চরফ্যাসনে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি নিকট অতীতের যে কোন সময়ের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। বিদ্যুতের এই অসহ্যভোগান্তিতে জনবিস্ফোরণের আশংকা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গ্রাহকরা কথ্য-অকথ্য ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ঈদকে ঘিরে এই ক্ষোভ বিক্ষোভে রুপ নিতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও বিদ্যুতের অব্যহত এই বিপর্যয়ের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ নিরব নির্বিকার আছেন বলে গ্রহকরা অভিযোগ করছেন।
ঝড়-বৃষ্টিতেই বিদ্যুৎ না থাকা এখানে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত ইদানিং আকাশে মেঘ উঠতেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাংস্কৃতি চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে সংশ্লিস্ট বিদ্যুৎবিভাগের দায়িত্বশীলদের মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যায়।ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে ধোঁয়া আর ভোগান্তির মধ্যে আছেন উপজেলার ৯০ হাজার গ্রাহক। সামনে কোরবানীর ঈদ আর চলছে ইলিশ মৌসুম। ইলিশ মৌসুমে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এই ধারাবাহিকতার ফলে স্বাভাবিক উৎপাদন নেই ২৭টি বরফ মিলে। ফলে উপকূলের মাছঘাটগুলোতে পঁচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার ইলিশ মাছ।হাট-বাজার কেন্দ্রীক ছোট কারখানাগুলোর উৎপাদনের চাঁকাও থমকে যাওয়ায় শ্রমিকের হাতগুলো বেকার হয়ে আছে। ফলে স্বপ্ল আয়ের মানুষগুলো পড়ছে বেকায়দায়।
চরফ্যাসন পল্লী বিদ্যুৎ এবং ওয়েস্টার্ন জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানাযায়, চরফ্যাসনে ৩টি সাব-ষ্টেশনের আওয়াতায় পৌর এলাকায় ৯ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ওয়েস্টার্ন জোন এবং পল্লী গ্রামের ৮০হাজার গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিচ্ছেন পল্লীবিদুৎ কর্তৃপক্ষ। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২৮ মেঘাওয়াট। কিন্তু সাব-ষ্টেশনের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ হয় ২১ মেগাওয়ার্ড। প্রতি ৩ ঘন্টা পরপর ২ ঘন্টা হিসেবে প্রাপ্ত এই সীমিত বিদ্যুৎ দিয়ে প্রায় ৯০ হাজারের অধিক গ্রাহকের ক্ষোভ প্রশোমনের চেষ্টা চলছে। ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, গত ১৫ দিন ধরে চরফ্যাসনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে নড়েবড়ে অবস্থার মধ্যে আছে। আকাশে মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। দৈনিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২/৩ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ নেই। এই ২/৩ ঘন্টার বিদ্যুৎ স্থির হচ্ছেনা। একবার বিদ্যুৎ এসে ২০ মিনিট থাকলেও এ সময়ের মধ্যে অন্তত ২/৩ বার আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। সারাদিন বিদ্যুতের দেখা থাকেনা। দিনে ২/৩ ঘন্টার বিদ্যুৎ পোলেও তা মেলে গভীর রাতে । যা গ্রাহকদের তেমন উপকারেও আসছে না। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের একটানা বেহাল দশায় গ্রাহকরা ক্ষুদ্ধ ত্যক্ত বিরক্ত। কিন্ত বিপর্যয়ের এই সময়েও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে স্পষ্ট কোন বক্তব্য মিলছে না। বিপর্যয় চলমান থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কোন ফোন রিসিভ করছেন না। অফিসেও সময় দিচ্ছেন না। এদিকে বিদ্যুতের চলমান লুকোচুরির খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ জানানোর প্রস্ততি নিতে শুরু করেছে। চরফ্যাসন সদর , শশীভূষণ, দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট এবং আনজুরহাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গ্রাহকরা জোটবদ্ধ হয়ে সভা-সমাবেশ করেছে বলে জানাগেছে। গ্রাহকদের এই প্রতিবাদ সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে আভাস পাওয়া গেছে।
গ্রাহক প্রভাষক শরিফুল আলম সোয়েব অভিযোগ করেন - কয়েক দিন আগে যেদিন দেশে রেকর্ড পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, সেদিনও চরফ্যাসনে বিদ্যুৎ ছিলনা। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যই বিদ্যুৎ বিতরণে সমস্যা বলে দাবি করছেন তিনি। যা গ্রাহকদের বিক্ষুদ্ধ ও সহিংস করে তুলতে পারে।
বরফ কল শ্রমিক আব্দুল্লাহ জানান, বরফ কলগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপর্যয় চলছে। বরফ উৎপাদনে বিপর্যয় থাকায় মাছঘাটগুলোতে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
পল্লি বিদ্যুতের এজিএম মো. মহিন উদ্দিন জানান, চরফ্যাসনে পল্লি বিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ বিতরণ করতে ২৪ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুতের প্রয়োজন কিন্তু দুটি সাব- ষ্টেশনে বিদ্যুৎ বিতরণ হয় ১৮ মেগাওয়ার্ড। যা থেকে বিপুল পরিমানে বিদ্যুৎ গ্রাহকের চাহিদা পুরন হচ্ছেনা। একারণেই মাঝে মধ্যে লোডশেডিং দেখা দেয়। দুলারহাট ও দক্ষিণ আইচা আরো দুটি নতুন সাব-ষ্টেশন নির্মাণ কাজ চলমান আছে।এই দুটি সাব- ষ্টেশন চালু হলে চরফ্যাসনে নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে এই কর্মকর্তা দবী করেন। যদিও কবে নাগাদ এই দু’টি সাব-স্টেশন চালু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। ফলে এটাই স্পষ্ট যে, চরফ্যাসনের ৯০ হাজার গ্রাহকের ভোগান্তি শীঘ্রই শেষ হচ্ছে না।