খেজুর একটি মিষ্টি জাতীয় ফল, এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পটাসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে সহ প্রচুর খাদ্য গুণ রয়েছে যা আপনাকে প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা পূরন করতে সাহায্য করে। আসুন এর পুষ্টিগুণ গুলো জেনে নেই।
ভিটামিন: খেজুরে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। বিশেষ করে এতে ই-১, ই-২, ই-৩, ই-৫ ও ভিটামিন-সি রয়েছে। খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগপ্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
লোহা: খেজুরে লোহা আছে ৭ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম। লোহা মানবদেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাদের হৃৎপিণ্ড দুর্বল, খেজুর হতে পারে তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পথ্য। এ ছাড়া গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীদের জন্য এবং বাড়ন্ত বয়সী কিশোরীদের বাড়তি লোহার প্রয়োজন হয়। খেজুর তাদের জন্যও উপকারী।
আমিষ: একটি খেজুরে ২ দশমিক ২ গ্রাম আমিষ আছে। আমিষ বা প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে শরীরের পেশি গঠনে সহায়তা করে। পাশাপাশি শরীরের জন্য খুব অপরিহার্য প্রোটিনও সরবরাহ করে।
ক্যালসিয়াম: খেজুরে ক্যালসিয়াম আছে ৬৩ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। ফলে খেজুর খেলে হাড় মজবুত হয়। এ ছাড়া খেজুর শিশুদের দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল ও চর্বি: প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে আছে শূন্য দশমিক ৬ গ্রাম কোলেস্টেরল ও চর্বি। সামান্য পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকলেও তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। ফলে খেজুর খাদ্যতালিকায় রাখলে স্বাস্থ্যের হানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
খেজুরের উপকারিতা:
১.ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব। সাথে সাথে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।
২.খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রক্তে লৌহিত কণিকার প্রধান উপাদানের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। খেজুর লৌহসমৃদ্ধ বলে এই রক্তশূন্যতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
৩.খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। এতে করে খাবার হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৪.হৃদপিণ্ডের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। গবেষণায় দেখা যায়, পুরোরাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।
৫.উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
৬.তুলনামূলকভাবে শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়।
৭.খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
৮.খেজুরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে সহায়তা করে যা মানুষকে মানসিক প্রফুলতা দেয়। যা মন ভাল রাখতে সহায়তা করে।
৯.খুব দুর্বল লাগছে অথবা দেহে এনার্জির অভাব হচ্ছে? তাহলে ঝটপট খেয়ে নিন খেজুর। তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহের ক্ষেত্রে খেজুরের তুলনা নেই।
১০.খেজুরের শরীরের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। এর শতকরা ৮০ ভাগই চিনি। তাই শুকনো খেজুর বা খোরমাকে বলা হয় মরুভূমির গ্লুকোজ।
১১.খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে। প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
১২.রুচি বাড়াতে খেজুরের কোন তুলনা হয় না। অনেক শিশুরা তেমন একটা খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।
১৩খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়। ফলে ওজন বেশি বাড়ে না, সঠিক ওজনে দেহকে সুন্দর রাখা যায়।
১৪.খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমার জন্য উপকারী।
১৫.নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা অনেক।
১৬.পক্ষাঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী।
১৭.খেজুর ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
১৮.খেজুর শরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে ।
১৯.যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।
২০.খেজুর পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে ।
২১.খেজুরের ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে।
২২.খেজুরে কোলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
২৩.খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২৪.খেজুর হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
২৫.খেজুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।.
২৬.খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে।
২৭.খেজুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।
২৮.খেজুর দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।