দীর্ঘদিন ধরে সারি সারি নৌকা বেঁধে ঈদের নামাজ আদায় করতেন তিন গ্রামের মুসল্লি। তাদের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা লাঘবে অভিনব ভাসমান দ্বিতল পাকা ঈদগাহ মাঠ তৈরি হয়েছে। এমন নতুন ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায়ের আশায় চলনবিলের উল্লাপাড়া উপজেলার প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি। এ যেন স্বপ্নের ঈদগাহ মাঠে তাদের নামাজ আদায়।
বর্ষাকালে চলনবিল এলাকায় দু’চোখ যতদূর যায়, শুধু পানি আর পানি। পানির উপর ভাসছে গ্রামগুলো। প্রবল বর্ষার পানির ঢেউ সজোরে আছড়ে ভেঙে ফেলতে চাইছে মানুষের ঘরবাড়িসহ সবকিছু। বর্ষায় চারদিকে তলিয়ে যাওয়ায় এখানকার মৃত মানুষকে পর্যন্ত দাফন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমন এক জনপদের মানুষকে এতদিন পবিত্র ঈদের নামাজ পড়তে হতো কবরস্থানের পাশে সারি সারি নৌকা বেঁধে।
দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসছিল চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট গ্রামের মানুষের। গ্রামগুলোর মানুষের এ সমস্যা সমাধানে নির্মিত হয়েছে অভিনব ভাসমান দ্বিতল পাকা ঈদগাহ মাঠ। জনহিতকর এই কাজের পরিকল্পনাকারী ও উদ্যোক্তা নরসিংহপাড়ার গ্রামের সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম।
গত দু’বছর আগে ওই তিন গ্রামের কয়েকশ’ লোকের সমাগমে মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি মুখ করে অভিনব এ ঈদগাহ মাঠের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধন করেন তিন গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ছয়জন মুরুব্বি।
এ ছাড়া মাঠটির অন্যতম নির্মাণ পরিকল্পনাকারী ও দাতা মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম। এই ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট তিন গ্রামের মাঝখানে ঈদগাহের মাঠের জন্য দান করা নিজস্ব জায়গায়। চলনবিলের ঘোরপল্লী এই তিন গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পানির ওপর দণ্ডায়মান সাইক্লোন শেল্টারের আদলে তৈরি করা হয়েছে এই ঈদগাহ মাঠ।
ঈদগাহ মাঠটি নির্মাণের টাকার একটা অংশ ব্যারিস্টার রওশন জাহান ফাউন্ডেশনের পক্ষে মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবার দিয়েছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে এক বিঘা জায়গার ওপর ঈদগাহ মাঠটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এটি নির্মাণের জন্য তিন গ্রামের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতাও রয়েছে নিবিড়ভাবে।
চলনবিল অঞ্চলের এই গ্রামে পানির মধ্যে পিলার দিয়ে ঈদের মাঠ নির্মাণ কাজটি যেমন অভিনব নির্মাণশৈলী তেমনি নতুন। পানির উপর অভিনব এ ঈদগাঁহ নির্মাণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিপুল সাড়া পড়ে গেছে। প্রতিদিন লোকজনের সমাগম হচ্ছে এ ঈদগাহ মাঠ দেখার জন্য।
ঈদগাহ মাঠ তৈরির পরিকল্পনাকারী মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় ঈদগাহ মাঠটি নির্মিত হয়েছে। এবার ঈদুল আজহায় মাঠে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, অর্থাভাবে মাঠটির রংসহ সৌন্দর্য্যবর্ধন কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি। এ জন্য আরো প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। ঈদগাহ মাঠটির বাকি কাজ সমাপ্তের জন্য সরকারি, বেসরকারি ও দানশীল ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ সাহায়তা কামনা করেন মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম।