ভারতের সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি ২০২৩
সিনেমা শিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় ভারত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও তাদের। এখানেই প্রতি বছর অসংখ্য ছবি একশো কোটি টাকার বেশি আয় করে। কোনোটার আয় আবার শতকের ঘরকে ছাড়িয়ে হাজার কোটিতে গিয়ে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে বলিউডকে টক্কর দিচ্ছে ভারতের দক্ষিণী ভাষার সিনেমা।
১.কেজিএফ-২
পরিচালক: প্রশান্ত নীল
অভিনয়ে: যশ,সঞ্জয় দত্ত,শ্রীনিধি শেঠি,রাভিনা ট্যান্ডন,প্রকাশ রাজ,অর্চনা জইস
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ১ হাজার ২৩৫ কোটি রুপি
সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার তালিকায় রয়েছে কন্নড় সিনেমা ‘কেজিএফ-২ ’। মুক্তির প্রথম দিন এটি আয় করে ১৬৫ কোটি ৫০ লাখ রুপি। এরপরের তিনদিনে যথাক্রমে আয় ১৩৯ কোটি ২৫ লাখ, ১১৫ কোটি ৮ লাখ ও ১৩২ কোটি ১৩ লাখ রুপি। চারদিন শেষে বিশ্বব্যাপী সিনেমাটির আয় ৫৫১ কোটি ৮৩ লাখ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৬২২ কোটি। বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি আয় করে ১ হাজার ২৩৫ কোটি রুপি।
২.আরআরআর
পরিচালক: এসএস রাজমৌলি
অভিনয়ে: রামচরণ তেজ, আলিয়া ভট্ট, এনটি রামা রাও জুনিয়র এবং অজয় দেবগন
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ১ হাজার ১২৭ কোটি রুপি
এরপর আয়ে এগিয়ে ‘আরআরআর’ এসএস রাজমৌলি দ্বারা লিখিত ও পরিচালিত ঐতিহাসিক তেলুগু অ্যাকশন চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রামচরণ তেজ, আলিয়া ভট্ট, এনটি রামা রাও জুনিয়র এবং অজয় দেবগন। এটি ভারতের দুই জন স্বাধীনতা যোদ্ধার বাস্তব ব্যক্তি আল্লুরি সিতারামারাজু এবং কমরাম ভীমকে কেন্দ্র করে একটি কল্পিত গল্প গড়ে তোলে, যারা ব্রিটিশ রাজবংশ এবং হায়দ্রাবাদের নিজামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। চলচ্চিত্রের গল্পটি তাদের স্ব-নিষিদ্ধ নির্বাসনের সময় তাদের জীবনের একটি কাল্পনিক পুনরুদ্ধার। ‘আরআরআর’; সিনেমাটির আয় ১ হাজার ১২৭ কোটি রুপি।
৩.পাঠান
পরিচালক: সিদ্ধার্থ আনন্দ
অভিনয়ে: শাহরুখ খান,দীপিকা পাড়ুকোন,জন আব্রাহাম,ডিম্পল কপাড়িয়া,আশুতোষ রানা
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ১ হাজার ৫০ কোটি রুপি
পাঠান ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় হিন্দি ভাষার অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র। এটি আদিত্য চোপড়া রচিত ও যশ রাজ ফিল্মস দ্বারা প্রযোজিত এবং সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র। হিন্দি সিনেমা হিসেবে ভারতে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড গড়েছেন শাহরুখের ‘পাঠান’। মুক্তির ৩৮ দিন পরে ‘পাঠান’ এর আয় ৫১১ কোটি রুপি। ফলে এটিই এখন ভারতের ইতিহাসে হিন্দি ভাষায় সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি।
বলিউডের বাণিজ্য বিশ্লেষক ও সিনে সমালোচক তরন আদর্শ জানান, হিন্দি ছবি হিসেবে ভারতে আয়ের বিচারে সবার ওপরে এখন ‘পাঠান’। এরপরে যথাক্রমে রয়েছে ‘বাহুবলী ২’, ও ‘দঙ্গল’।
আন্তর্জাতিক বাজারেও চুটিয়ে ব্যবসা করছে ‘পাঠান’। ইতোমধ্যে এর বিশ্বব্যাপী আয় ছাড়িয়ে গেছে ১ হাজার ৫০ কোটি রুপি। তবে ভারতে আয়ের রেকর্ড ভাঙলেও হিন্দি ছবি হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি ‘পাঠান’। এ রেকর্ড এখনো আমির খানের ‘দঙ্গল’ এর দখলে। এরপর আছে ‘বাহুবলি-২’, ‘আরআরআর’ এবং ‘কেজিএফ-২’।
উল্লেখ্য, যশরাজ ফিল্মস-এর স্পাই ইউনিভার্স সিরিজের ছবি ‘পাঠান’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। এছাড়াও আছেন দীপিকা পাদুকন, জন আব্রাহাম, ডিম্পল কাপাডিয়া প্রমুখ। অতিথি চরিত্রে চমক দেখিয়েছেন সালমান খান। ছবিটির বাজেট ২৪০ কোটি রুপি।
৪.বজরঙ্গি ভাইজান
পরিচালক: কবির খান
অভিনয়ে: সালমান খান, হারশালি মালহোত্রা, কারিনা কাপুর
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ৯০৯ কোটি রুপি
সালমান খান অভিনীত এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই। যেটি ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। কারণ, ভারত-পাকিস্তান সম্প্রীতির গল্প দেখানো হয়েছিল ছবিটিতে। সালমানের বিপরীতে সেখানে নায়িকা ছিলেন কারিনা কাপুর।
এ ছবির নির্মাণব্যয় ছিল ৯০ কোটি টাকা। সারাবিশ্বে সেটি আয় করে নিয়েছিল ৯০৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। ব্যাবসায়ের নিরিখে এই ছবির স্থান সেরা। ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ পরিচালনা করেছিলেন কবির খান। অন্যদিকে, অভিনয়ের পাশাপাশি এর প্রযোজক ছিলেন সুপারস্টার সালমান খান নিজেই।
৫.সিক্রেট সুপারস্টার
পরিচালক: আদবাইত চন্দন
অভিনয়ে: জাইরা ওয়াসিম,আমির খান
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ৯০০ কোটি রুপি
সিক্রেট সুপারস্টার হল একটি ভারতীয় সঙ্গীত-নাট্য চলচ্চিত্র, যেটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন অদ্বৈত চন্দন এবং প্রযোজনা করেছেন আমির খান ও কিরন রাও। এর মুল কাহিনী হল একটি মুসলিম বালিকাকে নিয়ে যে কিনা সঙ্গীত শিল্পী হতে চায় এবং এতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাইরা ওয়াসিম, মেহের ভিজে ও আমির খান।
আদবাইত চন্দন পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর। ছবিটির নির্মাণ ব্যয় ছিল মাত্র ১৫ কোটি রুপি। বলিউডের মতো বিশাল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই অংকটাকে স্বল্প বাজেট বলা হয়। কিন্তু ছবিটির আয়ের অংক শুনলে চোখ কপালে উঠবে যে কারও। সারা বিশ্ব থেকে ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ আয় করেছিল ৯০০ কোটি টাকা। তার পরও আয়ের নিরিক্ষে আমির খান অভিনীত এই ছবি আছে সর্বকালের সেরার তালিকায় পাঁচ নম্বরে। কদিন আগেও যেটি ছিল চার নম্বরে।
৬.বাহুবলী ২
পরিচালক: এসএস রাজামৌলি
অভিনয়ে: প্রভাস, রানা দাগগুবাতি এবং আনুশকা শেঠি
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ৫১০ কোটি রুপি
ছবিটি বাহুবলী চলচ্চিত্র ফ্র্যাঞ্চাইজের দ্বিতীয় পর্ব। এই ছবির মূল উপজীব্য অমরেন্দ্র বাহুবলী ও ভল্লালদেব নামে দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভারতীয় সিনেমায় ভিজ্যুয়াল এফেক্টের মানকে একটি অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছে সিনেমাটি। পরিচালক যেভাবে দর্শকদের একটি আবেগময় রোলার কোস্টার রাইড দিয়েছেন কল্পনার জগতে তা সত্যিই প্রশংসিত। মুক্তিলাভের ছয় দিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী আটশ কোটি টাকা টাকা আয় করে এই ছবিটি ‘পিকে’ ছবির আয়কেও ছাপিয়ে যায়। অল্পকালের মধ্যেই এটি সর্বকালের সর্বাধিক লাভজনক ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্থান অধিকার করে নেয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও উইকিপিডিয়াতে ছবিটির আয়ের ব্যাপারে নানা রকম তথ্য এসেছে। তবে প্রায় সবার তথ্যই বলছে, ছবিটি ভারতের বাজারে ৫০০ কোটি রুপিরও বেশি আয় করেছে।
৭.বিক্রম
পরিচালক: লোকেশ কনকরাজ
অভিনয়ে: কমল হাসান,বিজয় সেতুপতি,ফাহাদ ফজিল
বক্স-অফিস সংগ্রহ : ৪৪২.৪৫ কোটি
বিক্রম হলো জুন ২০২২ সালের ভারতীয় তামিল ভাষার অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র, যেটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন লোকেশ কনকরাজ এবং প্রজোযনা করেছে রাজ কমল ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন কমল হাসান, বিজয় সেতুপতি এবং ফাহাদ ফজিল। কালিদাস জয়রাম, নারায়ণ এবং চেম্বান বিনোদ জোস প্বার্শ চরিত্রে অভিনয় করেন; এছাড়াও সূর্য একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটির দৃশ্যপট কাইথি (২০১৯)-এর পর থেকে চলমান থাকে এবং অমরের নেতৃত্বে একটি ব্ল্যাক-অপস স্কোয়াডকে অনুসরণ করে গল্পটি এগোয়, যারা মুখোশধারী দলের সদস্যদের সন্ধান করে থাকে। তারা ভেট্টি ভাগাইয়ারা নামে একটি ড্রাগ সিন্ডিকেট গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে, যার নেতৃত্বে রয়েছে সন্ধানম, যে হারিয়ে যাওয়া ড্রাগসগুলি তার বস রোলেক্সের কাছে পৌছে দিতে চায়।
৮.দঙ্গল
পরিচালক: নীতেশ তিওয়ারি
অভিনয়ে: আমির খান, ফাতিমা সানা শেখ ও সন্যা মালহোত্রা
বক্স-অফিস সংগ্রহ: ৩৮৭ কোটি রুপি
দঙ্গল হিন্দি শব্দ। এর অর্থ কুস্তিখেলা। এই সিনেমাটি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয়কারী সিনেমার মধ্যে অন্যতম এবং চীনে সবচেয়ে বেশি আয়কারী ২০টি সিনেমার মধ্যে একটি। ভারতীয় পরিচালক নিতেশ তিওয়ারি পরিচালিত জীবনীবিষয়ক ক্রীড়াকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র এটি। আমির খান এই চলচ্চিত্রে মহাবীর সিং ফোগাট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যিনি তার দুই মেয়ে গীতা ফোগাট এবং ববিতা কুমারীকে কুস্তি শিক্ষা দেন।
৯.জেলার
পরিচালক: নেলসন দীলিপ কুমার
অভিনয়ে: রজনীকান্ত,মোহনলাল, জ্যাকি শ্রফ, তামান্না ভাটিয়া,রাম্য কৃষ্ণান, যোগী বাবু প্রমুখ
ভারতের দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত অভিনীত সিনেমা 'জেলার' মুক্তি পেয়েছে গত ১০ আগস্ট। মুক্তির পর থেকে বক্স অফিসে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে সিনেমাটি। মুক্তির প্রথম দিনে বক্স অফিসে ৪৮ কোটির বেশি রুপি আয় করেছিল ‘জেলার’, যা তামিলনাড়ু ও কেরালায় ২০২৩ সালের রেকর্ড। মুক্তির ১০ দিন শেষে বিশ্বব্যাপী সিনেমাটির আয় ৫০০ কোটি রুপি ছাড়িয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে এটি কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় যে কোনো তামিল সিনেমার জন্য সর্বোচ্চ ওপেনিংয়ের রেকর্ড গড়ে। শুধু তাই নয়, সিনেমাটির প্রথম দিনের মোট সংগ্রহ এ বছর মুক্তি পাওয়া যে কোনো তামিল চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ।
'জেলার' সিনেমাটির এখন পর্যন্ত শুধু ভারতে আয় ২৬৩ দশমিক ৯ কোটি রুপি। প্রথম সপ্তাহে ভারতে সব ভাষায় ২৩৫ কোটি রুপির বেশি আয় করেছিল সিনেমাটি। ২০০ কোটি রুপির বাজেটে 'জেলার' সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন নেলসন দীলিপ কুমার।
এ সিনেমায় রজনীকান্তের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তামান্না ভাটিয়া। সিনেমাটিতে আরও আছেন জ্যাকি শ্রফ, প্রিয়াঙ্কা মোহন, শিব রাজকুমার, রাম্য কৃষ্ণান, যোগী বাবু প্রমুখ। মালায়লাম তারকা মোহনলালকে সিনেমায় দেখা গেছে অতিথি চরিত্রে। তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ভাষায় ৪ হাজার স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে আলোচিত এ সিনেমাটি।
১০.এনথিরান
পরিচালক: শঙ্কর
অভিনয়ে: রজনীকান্ত, অক্ষয় কুমার ও অ্যামি জ্যাকসন
পরিচালক শঙ্করের উচ্চাভিলাষী সিনেমা ছিল ২.০, যা এনথিরানের সিকুয়েল। এখন পর্যন্ত এটি রজনীকান্তের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমা। এতে রজনীকান্তের সঙ্গে অক্ষয় কুমার ও অ্যামি জ্যাকসন অভিনয় করেছেন। ট্রেড রিপোর্ট অনুযায়ী, ২.০ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০০ কোটি রুপি আয় করেছে। সিনেমাটিতে মোবাইল ফোনের টাওয়ার বিকিরণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং তা কীভাবে পাখি, প্রাণী ও মানুষকে প্রভাবিত করে তা তুলে ধরা হয়েছে।
২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে রজনীকান্ত দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সঙ্গে ছিলেন ঐশ্বরিয়া বচ্চন। এনথিরান বিশ্বব্যাপী ২৯০ কোটি রুপি আয় করেছে। চলচ্চিত্রের ভিজুয়াল ইফেক্টগুলো এখনো দর্শকদের চোখে লেগে আছে। এনথিরান এমন এক বিজ্ঞানীর গল্প, যিনি একটি হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করেন।