দিন দুপুরে হামলা চালিয়ে বসত ঘর ভাংচুর ও লুট

জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে দিন দুপুরে বসত ঘরে হামলা চালিয়ে লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূসহ আহত হয়েছে দুই জন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন রাওঘা গ্রামে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার দক্ষিন রাওঘা গ্রামের মৃত্যু গিয়াস উদ্দিন মৃধা বাড়ীর বড় পুত্র আঃ রশিদ মৃধার ওয়ারিশ পুত্র মামুন মৃধার সাথে চাচাদের দীর্ঘদিন জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আঃ রশিদ মৃধার মৃত্যুর পরে তার অপর ভাইয়েরা মিলে মৃত্যু ভাইয়ের ওয়ারিশদের তাদের প্রাপ্ত জমিজমা থেকে বঞ্চিত করার জন্য গত ২০১৪ সালে মামুন মৃধার চাচা নজরুল ইসলাম মৃধা (শিক্ষক), আমিন মৃধা (গ্রাম পুলিশ), শানু মৃধা, রুহুল আমিন মৃধা, মতিউর রহমান মৃধা ও বদিউজ্জামান মৃধা জমিজমা থেকে বঞ্চিত করার বড় ভাই মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার নাম বাদ দিয়ে ভূয়া জাল ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরী করেন। এ জাল ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে জমি রেকর্ড করে। যা দীর্ঘদিন গোপন ছিল। এ ভূয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে জমি রেকর্ড করার ঘটনা জানাজানি হলে মৃত্যু রশিদ মৃধার পুত্র মোঃ মামুন মৃধা গত ২৩ মার্চ বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের নিকট বিষয়টি জানিয়ে একটি আবেদন করেন। তখন পুলিশ সুপার বিষয়টি বরগুনা গোয়েন্দা বিভাগকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। তৎকালীন গোয়েন্দা বিভাগে ওসি বর্তমান আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রী উভয় পক্ষকে নোটিশ করে ডেকে এনে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম মৃধাকে দায়িত্ব দিয়ে শালিশ মানিয়ে দেয়। তখন ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে পুনঃরায় ডেকে তাদের মানিত শালিশগনের উপস্থিতিতে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল আপোষ মিমাংসা করে লিখিত আপোষনামায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে। আপোষনামা রোয়েদাদ অনুযায়ী উভয়পক্ষকে ঘরবাড়ী ও জমিজমা বুঝিয়ে দেয়া হয়। রোয়েদাদ অনুযায়ী মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার ওয়ারিশ স্ত্রী মালেকা বেগম, তিন পুত্র মামুন মৃধা, মহিবুল মৃধা ও শামিম মৃধা তার দাদা মৃত্যু গিয়াস উদ্দিন মৃধার বসত ঘরে বসবাস করবে। যা অন্য সকল ওয়ারিশগন মেনে নিয়ে রশিদ মৃধার ওয়ারিশদের চৌহদ্দি দিয়ে পিলার পুতে দেয়। সে মোতাবেক রশিদ মৃধার স্ত্রী মালেকা বেগম, পুত্র মহিবুল মৃধা ও তার স্ত্রী মারিয়া বেগম ও অপর পুত্র শামিম মৃধা সেই ঘরে বসবাস করে আসছে। ঘটনার দিন গত ১২ জুন বুধবার দুপুরে চাচা কুকুয়া রহমতপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম  ও তার ভাই আমিন মৃধা (চৌকিদার) নেতৃত্বে তার অপর ভাইয়েরা বাহির থেকে আরও ২০/৩০ জন অজ্ঞাত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতভাবে রশিদ মৃধার ওয়ারিশদের ঘরে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাংচুর করে লুটপাট চালায়। এ সময় ঘরের আসবাবপত্র কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। ঘরে থাকা ৩ ভড়ি স্বর্ণ,নগদ ৭৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। গৃহস্থলি সামগ্রী কাপড় চোপর, বিছানাপত্র কাচের থালাবাটি চাউলের ড্রাম, ঘরের টিন খুলে পিছনের পুকুরে ফেলে দেয়। এতে বাঁধা দিলে রশিদ মৃধার স্ত্রী মোসাঃ মালেকা বেগম ও তার পুত্রবধূ ২ মাসের অন্তঃসত্তা মারিয়া বেগমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। গুরুত্বর আহত হয়ে অন্তঃস্বত্তা পুত্রবধূকে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাদের বাড়ীর মূল ফটকে দাঁড়িনো ছিল কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়ার ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধা পুত্র মোঃ মহিবুল মৃধা বাদী হয়ে চাচা মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধাকে প্রধান আসামী করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বসত ঘরে হামলা করে ভাংচুর ও লুটের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। 

সরেজমিনে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখাগেছে, বসত ঘরের টিন খুলে ফেলা হয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ঘরের ব্যবহারিক সামগ্রী বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। চাউলের ড্রাম ও গৃহস্থলি সামগ্রী বিছানাপত্র পুকুরে ভাসছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মৃধা বাড়ীর শতবর্ষী মোঃ নেছার উদ্দিন মৃধা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ২০/৩০ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা লাঠি নিয়ে নজরুল মৃধা ও আমিন চৌকিদারের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার আপন ছোট ভাইয়ের ছেলে মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার বসতঘরটি ভেঙ্গে ফেলে। তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষের আপোষ মিমাংসা অনুযায়ী রশিদ মৃধার ওয়ারিশরা এই ঘরেই বসবাস করার সিন্ধান্ত হয়। যে সিন্ধান্ত অন্য ওয়ারিশরা মেনে নিয়ে আপোষ নামায় স্বাক্ষরও করেছে। এখন কেন তাদের এই ঘর থেকে উচ্ছেদ করতে হবে তা আমি বুঝতেছিনা। এসময় পুলিশ আমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারা কিছুই বলেনি।

রাজমিস্ত্রী আবু সালেহ মৃধা বলেন, আমি এ বাড়ীতে আজ ৩ দিন ধরে রাজমিস্ত্রী’র কাজ করছি। ঘটনার সময় আমিন চৌকিদার, নজরুল মাষ্টার রুহুল মৃধা, শানু মৃধা, জাকারিয়ার নেতৃত্বে ২০/৩০ জন পোলাপান বাঁশের লাঠি দা-বটি নিয়ে রশিদ মৃধার বসত ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র কুপিয়ে ও ঘরের টিন খুলে ঘরের পিছনে পুকুরে ফেলে দেয়। এ সময় গলা ধাক্কা দিয়ে রশিদ মৃধার স্ত্রী ও পুত্র বধূকে ঘর থেকে বের করে দেয়।

আক্তার মৃধার স্ত্রী মোসাঃ হামিদা বেগম বলেন, মতিয়ার রহমানের স্ত্রী কাজল বেগম, নজরুল মাষ্টারের স্ত্রী রুমা বেগম, আমিন চৌকিদারের স্ত্রী হালিমা, বদিউজ্জামান মৃধার স্ত্রী মনিরা বেগম শানু মৃধার স্ত্রী মিনারা ও মেয়ে মাসুদা বেগম দুপুরের দিকে মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার বসত ঘরে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ঘরে থাকা গৃহস্থলির মালামাল ভেঙ্গে পুকুরে ফেলে দেয়। এ সময় ২০/৩০ জন পোলাপান লাঠি হাতে ঘরের টিন খুলে পুকুরে ফেলে দেয়। এতে বাঁধা দিলে রশিদ মৃধার স্ত্রী মালেকা বেগম ও তার অন্তঃস্বত্তা পুত্রবধূ মারিয়া বেগমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

মোঃ বশির উদ্দিন মৃধা বলেন, বহিরাগত ২০/৩০ জন সন্ত্রাসী ভাড়া এনে নজরুল মাস্টার, আমিন চৌকিদার, রুহুল মৃধা, শানু মৃধা ও জাকারিয়া মৃধার নেতৃত্বে ঘন্টা ব্যাপী তান্ডব চালিয়ে রশিদ মৃধার বসত ঘরে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে লুটপাট করে। এ সময় আমতলী থানা পুলিশ বাড়ীর দড়জায় অবস্থান করলেও তারা কোন ভূমিকা নেয়নি ও কাউকে গ্রেফতার করেনি। 

মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার পুত্র মোঃ মামুন মৃধা বলেন, আমাদের সাথে আমার চাচারা আপোষ মিমাংসা করে রোয়েদাদ করেছে। সে মোতাবেক আমাদের আমার দাদার বসতঘর থাকতে দিয়ে সিমানা পিলার দিয়ে দেয়। সেখানে আমার মা ও ছোট ২ ভাই ও এক ভাইয়ের বউ থাকে। হঠাৎ বুধবার দুপুরে বহিরাগত ২০/৩০ জন সন্ত্রাসী আমাদের বসত ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এতে বাঁধা দিলে আমার মা মালেকা বেগম ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ৭ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা মারিয়া বেগম আহত হয়। অন্তঃস্বত্তা মারিয়া বেগমকে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র উপ-কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিখিল চন্দ্র জানান, মারিয়া বেগম ৭ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখমের চিহ্ন রয়েছে।

মৃত্যু আঃ রশিদ মৃধার মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলেরা ও তাদের বউ ঘরে ঢুকে টিনের বেড়া খুলে ফেলছে। মালামাল ফেলে দিছে। আমি মালামাল গুছিয়ে এক জায়গায় রেখে দিছি।

হলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন, দু’পক্ষের এ বিবাদ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। যথাযথ সিদ্ধান্তও দেয়া হয়েছে। তারপরেও এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে থানায় বথা বলবেন বলেও জানান।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কুকুয়া রহমতপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধা মুঠো ফোনে (০১৭২৬৪৫৩৫১৮) বলেন, আমি ঘটনার সাথে আদৌ জড়িত না। এ সময় আমি বাড়ীতে ছিলাম না।

সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা আমতলী থানার এসআই মোসাঃ নাছরিন সুলতানা বলেন, ভাইদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতে ঘর ভাঙ্গা বা লুটের কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনা শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি। 

আমতলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাশার বলেন, আমি ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলাম। এ ব্যাপারে থানায় কেহ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বাবুগঞ্জে স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ পালিত
মেঘনার ভাঙ্গনে বিদ্যালয় শুন্য হয়ে পরেছে দ্বীপ ঢালচরের ৭শ’ শিশু শিক্ষার্থী
চরফ্যাসনে ১০পিস ইয়াবাসহ পুলিশের জালে যুবক
চরফ্যাসনে প্রথম এক যুবকের করোনা সনাক্ত
সরকার দেশের উন্নয়ন ও জনগনের নিরাপত্তায় কাজ করছে-এমপি জ্যাকব
চরফ্যাসনে লোকালয় থেকে মেছোবাঘ উদ্ধার,বনে অবমুক্ত
ভোলার মনপুরায় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ত্রান বিতরণ
চরফ্যাসনস্থ মনপুরার গ্রীড বিদ্যুতের দাবীতে মানববন্ধন
ভোলার বোরহানউদ্দিন কুতুবা ইউপি'র অস্থায়ী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ নথি পত্র