গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়-High blood pressure during pregnancy causes, symptoms and treatment
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, একটি সাধারণ মেডিকেল কন্ডিশন যাতে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সেই উচ্চ রক্তচাপ যখন গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়, তখন এটি বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে কখনো কখনো জটিল অবস্থা তৈরি হতে পারে। তাই গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ধরন
রক্তচাপকে মিলিমিটার (পারদ) বা mmHg এককে মাপা হয়। সাধারণত রক্তচাপ ১৪০/৯০ অথবা তার বেশি হলে হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ আছে বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়—
রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার (mmHg) | উচ্চ রক্তচাপের ধরন |
১৪০/৯০ থেকে ১৪৯/৯৯ | মৃদু |
১৫০/১০০ থেকে ১৫৯/১০৯ | মাঝারি |
১৬০/১১০ ও তদূর্ধ্ব | তীব্র |
তীব্র উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বাকি দুই ক্ষেত্রে বাসায় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সবগুলো ক্ষেত্রেই ঔষধ দিয়ে রক্তচাপ ১৩৫/৮৫ বা তার নিচে আনার চেষ্টা করা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ
১) গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ
প্রেগনেন্সির আগে যাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ ছিলো, তাদের যদি গর্ভাবস্থায় ২০ সপ্তাহের পর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় তখন তাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত ১৪০/৯০ মিমি পারদ চাপ এর সমান বা তার বেশি হলেই তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে নির্ণয় করা হয়। কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে এটি সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর পরই ঠিক হয়ে যায়।
২) দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ
দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থার আগে থেকেই থাকতে পারে বা গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের আগে নির্ণয় করা যেতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার পরেও চলতে পারে এবং ঝুঁকি কমাতে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না, তাই এটি ঠিক কখন থেকে শুরু হয় তা জানা মুশকিল।
৩) প্রি-এক্লাম্পসিয়া
গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পর যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সেটি প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় রূপ নিতে পারে। এটি একটি মারাত্মক গর্ভকালীন জটিলতা। প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ফলে কিডনি, ব্রেইন, লিভারে ক্ষতি হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা মা ও শিশুর জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ দেখা দেয়। মায়ের খিঁচুনি শুরু হতে পারে, আরও অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়
প্রতিদিন কিছু সময় ধরে শরীরচর্চা করে শরীরকে সচল রাখলে সেটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এজন্য জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। দিনে আধা ঘণ্টা করে হাঁটা, ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করা কিংবা সুযোগ থাকলে সাঁতার কাটার মতো কিছু বেছে নিতে পারেন।
সুষম খাবার খাওয়া ও খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
অনেকে ধারণা করেন যে ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড অথবা মাছের তেলের মতো সাপ্লিমেন্ট উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর। তবে এরকম তথ্যের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সপ্তাহে ১-২ বার রক্তচাপ মাপার চেষ্টা করুন। তারিখ আর সময় উল্লেখ করে একটা কাগজে ব্লাড প্রেসারগুলো লিখে রাখতে পারেন যাতে পরবর্তী চেকআপের সময় তা দেখাতে পারেন। তাহলে ব্লাড প্রেসারের ঔষধে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না তা বুঝতে সহজ হবে।
উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতা
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের কারণে গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নানান রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। তাই নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাওয়া এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে করনীয় বিষয়গুলো মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি
* প্রি-এক্লাম্পসিয়া
* এক্লাম্পসিয়া বা খিঁচুনি
* ব্রেইন স্ট্রোক
* জরায়ু থেকে গর্ভফুল আলাদা হয়ে যাওয়া
* ঔষধের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা শুরু করার প্রয়োজন হওয়া
শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি
* গর্ভের ভেতরে বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদানের অভাব হওয়া
* গর্ভকাল (৩৭তম সপ্তাহ) পূর্ণ হওয়ার আগেই শিশুর জন্ম হওয়া
* জন্মের সময়ে ওজন স্বাভাবিক (২.৫ কেজি) এর চেয়ে কম হওয়া
প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হলে করণীয় কী?
১) গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি, নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা এবং লাইফস্টাইলে পজেটিভ চেঞ্জ আনা খুব জরুরি। রক্তচাপের ওঠানামা মনিটর করা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্তচাপ মনিটর করে যদি কোনো পরিবর্তন শনাক্ত করা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২) প্রেগনেন্সিতে অতিরিক্ত লবণ, চিপস, প্রসেসড ফুড এগুলো এড়িয়ে চলুন। উচ্চমাত্রায় লবণযুক্ত পানীয়- বোরহানী, জিরা পানি, ঘোল, লাবাং বা মাঠা এগুলোও এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি একদম বাদ দিতে হবে।
৩) আল্ট্রাসাউন্ডে ভ্রূণের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি ও সুস্থতার নিরীক্ষণ করতে হবে, যাতে যেকোনো জটিলতা সময়মতো শনাক্ত করা যায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
৪) কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসক কিছু নির্দিষ্ট মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যা সাবধানতার সাথে ও নিয়ম মেনে সেবন করতে হয়। যারা কনসিভ করার আগের থেকেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ গ্রহণ করেন, তারা অবশ্যই গাইনোকলিস্টের সাথে পরামর্শ করে নিন কেননা এই সময়ে মেডিসিন ও ডোজে কিছু চেঞ্জ আসতে পারে।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#জাহেদুল ইসলাম
আমি চাকরি করব#মোঃ সাহেদুল ইসলাম
আমি চাকরিটি করতে আগ্রহী