বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র-The highest grossing film of Bangladesh
highest grossing movies of Dhallywood

ঢালিউডের সর্বোচ্চ আয় করা ১০ সিনেমা-Top 10 highest grossing movies of Dhallywood

হলিউড, বলিউডের মত বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পরিচিত ঢালিউড নামে। চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একটি দেশ, জাতি ও দেশের মানুষের জীবন কাহিনী অতি সুপষ্টভাবে ফুটে ওঠে চলচ্চিত্রে। জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র হাসতে শেখায়, কাঁদতে শেখায়। সেই সাথে দর্শকের রুচিবোধকে আরো উন্নত করে। 

ঢালিউড বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম চলচ্চিত্র উৎপাদন কেন্দ্র। ঢাকার নবাব পরিবার বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে। সর্বপ্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৫৬ সালে। ছবির নাম মুখ ও মুখোশ। এরপর একে একে অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বেশ কিছু সিনেমা সর্বাধিক ব্যবসাসফল হয়েছে। 

সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র

১.প্রিয়তমা-Priyotoma (২০২৩)

আয়: আনু. ৳২৬.৯৫ কোটি (৩১ জুলাই ২০২৩-এর হিসাবে)

প্রিয়তমা ২০২৩ সালের একটি বাংলাদেশী রোমান্টিক-এ্যাকশন চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ, যা তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এবং ভার্সেটাইল মিডিয়ার অধীনে প্রযোজনা করেছেন আরশাদ আদনান। চলচ্চিত্রটির কাহিনি এককভাবে লিখেছেন প্রয়াত ফারুক হোসেন এবং তার সঙ্গে চিত্রনাট্য ও সংলাপ যৌথভাবে লিখেছেন হিমেল আশরাফ। চলচ্চিত্রে মূখ্য ভূমিকা অভিনয় করেছেন শাকিব খান, ইধিকা পাল ও শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে আছেন এলিনা শাম্মী, ডন, লুৎফুর রহমান খান সীমান্ত ও লুৎফর রহমান জর্জ।

ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি অনেক দিন ধরে দেশ ও দেশের বাইরের প্রেক্ষাগৃহে চলছে। চলচ্চিত্রটির গান, গল্প ও নির্মাণ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে পুরো টিম। 

২.বেদের মেয়ে জোস্‌না-Beder Meye Josna (১৯৮৮)

আয়: ২০ কোটি (তৎকালীন),১৪২ কোটি (২০২২)

বেদের মেয়ে জোস্‌না হলো তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ১৯৮৯ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছায়াছবি। চলচ্চিত্রটির সফলতার ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং চিরঞ্জীত।

৩.স্বপ্নের ঠিকানা-Shopner Thikana (১৯৯৬)

আয়: ১৯ কোটি

স্বপ্নের ঠিকানা ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী বাংলা ভাষার রোমান্টিক চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন এম এ খালেক।

সুমন ‍(সালমান শাহ) ও সুমি (শাবনূর) দুজনে ছোটবেলায় একসাথে লেখাপড়া করে। সুমন বড়লোকের ছেলে। সুমি গরিবের মেয়ে। তাদের মধ্যে ভালোভাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে এক দূর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে সুমন। তখন তার বাবার বন্ধুর মেয়ে ফারহা (সোনিয়া) বিদেশ থেকে আসে। সুমনের সাথে বিয়ে ঠিক হয় ফারহার। কিন্তু স্মৃতিশক্তি না থাকায় বিয়ে হচ্ছে না বা সুমন সুমির কথা ভুলে গেছেন। এদিকে শুরু হয় সুমির সাথে তার দ্বন্দ্ব।

স্বপ্নে ঠিকানাকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের বেদের মেয়ে জোসনার পরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি। এই ছবির গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ‘‘এইদিন সেইদিন কোনোদিন’’ ‘‘ নীল সমুদ্র পার হয়ে’’ ‘‘ ওসাথীরে, যেওনা কখনো দূরে’’ এমনি নানা গান। এছাড়া কৌতুক অভিনেতা লিপে এ একটি প্যারেডি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ‘‘যদি সুন্দর একখান বৌ পাইতাম’’

বেদের মেয়ের জোসনার মতো স্বপ্নের ঠিকানার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো ধনী গরিবের দ্বন্দ্ব। বরাবরের মতোই এ ধরনের ছবি জনপ্রিয়তা পায়।

৪.হাওয়া-Hawa (২০২২)

আয়: ১৬ কোটি

হাওয়া হলো ২০২২ সালের একটি বাংলাদেশী বাংলা ভাষার রহস্য–নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র, যেটি পরিচালনা করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু প্রমুখ।

গভীর সমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি ফিশিং ট্রলারে আটকে পড়া আটজন মাঝি মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটির গল্প মূলত একালের রূপকথা নির্ভর।  চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগে এটির পোস্টার, ট্রেলার ও গানের মাধ্যমে দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ চলচ্চিত্রের হাশিম মাহমুদের লেখা ও সুর করা ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি দেশজুড়ে ছড়িয়ে যায়। 

৫.প্রিয়া আমার প্রিয়া-Priya Amar Priya (২০০৮)

আয়: ১৫ কোটি

প্রিয়া আমার প্রিয়া হচ্ছে ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী কৌতুক মারপিট প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন বদিউল আলম খোকন। চলচ্চিত্রটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও সাহারা। এছাড়াও মিশা সওদাগর, প্রবীর মিত্র, আফজাল শরীফ ও রেহানা জলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ১৫ কোটি টাকা আয় করে, যা সর্বোচ্চ আয়ের বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় ৫ম স্থান দখল করে নেয়।

৬.পাসওয়ার্ড-Password (২০১৯)

আয়: ১২ কোটি

পাসওয়ার্ড হচ্ছে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী মারপিট-অপরাধধর্মী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মালেক আফসারী এবং এসকে ফিল্মসের ব্যানারে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন শাকিব খান ও মোহাম্মদ ইকবাল। এটি শাকিব খান প্রযোজিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, এর আগে তিনি ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিরো: দ্যা সুপার স্টার চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি মূলত সুইস ব্যাংক একাউন্ট পাসওয়ার্ড সম্পর্কিত, একাউন্টটির প্রকৃত মালিক মূলত আলাউদ্দীন সরকার, যিনি মৃত্যুর পূর্বে বাংলাদেশের রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ডে টাকা জমা দেয়ার জন্য রুদ্রকে তার ব্যাংক একাউন্টের ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড দিয়ে যান। এতে শাকিব খান, শবনম বুবলি ও ইমন ছাড়াও নতুন মুখ তনামি হককে দেখা যায় মূখ্য ভূমিকায়। এছাড়াও এতে আরোও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, অমিত হাসান, ডন ও সাংকো পাঞ্জা সহ আরও অনেকে।

চলচ্চিত্রটি ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও জনপ্রিয় অভিনেতা পুরস্কার সহ সর্বাধিক পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।

৭.পরাণ-Poran (২০২২)

আয়: ১২ কোটি

কোভিড পরবর্তী সিনেমা জগতে নতুন করে সুবাতাস বইতে শুরু করে ২০২২ সালের ১০ জুলাই মুক্তিপ্রাপ্ত 'পরাণ' সিনেমা দিয়ে। বিদ্যা সিনহা মিম, শরিফুল রাজ, ইয়াশ রোহান অভিনীত সিনেমাটি সবার মনোযোগ কাড়ে এবং দীর্ঘদিন পরে দর্শকদের আবারও হলমুখী করে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। শুধু দেশে নয় বিদেশের মাটিতেও ভালো ব্যবসা করে সিনেমাটি।

'অনন্যা' পড়াশোনায় একেবারেই অমনোযোগী একটা মেয়ে। পরীক্ষায় নিয়মিত ফেল করা তার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার যেন। তাই বাবা বলে দেন, পরেরবার ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দেবেন। অনন্যাকে বিরক্ত করে এলাকার বখাটে 'রোমান'। ডেইজি সরকারের ছত্রছায়ায় রোমান হয়ে উঠেছে এলাকার ত্রাস, পুলিশও তার গায়ে হাত দেয় না। পাশ করে মুখ দেখাতে অনন্যা বাধ্য হয় পরীক্ষায় রোমানের সাহায্য নিয়ে পাশ করতে। পরীক্ষায় পাশ করে রোমানের সাথে প্রেমে মশগুল হওয়া অনন্যার জীবনে কয়েক বছরেই ঘটে কিছু অপ্রত্যাশিত, হৃদয় বিদারক ঘটনা। সিনেমার শুরুতে আত্মহত্যার চেষ্টা করা অনন্যা একসময় পুলিশকে বলতে থাকে রোমানের সাথে জটিল এক সম্পর্কের গল্প যেখানে আছে অন্য আরেকজন, 'সিফাত'-এর উপস্থিতি।

৮.আম্মাজান-Ammajan (১৯৯৯)

আয়: ১১ কোটি

আম্মাজান কাজী হায়াৎ পরিচালিত ১৯৯৯ সালের বাংলাদেশী অপরাধধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র। এটি প্রযোজনা করেছেন ও কাহিনী লিখেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন কাজী হায়াৎ। এতে নাম ভূমিকায় (আম্মাজান) অভিনয় করেছেন শবনম এবং তার পুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মান্না। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী, আমিন খান, ডিপজল, মিজু আহমেদ প্রমুখ।

এটি ওই বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। ২৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন এবং চলচ্চিত্রটি বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও মান্নার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে "আম্মাজান" গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

৯.নবাব-Nabab (২০১৭)

আয়: ১১ কোটি

নবাব হচ্ছে ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জয়দীপ মুখার্জী পরিচালিত ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার মারপিটধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। এছাড়া অন্যান্য প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী, রজতাভ দত্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী, অমিত হাসান, অপরাজিতা আঢ্য, ও খরাজ মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশে ১২৮টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়। এবং ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই ভারতে মুক্তি পায়।

সিবিআই অফিসার রাজিব চৌধুরী (শাকিব খান) জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বদ্ধ পরিকর। মুখ্যমন্ত্রী অনন্যা চ্যাটার্জি (অপরাজিতা আঢ্য) সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা করার পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বেশ কিছু নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রাইম রিপোর্টার সালমার (শুভশ্রী গাঙ্গুলী) উপর দায়িত্ব পড়ে রাজিব চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার। কিন্তু, কোনভাবেই তিনি ধরতে পারেন না তাঁকে। এক সময় দেখা হয়ে যায় তাঁদের। আগে থেকেই একে অপরকে চিনলেও পরে আবিষ্কৃত হয় সালমার সঙ্গে একই কলেজে পড়াশোনা করা নবাবই আসলে সিবিআই অফিসার রাজিব চৌধুরী। তাঁরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেন সেই কলেজ থেকেই। বিভিন্ন কারণে মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন।

সালমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের শুরু হতে না হতেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় রাজীব চৌধুরীকে। পুলিশের বড় অফিসার গৌতম হালদারের (রজতাভ দত্ত) মেয়ে মেঘলার খুন ও ধর্ষণের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। জেলে নেওয়ার পথে পুলিশের গাড়ি থেকে রাজিব চৌধুরী পালিয়ে যান ষড়যন্ত্রের আসল হদিস বের করতে। তাঁর অসুস্থ মাকে কিডন্যাপ করে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাঁকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনন্যা চ্যাটার্জিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। ক্রাইম রিপোর্টার সালমা সহায়তা করেন রাজিব চৌধুরীকে। অবশেষে, ষড়যন্ত্রের পর্দা সরে সব পরিষ্কার হয়ে যায়।

১০.সত্যের মৃত্যু নেই-Sotter Mrittu Nei (১৯৯৬)

আয়: ১১ কোটি

সত্যের মৃত্যু নেই হল ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশী নাট্য চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন ছটকু আহমেদ এবং যৌথভাবে রচনা করেছেন ছটকু আহমেদ ও পানাউল্লাহ আহমেদ। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন আলমগীর, শাবানা, সালমান শাহ, শাহনাজ, রাইসুল ইসলাম আসাদ ও রাজীব।