জনপ্রিয় ১০ কোরিয়ান মুভি – Top 10 Korean Movies
থ্রিলারধর্মী সিনেমার জন্য কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত । পরতে পরতে টুইস্ট এবং কাহিনীর বৈচিত্র্যে দক্ষিণ কোরিয়ান বেশ কিছু সিনেমা হলিউডের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে । প্রতিটি সিনেমা আপনাকে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পর্দায় চোখ আটকে রাখতে বাধ্য করবে । তাদের মুভিতে কাহিনীর প্লট , টুইস্ট , অভিনয় এসব কিছুই অন্যান্য মুভি থেকে একদম ভিন্ন । কোরিয়ানদের মুভি এজন্যেই দেখতে ভালোই লাগে সবার কাছে । এরা হরর এর সাথে মেশাবে ড্রামা , একশনের সাথে মেশাবে কমেডি । আর এসবে মিশ্রণ হবে একদম খাপেখাপ । কোনো কোরিয়ান সিনেমার যদি গল্প ভালো না লাগে , তবুও সেই মুভির ক্যামেরাওয়ার্ক এবং বিজিএম আপনার মন ধরে রাখবে । বেশকিছু ভালো ভালো কোরিয়ান মুভির রিভিউ করব । আশা করি মুভিগুলো দেখলে আপনি হতাশ হবেন না ।
১.পান্ডোরা-Pandora
পান্ডোরা মুভিটি পরিচালনা করেছেন পার্ক জং-উ । ২০১৬ সালে পান্ডোরা মুভিটি মুক্তি পায় । ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিস্ফোরণ এমন এক বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করে যা কর্মী ছাড়া অন্য কেউ এর বিস্তার রোধ করতে পারবে না । জে-হিয়োক , তার মা , ভগ্নিপতি এবং ভাতিজা মিন-জায়ে একটি ছোট কোরিয়ান শহরে থাকেন । স্থানীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করার সময় তিনি ইয়েন-জু এর সাথে ডেটিং করছেন । এদিকে , পিয়ং-সাব একই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করে । সে সেখানকার অবস্থা নিয়ে চিন্তিত , কিন্তু সরকারের কেউ তার কথা শোনে না । ভূমিকম্প সেই ছোট্ট শহরে আঘাত করে যেখানে জে-হিয়োক বাস করে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটায় । পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় , যা গোটা জাতিকে আতঙ্কের দিকে নিয়ে যায় । কি হয় শেষে ?? জানতে হলে অবশ্যই আপনার মুভিটি দেখতে হবে ।
২.এক্সট্রিম জব-Extreme Job
এক্সট্রিম জব মুভিটি পরিচালনা করেছেন লি বাইওং-হেওন । এত সুন্দর একটা গল্পের লেখক ছিলেন বা সে-ইয়াং । ২০১৯ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । পাঁচ সদস্যের একটা পুলিশের দল , যাদের রেকর্ড খুবই বাজে । এতই বাজে যে তাদেরকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে চায় পুলিশ প্রধান । নিজেদের চাকরি এবং সম্মান দুইটাই পাওয়ার সুযোগ আসে তাদের সামনে । একটি বড় ড্রাগ মাফিয়া গ্যাং ধরার জন্য এই পাঁচজনের আন্ডার কভার পুলিশের দল মিলে একটি রেস্টুরেন্টকে বেজ হিসেবে ব্যাবহার করে । সেই রেস্টুরেন্ট থেকেই তারা ওই গ্যাংদের ফলো করে । রেস্টুরেন্ট থেকে মাফিয়াদের ফলো করে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানবে এবং এদের হাতেনাতে ধরবে এই ছিল তাদের পরিকল্পনা । কিন্তু একটা সময় ভাগ্যের জোরে পুলিশের চাকরিকে পাশে রেখে এরা শুরু করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা । এখন তারা পুলিশ হয়ে কি মাফিয়াদের পিছু নিবে নাকি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ভালোভাবে চালাবে সেটা নিয়েই মুভির কাহিনী সামনে এগুতে থাকে । মুভি সম্পর্কে যদি কিছু বলতে হয় তাহলে আমি বলব কমেডি হিসেবে মুভি পারফেক্ট ।
৩.দি চেজার-The Chaser
দি চেজার মুভিটি পরিচালনা করেছেন হংক-জিন । এবং গল্পের লেখক ছিলেন উইন-চ্যান হংক এবং সিনহো লি । ২০০৮ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । আর্থিক সমস্যার কারণে সাবেক ডিটেকটিভ ইয়োম জং-হো জড়িয়ে পরে যৌন ব্যবসায় । কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সে লক্ষ্য করে , তার তত্ত্বাবধানে থাকা মেয়েরা একে একে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে । তার ধারণা টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে তারা । একদিন তার পরিচিত লোক একটি মেয়ের জন্য তাকে কল করে । অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও মি-জিন নামের একটি মেয়েকে ঐ লোকটির কাছে যেতে বাধ্য করে সে । এরপর সে হঠাৎ লক্ষ করে , এখন পর্যন্ত যতগুলো মেয়ে হারিয়ে গেছে তাদের সবাইকে সে ঐ লোকের কাছেই পাঠিয়েছিলো । সে খুঁজতে থাকে ঐ লোকটিকে এবং বুঝতে পারে তার উপর নির্ভর করছে মেয়েটির জীবন । ওদিকে মি-জিনও বুঝতে পারে সে ভয়ানক এক সিরিয়াল কিলারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে । মুভিটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি দৃশ্য আপনাকে আবেগতাড়িত করবে । চরিত্রগুলোকে মনে হবে খুব কাছের ।
৪.আই স দি ডেভিল-I Saw The Devil
মুভিটি পরিচালনা করেছেন কিম জি-ওওন । ২০১০ সালে আই স দ্যা ডেভিল মুক্তি পায় । নাম থেকে বোঝা যায় কেউ একজন শয়তানরুপী কাউকে দেখেছে । সিনেমাটি আসলে ভয়ংকর এক প্রতিশোধের গল্প বলে । সবচেয়ে কাছের মানুষটির হত্যার বদলা নিতে একজন সিক্রেট এজেন্ট একটি বিচিত্র পরিকল্পনা করে । সে মনে করে , হত্যাকারীকে শুধু হত্যা করলেই সেটা উপযুক্ত প্রতিশোধ হয় না , তার জন্য দরকার আরও বেশি কিছু । আর এই পরিকল্পনাই তাকে পরিণত করে ভয়ানক এক দানবে যার নৃশংসতা ছাড়িয়ে যায় ঐ সিরিয়াল কিলারের নৃশংসতাকেও । আগেই বলে রাখা ভালো যে সিনেমাটিতে রয়েছে প্রচুর ভয়াবহ অপরাধমূলক দৃশ্য । শুরু থেকে শেষপর্যন্ত প্রতি মুহুর্তে আপনার মানসিক শক্তির সর্বোচ্চ পরীক্ষা করবে এই মুভি ।
৫.ট্রেন টু বুসান-Train to Busan
২০১৬ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । মুভির কাহিনী শুরু হয় একজন বাবা ও তার ছোট মেয়েকে নিয়ে । ওই মেয়েটির বাবা-মা সেপারেট হয়েছে অনেক দিন হলো । মা থাকে বুসানে । আর বাবা-মেয়ে থাকে সিওলে । মেয়েটি তার বাবার কাছে আবদার করে বসে যে জন্মদিনে তার কোন উপহার লাগবে না , সে শুধু মায়ের সাথে দেখা করতে বুসানে যেতে চায় । বাবা তার একমাত্র মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে পরের দিনই বের হয়ে পড়ে মার সাথে মেয়ের দেখা করানোর উদ্দেশ্যে । ওইদিকে শহরে এক ভয়ানক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে , যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ জোম্বিতে পরিণত হচ্ছে ও অন্য মানুষদেরও কামড়িয়ে জোম্বিতে পরিণত করছে । কিছু সুস্থ মানুষ জোম্বিদের থেকে বাঁচতে সারভাইভ করার চেষ্টা করছিলো যাদের মধ্যে ছিলো বাবা আর মেয়েও । শেষ পর্যন্ত জোম্বিদের থেকে বেঁচে গিয়ে সকলে কি সেইফলি বুসান পৌঁছাতে পারে ?? জানতে হলে মুভিটি দেখতে হবে ।
৬.এ ট্যাক্সি ড্রাইভার-A Taxi Driver
এ ট্যাক্সি ড্রাইভার মুভিটি পরিচালনা করেছেন জাং হুন । এত সুন্দর একটা গল্পের লেখক ছিলেন ইওম ইউ-না । ২০১৭ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । সময়টা ১৯৮০ সাল । সেই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাস করতেন একজন প্রাইভেট ট্যাক্সিচালক । সংসারে তার মা মরা এগারো বছরের কন্যা ছাড়া আর কেউ ছিলো না । মেয়েকে তিনি বুকের আগলে রেখে জীবনযাপন করছিলেন । কিন্তু প্রাইভেট ট্যাক্সি চালিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া , সকল দেনাপাওনা শোধ করে দেওয়া , সাংসারিক খরচ উঠানো ও মেয়ের পড়াশুনোর খরচ বহন করাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিলো । কিন্তু মানুষটাকে দেখলে কখনওই বুঝে উঠতে পারবে না তার ভেতরে ভেতরে এতো হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা লুকিয়ে আছে । আর এই গল্পের উপর ভিত্তি করেই এই বছরের অন্যতম আলোচিত কোরিয়ান মুভি “ Taekshi Woonjunsa ” যার ইংরেজি নাম “ A Taxi Driver ” নির্মিত হয়েছে । মুভিটি মুক্তির পর থেকে কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যতকাল টিকে থাকবে , এই মুভি নিয়ে লোকে তাঁর প্রশংসা করবেই । কারণ অসাধারণ চিত্রকর্মগুলো কখনওই বিলীন হয়ে যায় না ।
৭.এ মোমেন্ট টু রিমেম্বার-A Moment To Remember
মুভিটি পরিচালনা করেছেন জন এইচ লি ।এবং গল্পের লেখক ছিলেন জন এইচ লি এবং কিম ইয়ং-হা । ২০০৪ সালে এ মোমেন্ট টু রিমেম্বার মুক্তি পায় । জীবন-মৃত্যু-ভালোবাসা শব্দ তিনটি একই বৃত্তে আবদ্ধ । মৃত্যু ছাড়া বাকি দুটো শব্দ মানুষের কাছে খুব বেশি প্রিয় । দুজন তরুণ-তরুণীর ভালোবাসাকে ঘিরে আবর্তিত মুভিটির গল্প । ভালোবাসার সময়গুলোতে প্রতিটি জুটিকেই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় । নিজেদের সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয় । সব মুহূর্তগুলো নিজেদের অনুকূলে থাকেনা , ইচ্ছে করলে কিছু মুহূর্ত নিজের করা যায় না । সিউল-সু এবং সু-জিন নিজেদের সম্পর্কের গাঢ়তার পরিপূর্ণ রুপ দিতে চায় । সু-জিন আলজিমা রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে । এই রোগ তাদের সম্পর্কের মাঝে নতুন একটা অধ্যায়ের আবির্ভাব ঘটায় । মুহূর্তগুলোয় আসতে থাকে অন্যরকম অভিজ্ঞতা । সেখানে ভালোবাসা নতুন একটা সময়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় ।
৮.মাই গার্ল এন্ড আই-My Girl and I
মাই গার্ল এন্ড আই মুভিটি পরিচালনা করেছেন ইউন-সু জিওন । এত সুন্দর একটা গল্পের লেখক ছিলেন সিওং-গু হুয়াং । ২০০৫ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । দাদা ও নাতির রসিকতা কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গল্পে একসময় নাতির সাথে নিজের জীবনের প্রথম ভালোবাসা নিয়ে আলাপচারিতা শুরু করে দাদা । যে ভালোবাসায় আছে দায়িত্ব , কাউকে নিজের করে নেয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা । নাতি ভাবে দাদার সাথে দাদীর প্রেমটা ছিল , কিন্তু দাদা একসময় বলে তার প্রথম প্রেম তার স্ত্রী নয় , অন্যকেউ । চলতে থাকে দুই প্রজন্মের ভালোবাসার গল্পের দৃশ্য ।
৯.দি গ্যাংস্টার , দি কপ , দি ডেভিল-The Gangster, The Cop, The Devil
২০১৯ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । নিজের শিকার খুঁজতে খুঁজতে এক কিলার মুখোমুখি হয় শহরের অন্যতম গ্যাংস্টার লর্ড ডং-স । আর তাকেই কিনা হত্যা করতে যায় সিরিয়াল কিলার । কোনরকম বেচে ফেরে গ্যাং লর্ড । আর এরপরেই পুলিশ অফিসার কিম আর গ্যাং লর্ড ডং-সের মধ্যে এক অলিখিত চুক্তি হয় । তারা একে অপরকে সাহায্য করবে এই সিরিয়াল কিলারের পরিচয় জানতে । এই খোঁজাখুঁজি এক সময় প্রতিযোগিতায় পরিণত হয় । কারণ কিম চায় কিলারকে গ্রেফতার করতে , আর ডং চায় তাকে মেরে ফেলতে । এভাবেই আগাতে থাকে উত্তেজনায় ভরপুর এই মুভির প্লট ।
১০.ফরগটেন-Forgotten
কোরিয়ান মিস্ট্রি ও থ্রিলার ফরগটেন সিনেমাটি জিনসোকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কং হা-নিউল ও ইউসোকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিম মু-ইওল। এত সুন্দর একটা থ্রিলার গল্পের পরিচালক ও লেখক ছিলেন জাং হ্যাং-জুন। সিনেমাটির মূল দৃশ্যায়ন শুরু হয় ১১ই মার্চ, ২০১৭ তে এবং ৮ই জুন, ২০১৭ তে নির্মাণ শেষ হয়।
জাং হ্যাং-জুন ছবিটির কাহিনির আইডিয়া পান তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে যার কাজিন একমাসের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। যখন ফিরে আসেন তার মধ্যে অদ্ভুদ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যেন মানুষটা রাতারাতি পাল্টে গেছে। বন্ধুর বলা এই কাহিনিই তাকে গল্পটি নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়া জাং হ্যাং-জুন ফরাসি লোকগাথা নীল দাঁড়িওয়ালা থেকে প্রেরণা নেন। ২০১৭ সালে ফরগটেন মুক্তি পায় । ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজে এখন পর্যন্ত ২৪০০০ টি ভোটের মাধ্যেমে ৭.৫ রেটিং প্রাপ্ত হয়েছে মুভিটি।